চোর
--মনিরুজ্জামান শুভ্র
চার দিকে হৈচৈ চোর ধরা পড়েছে চোর ধরা পড়েছে,
এলাকার সবাই ছুটে যাচ্ছে হারামজাদাটাকে দেখতে  
আবাল, বৃদ্ধা, সবাই ছুটে চলছে এমনকি ঘরের মধ্যে ঘোমটা  
টেনে বসে থাকা লাজুক গৃহবধূটাও ছুটছে চোর নামক জন্তুটাকে দেখার জন্য।
এর মধ্যে এক দফা উত্তম মাধ্যম হয়ে গেছে।
হাত, পা বাঁধা অবস্থায় মধ্য বয়স্ক রোগা একটা দেহ
পড়ে আছে চেয়ারম্যান বাড়ির উঠানে। এখনো মরেনি,
দেহে প্রাণ আছে, নাক আর মুখ ফেটে রক্ত বের হচ্ছে  আর কি।
পারার মাদক ব্যাবসায়ী সহ ঐযে নারী পাচার কারি দালাল,  
হজ্জের টাকা লুট করা এজেন্ট, সমিতির নামে গরিবের রক্তের টাকা
মেরে খাওয়ায়া জানোয়ার,সবাই এসেছে, সবাই তাঁদের হাতের ময়লা ইচ্ছে মত ধুয়েছে,
উফ কিযে মজার দৃশ্য, আর চোরের চিৎকার তো প্রেমীকার শীৎকারের চাইতেও মধুর।
পাশের বাড়ির ভাবির সাথে লুকিয়ে পরকিয়া করার মধ্যেও এত মজা নেই
যতটা মজা পাচ্ছে আলাভোলা ছেলেটা চোর নামক জন্তুটাকে মেরে।
চোরের সাথে একটা ছোট চোরও আছে, চোরের বাচ্চা চোর, কুত্তার বাচ্চা কুত্তা।
এমন দুই চারটা কুত্তা মরলে কিছু হয় না আমদের এই ভদ্র সমাজে।  
পারার নব যুবতী, বালিকাদের পাছা আর বুকের দিকে তাকিয়ে উফ..আহ করা যাদের কাজ,
আজ তাঁদের মুখেই চোর নিধনের স্লোগান, মার শালারে ,ইটা দিয়া থেঁতলে দে।  
যে লোকটা প্রতি রাতে বাংলা খেয়ে বউ পিটায় যৌতুকের জন্য আজতো তার ডাবল ডিউটি,  
যে ছেলেগুলো উশৃঙ্খল তারাই আজ শৃঙ্খলার সাথে ম্যানেজ করে যাচ্ছে চোর পিটানোর কাজ।
ঐযে বাজারের দোকানিরাও এসে গেছে, যারা প্রতিদিন শতশত মানুষকে ঠকাচ্ছে
ওজনে কম দিয়ে, খাবারে ভেজাল দিয়ে, মরা গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল দিয়ে।;
তারাই আজ এক ছটাকও কম দিচ্ছে না বরং বেশি বেশি করেই উত্তম মাধ্যম দিচ্ছে।
দে বেটারে, ঐ ছোটটারেও দে, এখনো মাথার বীজলা যায় নি আর চুরি করতে শিখছে?
হঠাৎ সবাই সম্মানের সাথে বলল, ওই জায়গা দে জায়গা দে চেয়ারম্যান সাব আসছে,
টিন থেকে শুরু করে গম, বৃদ্ধ ভাতা, এতিম ভাতা এমনকি বিধবাদের ভাতা মেরে খাওয়া
যার কাজ সে আমদের সৎ আলহাজ্ব,ধুত্রা ফুলের মত পবিত্র চেয়ারম্যান সাব...।
শালায় আর জায়গা পেল না , সব রেখে চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসছিল চুরি করতে?
তাও আবার ভাত! কি সুন্দর করে রান্না ঘরে ঢুকে ঐ ছোট চোরটারে মুখে তুলে
খাওয়াচ্ছিল গরম ধোঁয়া উড়া বাসমতী চালের চিকন  সাদা ভাত ... ।  
ধর্ষণের আসামিটারও আজ চেতনার দণ্ড দাঁড়িয়ে গেছে, এই মহা অপরাধ দেখে,
তাইতো রাস্তার দশ ইঞ্চি ইটদিয়ে আচ্ছা মতন দিল থেতলে চোরের দুই হাত ,পা,
কেউ একজন বলে উঠলো ছোটটার পাছা দিয়ে হাওয়া দে। এই বার চোরটা চিৎকার করে বলল,
যে দেশের একটা রাস্তা ঝাড়ুদার থাইকা প্রধান মন্ত্রী পর্যন্ত চোর  
সে দেশে একটা ছোট্ট বাচ্চা দুই দিন ধইরা না খাইতে পাইরা দুইটা ভাত খাইছে
সে হইয়া গেছে মহাচোর,মহাঅপরাধী? অন্তরে কী একটুও নাই খোদার ডর...।
এই শালা হারামি এত বড়কথা? এই বলে সকলে একত্রে দিল ঝাঁপ,
যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে চোরের স্পর্ধা লংঘনের দিল শাস্তি,
রোগা পটকা দেহটায় এই যাত্রায় আর সইলো না, এই মার সহ্য করার চাইতে
দেহ ছেড়ে প্রাণ পাখি উড়ে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করলো, তার মুখে শুধু শোনা গেল
অস্ফুট শেষ কথা আমার পোলাটা চোর না, ওরে যাইতে দেন.........।

২৯/০৮/২০১৬ইং
টোলামর, আয়ারল্যান্ড