উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস একজন আয়ারল্যান্ডীয় কবি, নাট্যকার এবং বিশ শতকের সাহিত্যাঙ্গনের একজন অন্যতম গুরুতবপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব । তিনি আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটিশ উভয় সাহিত্যেরই এক জন প্রবাদ পুরুষ। তিনি জীবনের শেষ বছরগুলোতে দুই মেয়াদে আইরিশ সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । তার সাহিত্যের মধ্যে কেল্টিক সাহিত্য, লেডি গ্রেগরি, এবং অ্যাবি থিয়েটারের স্থপতি এডওয়ার্ড মার্টিনের গুরুত্বপুর্ণ প্রভাব পাওয়া যায় । তিনি ১৯২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরুস্কার লাভ করেন।
ইয়েটস জন্মগ্রহণ ও পড়াশোনা করেছেন ডাবলিনে , কিন্তু তার শিশুকালের বেশির ভাগ কেটেছে তার শহর কাউন্টি স্লাইগোতে। তার সর্ব প্রথম কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে । ইয়েটস্কে ধরা হয় অইতিহ্যগত ভাব্ধারার অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন একজন কবি ।
দি সেকেন্ড কামিং; ইস্টার ১৯১৬; লিড এ্যান্ড দি সোয়ান’ সহ আরও কিছু কবিতায় কবির আইরিশ জাতীয়তাবাদের প্রতি প্রবল শানুভূতি, ইংল্যান্ডের আক্রমনের কঠোর সমালোচনা ফুটে উঠে। জীবনের বেশির ভাগ সময় কবি জন্মভূমির বাহিরে কাতালেও জন্মভুমির প্রথি টান মোটেও কমেনি, জন্মভূমিকে ভুলেও যান নি । কবি হসাবে ইয়েটস তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৮৮০-র দশকে এবং ১৯৯৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আধুনিক ইংরেজি সাহিত্যের একজন আগ্রগন্য কবি হিসাবে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করেন । বিশেষ করে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে কবি তার কবিতার মাধ্যমে এক দারুণ প্রভাবশালী ভূমিকা রাখেন। ইয়েটস তার কবিতায় প্রাচীন আইরিশ মিথ এবং লিজেন্ডের চমৎকার ব্যবহার করেছেন তার উদ্দেশ্য ছিল আইরিশ সাহিত্য সৃষ্টি করে, আইয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদ এবং ইতিহাস কে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য । ইংরেজি সাহিত্যের ভিক্টোরিয়ান যুগে কবিতা লিখা শুরু করে তিনি আধুনিক কবি টি, এস, এলিয়ট এবং এজ্রা পাউন্ডের কাতারে এসে ক্যারিয়ার শেষ করেন । তার কবিতায় জাতীয়তাবাদ, রাজনীতির পাশাপাশি আইরিশ জীবনের প্রথা, মূল্যবোধ, শিল্প, ধর্ম, শ্রেণী ইত্যাদি চিত্র ফুটে উঠেছে। ইয়েটস কে বলা হয় ইংরেজি কবিতায় প্রতীকীবাদের জনক। ইয়েটস তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট কবিতাগুলো সৃষ্টি করেন তার ৫০ থেকে ৭৫ বছর বয়সের মধ্যে। এমন কি ৭৩ বছর বয়সেও তিনি নিয়মিত কবিতা লিখেছেন, মন এবং কল্ম কে সচল রেখেছেন ।
এই গুনি লেখক ১৯৩৯ সালের ২৮শে জানুয়ারি ফ্রান্সে মৃত্যু বরণ করেন ।
তার লেখা বিখ্যাত একটি কবিতা দি সেকেন্ড কামিং দিয়ে আলোচনা শেষ করতে চাচ্ছি ।
‘দি সেকেন্ড কামিং’
ক্রমাগত চক্রে এক দিতে দিতে পাক
বাজ আর বাজিকের শোনে না তো ডাক
ভেঙ্গে পড়ে সবকিছু; কেন্দ্র আর পারে না আগলাতে;
সারা বিশ্ব ভরে যায় হাট-খোলা অরাজকতায়,
রক্ত-উদ্দীপিত ঢেউ বাঁধ ভাঙ্গে, ডুবে যায় তাতে
শুচিতার মহোৎসব দিকে দিগন্তরে;
নিরতিসংশয় সব শ্রেষ্ঠেরা, প্রত্যুত নিকৃষ্টেরা
পাশব প্রবল্যে সব টৈটম্বুর।
অবশ্য আসন্ন কোনো পুনরাবির্ভাব;
অবশ্য আসন্ন সেই দ্বিতীয়াগমন।
দ্বিতীয়াগমন! উচ্চারিত হবা-মাত্র এই শব্দাবলি
প্রপঞ্চ-প্রণব থেকে বিরাট প্রতিমা এক বেরিয়ে আমার
দৃষ্টিকে পীড়ন করে; কোনখানে মরুভূর তাতল বালিতে
বিকট আকৃতি এক, ধড় যার সিংহের, মুন্ড মানুষের,
চাউনি সূর্যের সম ফাঁকা, নির্দয়;
চলেছে মন্থর উরু টেনে টেনে, এদিকে চৌদিক বেড়ে তার
ঘৃণায় অস্থির মরুপাখিদের ছায়াগুলি চক্কর খায়।
আবার আধাঁর নামে; কিন্তু আমি এখন জানি, যে
দীর্ঘ কুড়িশতকের পাথরের ঘুমও
দু:স্বপনে করেছে তাড়িত এ দোদুল দোলনা
আর, কী এই কদর্য জন্তু, যার মাহেন্দ্রমুহূর্ত উপস্থিত,
গুড়ি মেরে চলেছে যে বেথলেহেমে জন্ম নিতে তার?
এই কবিতাটি কে ইয়েটসের অন্যতম সেরা আধুনিক কবিতা বলা হয় । ১৯১৯ শালে কবিতাটি লেখা হোলেও প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে ।
তথ্যসূত্রঃ উইকি পিডিয়া, নির্বাচিত ইয়েটস/ আনুবাদঃ সুব্রত অগাষ্টিন গোমজে/ ফ্রেন্ডস বুক কর্ণার ২০১১,
The Nobel Prize in Literature 1923. Nobelprize.org. Retrieved on 3 June 2007.