আহমদ আবু বকর। আমাদের প্রিয় বাংলা কবিতা.কম কবিতা আসরের একজন সদস্য, একজন কবি। কবি আহমদ আবু বকর। হৈচৈ বিহীন নীরব দক্ষ কবি। ১ বছর ৭ মাস হলো বাংলা-কবিতায় আছেন। জন্মস্থান এবং বসবাস ঢাকা, জন্ম ৫ই মে, জন্ম সাল দেননি। তবে প্রোফাইলে যেহেতু লেখা আছে শিক্ষার্থী এবং ছবিটিও বলে দেয় যে, তিনি একজন তরুণ বয়সের কবি। কবিতার পাশাপাশি, নিজের কবিতার নিজ কন্ঠে দু'টো আবৃত্তিও তিনি যোগ করেছেন আসরে। ভালো লেগেছে তার মোলায়েম কন্ঠ। আবৃত্তি করা তার "বুক-বাক্স" কবিতাটিও খুব সুন্দর।

তোমায় নিয়ে লেখা চিঠিগুলো / বুক-বাক্সেই জমা থাকে,
আগলে রাখার জন্য / ওর চেয়ে নিরাপদ জায়গা যে আর নেই!
মেঘকে শুধালাম, ‘হবি কি পিয়ন? / চিঠি বইবি যেমন বয়ে নিস বৃষ্টি।’
সে সভয়ে জবাব দিলো,‘আমার নেই অতো শক্তি;/ অনুভূতির ভার যে বড্ড বেশি!’

বুক-বাক্স, মেঘ পিয়ন ইত্যাদি কাব্যিকতার শেষে, "অনুভূতির ভার যে বড্ড বেশি" - চমৎকার অভিঘাত !

কবিকে চিনতাম না। ক্ষতি আমারই। আমাদেরই। তবে সেদিন যেন কোনো দৈব, আযানের ধ্বনিত মধুর সুরের মতো এই কবির কবিতা "বাতাসে ধ্বনিছে আযান" এর দিকে আমার দৃষ্টি ফেরালো। কবিতার শিরোনাম আমাকে নজরুল অনুভবে ভরিয়ে দিল। অতএব ঢুকে পড়লাম কবির ঘরে। পড়তে পড়তে আযানের মধুর মহিমা আমাকে স্নিগ্ধ করে তুললো। কবি যেন, কবি নজরুল, যেন 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি', কবি ফররুখ আহমেদ। আমাদের কবিতা আসরে অনেক ভালো ধর্মপ্রাণ কবি আছেন। তবে তাদের মাঝে, কেউ কেউ আবেগের টানে, ধর্ম কর্ম আহবানে খুব উচ্চকিত হয়ে ওঠেন কবিতায়, যা কবিতার রস ভঙ্গ করে। অথচ এই কবির মতো যদি আমরা লিখি, অথবা সেদিন কবি নির্ঝর যে প্যালেস্টাইন মুসলিম কবি'র কিছু কবিতা অনুবাদ করলেন, সেরকম করে যদি প্রকাশ করি ইসলাম ধর্মের মহিমা এবং শান্তি, তবে "এসো এসো জিহাদ ধ্বনি মুখর" কবিতা থেকে এইরকম স্নিত ভঙ্গিতে লেখা কবিতা আরো বেশী কাজ করবে চেতনায় আগুন জ্বালিয়ে দিতে, ধর্মের জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিতে । কবিতাটির লিংক মন্তব্য ঘরে দেয়া আছে, পড়লে, পাবেন একটি ভালো কবিতা পাঠের তৃপ্তি, এবং পাবেন নজরুলের মতো খুব সুন্দর ছন্দ-শব্দ কাঠামো আঙ্গিকে রচিত অনবদ্য কবিতা। কবির কবিতা পড়তে পড়তে যেন শুনতে পেলাম, বাতাসে ভাসা আযানের ধ্বনি, বিশেষ করে নীরব সময়ে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মাগরিবের আযানের ধ্বনি। মন, সন্ধ্যার সে আযান ধ্বনিতে কেমন উদাস হয়ে পড়ে। জীবনের চিন্তা পায় অন্য এক রূপ। "জান্নাতেরই বাগান।" "যিকরে সরব লিসান" "বেহেশতি ইশতেহার""ইশকের নহর" ইত্যাদি শব্দ অংলকরণ কবিতা পাঠকে করেছে অপূর্ব, দিয়েছে দারুণ দ্যোতনা।

কবির এই কবিতাটি পড়ার পর, আসরে আর কবিতা না পড়ে, কেনো যেনো, কবিতা আসরে যুক্ত করা তার ফেসবুক লিংকে ক্লিক দিলাম। হয়তো অবচেতনে তাকে আরো জানতে ইচ্ছে করলো। সেটাও দৈব হয়তো। কারণ, সেখানে আমার জন্য আরেকটি আশ্চর্য অপেক্ষা করছিল । ফেইসবুকে যেতেই দেখি, কবির একটি কবিতা সেখানে দেয়া। পড়তেই শিহরিত হয়ে উঠলাম। এখানে কবি, একজন শামসুর রাহমান, একজন জয় গোস্বামী, এইমাত্র তার কী কবিতা পড়ে এলাম, আর এখানে সেই একি কবির কবিতার মুড একশ আশি ডিগ্রী টার্ন! ভালো করে ভেবে দেখুন, আমরা অনেকেই পারি, তবে তেমন সৃজনশীলতা না থাকলে, কবি নজরুল থেকে শামসুর রাহমান হয়ে যেতে পারি না সহজেই। অনড়বৎ হয়ে গেলাম মুগ্ধতায়। যেন, কবি রুদ্র'র মতো কোনো মাস্টারপিস পড়ছি। কবিতার নাম "তেমন কিছু জমাইনি জীবনে" (নিচের লাল লিংক ক্লিক করুন) যা তিনটি পর্বে বা স্তবকে বিভক্ত " ১. তেমন কিছু জমাইনি জীবনে। ২. কিছুই বুঝি জমাইনি জীবনে! (আশ্চর্যবোধক দেয়া) ৩. কী আর এমন জমালাম জীবনে! (আবারো আশ্চর্য চিহ্ন, কিন্তু ভিন্ন অনুভবে) এবং এই তিন পর্বের বাক্যগুলোতে যা বললেন, তা আধুনিক কবিতা রচনার সবরকমের গুণাবলী দ্বারা সমৃদ্ধ। আপনারা পড়ে নিন, আমি পাঠে কী উত্তেজনা, কি হাহাকার অনুভব করছি, তা বর্ণনা করতে গেলে ছোট খাটো শব্দের সমুদ্র হবে। কবির ফেসবুকে আরো কিছু তথ্য পাওয়া গেলো। তিনি নিজেকে, মূলত লেখক পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। শতভাগ সহমত, সে প্রমাণ তিনি আমাকে দিয়েছেন। তার "একটি কবিতা" নামে একটি কাব্যগ্রন্থ আছে। আবারো সমর্থন, কেননা এমন কবি'র আরো দু'য়েকটা কাব্য গ্রন্থ থাকা আরো বেশী করে অনুমোদন যোগ্য। আর যতদূর বোঝা যায়, তিনি কিছু সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। ফেইসবুকে, কবি তার এই কবিতাটির সাথে, ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরের সান্ধ্যকালীন সময়ের কিছু চিত্র দিয়েছেন, যা কবির কবিতাটির মতো তার কাছে তেমন কিছু জমাইনি'র মধ্যে একটি জমাকৃত জীবন সম্পদ। সেখান থেকে একটি ছবি আলাচনায় যুক্ত করে দিলাম।

শেষ করি কবির প্রতিভার প্রতি মুগ্ধতায় এবং নিজের সৌভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতায়, কারণ কবিতা আসরে অতি সম্ভাবনায় সমকালীন কবি খ্যাতি অর্জন করার মতো একজন কবির সন্ধান আমি পেয়েছি। অন্তত, এই পুরো আলোচনায় উল্লেখ করা, তিনটি কবিতাই সেই দিকেই নির্দেশ করে। কবির ফেইসবুকে এই কবিতাটি পড়ার পর, দেখি পোস্টের নীচে একজন মন্তব্য করেছে, "ভাই আমাকে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে যুক্ত করে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।" মনে মনে বললাম, কবিটির এমন সমৃদ্ধ কবিতা পড়ার পর কে না কবির বন্ধু হতে চাইবে! সত্যিকারের কবিতা পাঠক সবাই তার বন্ধু হতে চাইবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

(৮.১১.২০২৩)

*** একটা বিষয় উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। আলোচ্য কবি বাংলাদেশ এর জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন মহা ভক্ত। তার ফেসবুকে এ বিষয়ক পোস্টে ভরে আছে। এটা আমার কাছে তার দেশপ্রেমিক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। - (১১.১১.২০২৩)