নব্যপ্রস্তরযুগে প্রায় ১১০০০ বছর আগে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় ধর্মের উদ্ভব ঘটে। তবে অনুমান করা হয়, একই সময়ে অন্যান্য অঞ্চলেও ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল। কৃষিজ ব্যবস্থার আবিষ্কারের ফলে মানব সমাজ যাযাবরের শিকারী জীবন পরিত্যাগ করে চাষাবাদ, বসতি স্থাপন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাজনক স্থানে জনবসতি গড়ে তুলে স্থিত হতে থাকে।
যুগে যুগে মানবতার চরম সংকটে মানবতাবাদী মহামানবেরা জন্মগ্রহণ করেন। যুগের অশান্ত পরিস্থিতি, অন্যায়, অবিচার, অমানবিক আচরণ নিরসনকল্পে এসব বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মহাপুরুষেরা ধর্ম প্রবর্তন করেন। তাই কোন ধর্মে কখনো কোন ত্রুটি থাকেনা। ত্রুটি থাকে সেই ধর্ম পালনকারীর নামে সম্প্রদায়ভুক্ত কিছু অতি ধার্মিক সাজা স্বার্থান্বেষী মানুষের মধ্যে। তার জন্য শুধুমাত্র সেই ভণ্ড ধার্মিকরা দায়ী হতে পারে, সমগ্র সম্প্রদায় এবং ধর্মগুলো দায়ী নয় !
যুগে যুগে এইরূপ মানুষ ধর্মকে ব্যবহার করে নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্য ধর্মের সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার, সম্পদ, প্রাণ, মানসম্মান প্রভৃতি হরণ করে তাদের নিজেদের সম্পদ, যশ, খ্যাতি, প্রভাব প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, প্রভাব বৃদ্ধি করে, সাধারণ মানুষের অর্থে নিজের প্রচারণার মাধ্যমে ইতিহাসে কালজয়ী হতে চায়। তারা সজ্ঞানে নিজেদের স্বার্থে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে, মিথ্যাচার করে, অর্থের বিত্তের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিশেষত তরুণদের ব্যবহার করে নিজের এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করে, আগ্রাসন, দমন, দখল, নিপীড়ন, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, বিতারণ, ঐক্যের বিভাজন করে। এসব ব্যক্তিরা ধর্মের নামে চালায় অধর্ম। পবিত্র শান্তির ধর্মকে তারা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য করে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ।
অপরপক্ষে, প্রায়সব মানুষ ধর্মের মধ্যে খুঁজে মৈত্রী, সাম্য, শান্তি। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে পৃথিবীর মানুষসহ তাবৎ সৃষ্টি একই ঈশ্বরের। তাই মানুষের প্রতি ও সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে ঈশ্বরের সেবা করা হবে। তারা মনে করে এই দয়াময়তার ধর্মই পারলৌকিক শান্তির একমাত্র পথ। পার্থিব অন্যসব বিষয় তাদের কাছে গৌণ। তারা সদা অল্পে তুষ্ট, পরিতৃপ্ত, শান্ত, উদার, নিরহংকারী, বন্ধুভাবাপন্ন, স্বশিক্ষিত, জ্ঞানী এবং প্রচারবিমুখ। অন্যের অধিকার, সম্পদ, সম্মান, প্রাণ হরণ তাদের কাছে গর্হিত অপরাধ, অধর্ম।