যখন উর্দি পড়া হায়নার লোলুপতায় বোনের আকাশচুম্বী স্বপ্নরা খসে পড়লো
বিধ্বস্ত নক্ষত্রের মতো,
বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া
বাবার বুকের পাঁজরের আগ্নেয়গিরির শোণিতের লাভায় মায়ের সিঁথির সিঁদুর পুড়ে খাক হয়ে গেলো জীবনের তরে,
পাড়ার টগবগে তরুণদের ব্রাশফায়ারে যন্ত্রণাকাতর তৃষ্ণার্ত ক্ষণে গণকবরে ছুঁড়লো বেয়নেটের নৃশংস খোঁচায়,  
যখন দাউদাউ করে জ্বলছিলো গ্রাম গ্রামান্তর
--- তখন কারফিউ গুলি উপেক্ষা করা  
মিছিলে মিছিলে রাজপথ কাঁপানো স্বাধীনতার স্বপ্ন বিভোর যুবকেরা
অলিন্দে অলিন্দ মিলিয়ে  
নজরুলের অগ্নিবীণার সুরে শিহরিত করলো
হজার বছরের অচলায়তের বাসিন্দাকে।
দ্রোহের অগ্নিঝরা গানের দুর্বার মূর্ছনায়
কিষাণ, ছাত্র, শ্রমিক, নেকাব পড়া তরুণী,
বারবনিতা, বস্তিতে থাকা রনবী'র টোকাই
সাদা কফিনে আচ্ছাদিত হয়ে বজ্রের মতো
আগ্রাসীকে আঘাত হেনে বেদনাক্লিষ্ট
জরায়ু ছিঁড়ে ভূমিষ্ঠ করালো স্বাধীনতাকে।

ওরা বলে ছিল,
সামরিক জান্তার স্পর্ধা টুটে যাবে,
বাইশ পরিবার প্রেতাত্মা হয়ে ফিরবেনা কোনদিন রক্ত বিধৌত বাংলাদেশে,
আর দাবীর মিছিলে তপ্ত হবেনা রাজপথ,
শ্রমিকেরা পোহাবে শোষণহীন তৃপ্ত প্রহর,
তরুণীর উচ্ছলতায় বিদ্ধ হবেনা বিষ কণ্টক,  
শ্রমহীন শিশু মুখরিত করবে পাঠশালা,  
বাবার স্বপ্নের কল্পতরু মঞ্জরিত হবে,
মায়ের অশ্রুরা মুছে যাবে আনন্দ বর্ষায়।

আজ বিষন্ন কালবেলা,
শহীদের মিনারমূল, রাজনৈতিক মঞ্চ এখন
গাল কাটা গুন্ডা, মজুদদার, টেন্ডারবাজ,
ড্রাগ কারবারি, ব্যাংক ও শেয়ার চোর,
দলছুট, ধর্ষকের নির্বিঘ্ন চারণভূমি।  
গণতন্ত্রের মানবঢাল নূরহোসেন যায়
নিরুদ্দেশের দেশে,
বাইশ হাজার লুটেরা ভূমিষ্ট  হলো
ভ্রষ্টা নটিনীর বিষময় জঠর হতে,
নিথর দেহ নুইয়ে পড়ে পিচঢালা পথে
অনিয়ম নিয়ম হওয়ার বজ্রকঠোর প্রতিবাদে,
তরুণীর হিরণময় অনাবিল সৌকর্য সম্ভার ক্ষতবিক্ষত করে শকুনেরা আদিম উল্লাসে,
নিরেট পাথরে হাতুড়ি পিটিয়ে, ডাস্টবিন ঘেটে
শিশু খুঁজে তার চুরি হয়ে যাওয়া স্বপ্ন,  
বাবার কল্পতরু কল্পলোকের বাসিন্দা,
মা'র অবারিত অশ্রধারা শুকায়না কোনদিন।
--- এমনতো কথা ছিলোনা।