এটি হচ্ছে কবিতার রাজ্য,
এখানে হানা দেবেন না ।
রহস্য আঁতুড়ে যদি জন্ম না হয়
তবে এ রাজ্যের কিছুই আপনি বুঝবেন না,
পাঠ অথবা অপাঠ করতে গিয়ে
ঠিক থাকবে না মেজাজ........
কী সেই অদ্ভুত আঁধার !
কেনো সেখানে অন্ধরা চোখে বেশী দেখে ?
কেনো একজন মানুষ পৃথিবীর এত কিছু ছেড়ে
ভালোবাসে মেঘ. . .চলিষ্ণু মেঘ. . . ঐ উ'চুতে. . .
ইত্যাদি এসব বোধগম্য না হলে
কখনোই এ রাজ্যের অধিবাসী হতে পারবেন না।
অতএব এ জায়গায় অযথা পা দেবেন না,
মুখ বাঁকা করবেন না, বিরক্ত হবেন না,
অভিযোগ করবেন না।
বলবেন না,
কী সব ছাইভষ্ম, মাথা মুণ্ড ছাড়া
লেখা লেখেন, কিছুই তো বুঝতে পারি না।
তখন কিন্ত কবি সুনীল এর মতো
বলতেই হবে, হে ভদ্রে, কবিতা সবার জন্য না।
যা ভাল লাগে তাই নিয়ে পড়ে থাকুন না,
কী দরকার কবিতার পিণ্ডি চটকাবার ?
কবিরা তো আলু, পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে
আপনাদের শ্বাস রোধ করে না।
কেড়ে নেয় না কারো একটিও অধিকার।
সুতরাং নিরীহ কবিদের এলাকায় ঢুকে
অযথা পাণ্ডামী করবেন না, চোখ রাঙাবেন না,
বাজে রাজনীতিবিদের মতো মাদল বাজাবেন না,
এখানে সেরকম কোনো প্রাপ্তি নেই।
কবিতা হলো শব্দ বাক্যের যাদু, মায়াজাল,
যেন ভিন্ন জগতের অনুভূতি বর্ধক এক সরোবরের
আশ্চর্য জল,
স্নান করবেন, পান করবেন,
হবেন শৃঙ্গারের মতোন শিহরিত ।
অর্থহীন কিছু বাক্যের প্রবাহে
আপনি চমকে উঠবেন কী এক দুর্দান্ত অনুভবে।
কিছু না বুঝেও, কী এক ভালো লাগায়
পূর্ণ হয়ে উঠবে মন, আপনার অনুভবই গড়ে দেবে
আপনার নিজের মতো করে কোনো অর্থ।
যদি এমনটি পারেন, তবে কবি এবং আপনি
কেউ আর নন ব্যর্থ।
তখন আপনি কবিতাকে করবেন
প্রেমিকের মতো চুম্বন এবং কখনো আর
দেয়া সম্ভব হবে না কবিতাকে গালি ।
মেখে দিতে ইচ্ছে করবে না নির্বোধের মতো
কবিদের মুখে চুন কালি।
অতএব কবিতার রাজ্যে
খালি খালি চেঙ্গিস খানের মতো হানা দেবার
কোনো প্রয়োজন নেই ।
কবিরা....এই ক্রুর ক্রুদ্ধ যুদ্ধে ব্যস্ত পৃথিবীর
অহেতুক আঘাত, রক্তপাত, জীবনের কষ্ট যন্ত্রণা
আর বৈষম্যে খুব ব্যথিত হয়,
কিন্তু খুনে পৃথিবীর ভয়ে
কবিদের ভাষা হয়তো নেয় রূপকের আশ্রয়,
তাদের বাক্যেগুলো বিমূর্ত হয়ে ওঠে।
সেখানেও রক্ষা নেই, প্লেটোর মতো
"কবিরা নিষ্প্রয়োজন, নিষিদ্ধ করো কবিতা"
এরকম চিৎকারে আজো কেউ কেউ চান
নিরীহ কবিতার রাজ্যের যেন ধ্বংস ঘটে।
তবে সাবধান,
কবিরা বহুলাংশে সুমিষ্ট সুবোধ হলেও
এই কবিতার রাজ্যে কিন্তু নজরুল, সুকান্ত,
নবারুণ, শক্তি, সুবোধ ও রফিক আজাদ এর মতো
বেপরোয়া কবিত্ব শক্তিতে বহু কবি
মহাকালের দূতের মতোন আছেন বিরাজমান,
যারা কবিতা ও কাব্যিকতায়
বিষন্ন বীর হেক্টর এর মতোই দুর্ধর্ষ যে কোনো দ্বৈরথে ।
অতএব যদি না থাকে কবিতার পরম ক্ষিধে
তবে পাখির মতো অযথা খুঁটে খুঁটে
কোনো প্রয়োজন নেই কবিতা তুলবার
আপনার ঐ কবিতা না বোঝার
তিরস্কার তিক্ত ঠোঁটে।
(১৪.০৭.২০২৪)