আমি অকস্মাৎ আসমান ছিঁড়ে দেবপুত্র সাজে
ইনকিউবেটরের নিয়ন্ত্রিত তাপে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি,
কুলকাঠের প্রলম্বিত তাপে আমাকে সুরক্ষিত করেছিল জননী পরম ভালোবাসায়,
স্নেহময় নির্ঘুম নিমগ্নতায় কাটালো বেদনাক্লিষ্ট প্রহর তার, শুধু আমার জন্যে
---- চাতুর্যহীন ভালোবাসা আমার জন্মজাত অনুষঙ্গ,
ছেঁড়া পালে জীবনের উত্তাল বৈতরণী পাড়ি দিতে শিখেছি আমি জন্মাবধি,
কবেকার উড়াল স্বপ্নগুলো লালন করতে করতে
পাথর মানবের মতো নির্বাক হয়ে ছুটছি কাকভোর হতে পৃথিবীর পথে পথে,
ক্ষুধাকে করেছি জয় নিমগ্ন তপস্বীর মতো
দুদণ্ড শান্তির জন্য মায়ামৃগ সুখের তন্নতন্ন খোঁজে।
ঘোর অমানিশার বিদিশার অন্ধকারে আমি শঙ্কিত নই,
ঘর্মাক্ত শরীরের দৃঢ় পেশির প্রাবল্যে আমি মাটি থেকে
তুলে আনতে পারি ফসলের প্লাবন,
ইটের পাঁজরে গড়তে পারি দিগন্তস্পর্ষী সুউচ্চ সৌকর্যময় নগরী,
দুর্বিনীত প্রহরের প্রচণ্ড বন্যা ঝড় ঘূর্ণিপাক আমি পদানত করি,
শঙ্কার মহামারী ব্যাধির করোটি চুরমার করে
শিল্পের চাকার নিরন্তর ঘূর্ণনে আমি এনে দিতে পারি
তোমাদের আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের রাজমুকুট।
অনুকম্পা অবিচার অন্যায় দহে আমায় রাবনের চিতার মতো আমৃত্যু,
আমার উড্ডীন আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নের পালকগুলো তবুও
ক্রমাগত ঝরে যায় শক্তিমান বৈরী ঝড়ে,
রূপকথার রাক্ষসের মতো গ্রাস করে আমার নন্দিত সব অর্জন,
আমার ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ মূক পাষাণ সমাজে জমে জমে
প্রত্নতাত্ত্বিক ফসিল হয়ে উঠেছে পৃথিবীর বিস্তারে,
দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শোষণের সাম্রাজ্যের পৃথিবীতে
কেউ কাছে নেই --- আসতেও চায় না কেউ অলীক অজুহাতে,
কর্মের বিন্দু বিন্দু ঘর্মাশ্রু আমার নিশিত শিশিরের মতোন
ঝরে যায় অগোচরে অনাদরে অবহেলায়,
কারো হৃদয়ের অলিন্দে বাজেনা করুণার অনিন্দ্য ঝংকার ,
বর্ণিল হৃদয়হীন পাথর মানুষ ভ্রুক্ষেপহীন কৃতঘ্ন আত্মকেন্দ্রীক,
তোমরা উড়াও নিশান কুহক সাম্যের প্রগতির ভালোবাসার,
আমার দুর্বিপাকে কোনদিন চলেনি জ্বলন্ত মোমের মিছিল,
প্রকম্পিত হয়না রাজপথ বৈষম্যের নিগড় ছেঁড়ার দাবির স্লোগানে স্লোগানে।
দুর্বিনীত বিপদে রক্ষা করো, দুঃখের প্রহরে
ব্যথিত চিত্তে সান্তনার পরশ ঢালো
----- এই কাপুরুষোচিত নতজানু প্রত্যাশা স্পর্শ করেনা আমায়,
অন্ধরাতের অশ্বারোহীর মতো আমি গৌরব দীপ্ত
তীব্রতায় সমর্পিত হতে চাই আমৃত্যুকাল,
আমি ভূমিপুত্র, আাসিব বারংবার পৃথিবীতে সাজাতে সৌকর্য সম্ভার, চির ঋণী করে তোমাদের।