আমি ভূমিপুত্র!
কল্পলোকের বাসিন্দা স্বর্গের সুষমায় ঋদ্ধ হয়ে ভূমিষ্ঠ হইনি আমি রূঢ বাস্তবতার মৃন্ময়ী পৃথিবীতে,
ছন্দময় ব্যাকরণের নাড়িনক্ষত্র হিসাব কষতে কষতে
অনিয়মের নিয়মগুলো আড়ালে আবডালে লুকিয়ে রাখিনা আমার অপাংক্তেয় কবিতায়,
নির্ঝরের মতো অকৃপণ কলকল রবে সোজাসাপটা
গেয়ে চলি বিরুদ্ধ পাথরের আঘাতের মর্মর ধ্বনি,
যাকিছু সত্য শাশ্বত নিভুনিভু জ্বলে বৈপরীত্যে,
অন্যায় অবিচার ছুঁয়ে যায় অলিন্দ হেমলকের মতো পিঙ্গল বিষে
---- ছন্দহীন ভাষায় এই দহন-তাপ আমার ছড়িয়ে দেবো পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাসে।
আমি নিয়ন আলোর ঔজ্জ্বল্যে রাজপোষাকে সজ্জিত নট নই!
নগরবধূর চাকচিক্যের আস্তরণে প্রলুব্ধ করবোনা কারো সাবলীল সত্তাকে,
নেবোনা তোমায় গল্পকথার সুরম্য কাহিনীর দেশে আজগুবি চিন্তার মসৃণ সংলাপে,
মহাদ্রোহীর নতজানু সেবাদাস হয়ে নির্জলা
সত্য-বয়ান শোনাবো তোমায় আমার কবিতায়।
ভেদবুদ্ধির নিন্দিত জিঘংসায় ঝরছে অঢেল প্রাণ,
জ্বলেছে বসতি একই নদীর স্তনে বেড়ে ওঠা স্বজনের,
ভেঙেছে বিশ্বাসের প্রতিমা, ভেঙেছে মসজিদ মন্দির প্যাগোডা,
উঠেছে অতনু প্রাচীর মানুষে মানুষে, স্বজনে স্বজনে
--- নৈকট্যের মানবতা বিদীর্ণ হয়েছে ধর্মের নামাবলি পরা সুকন্ঠী বণিকের কূটচালে।
সময়ের মেঘকন্যা উড়ে যায় বারংবার নিরুদ্দেশের দেশে,
ফিরিয়ে দেয়না সময় চৈতন্যময় মন ইতিহাসের হৃদয় হতে।
সমুদ্র ও পাহাড়ের ওপারে চলছে আলোর মিছিল,
হাজারো বছর পিছায় তবু প্রগতির রথচক্র প্রিয় বাসভূমে
--- এই অবরুদ্ধ অচলায়তে আমি কবি হয়ে উঠতে পারিনা ছন্দবদ্ধ পঙক্তির অলংকরণে,
অপাঠ্য অশ্রাব্য রূঢ় উচ্চারণে জাগতে চাই বীর কুম্ভকর্ণকে
--- তোলবো মহাপ্রলয় মহাঘূর্ণী অসুন্দরের কৃষ্ণকায় প্রতাপে,
জাগুক নবীন কিশলয় হাজার বছর ধরে বিঘ্নিত বাংলায়,
অতনু অনবদ্য বাঁধনে ঋদ্ধ হোক তামাটে মানুষ।