আমি যে পরিবারের সদস্য, সেই পরিবারের প্রতিই প্রথমে ভালোবাসা জানাবো। আমার পরিবারের সদস্যদের এই ভুবনে, এই জীবনে উজ্জ্বল করে তুলবো। আমি এই বাংলা-কবিতা.কম এর কবিতা আসরের সদস্য, সুতরাং এই কবিতা আসরের কবিদেরই প্রধানত আমার হৃদয়ে ধারণ করবো, জানাবো তাদের ভালোবাসা। তারপর বাইরের দিকে মনোযোগ দেবো।

আমি অনুভব করি, আমাদের কিছু কিছু সদস্যদের কারণে, এই কবি এবং কবিতার জগৎ যেন দুই পর্বে বিভক্ত। একটি আমাদের কবিতার আসরের কবিদের, অন্যটি ফেসবুক এবং পত্রিকা-ম্যাগাজিনের কবিদের। এই কবিতা আসরে এসে আমি জানিয়েছিলাম, আমার যৌবনে বহুবার চেষ্টা করেও গোষ্ঠীবদ্ধ তোঁয়াজ সমৃদ্ধ পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও কবিদের মধ্যে আমার জায়গা হয়নি, বা দেয়া হয়নি, কেননা আমরা অনেকেই সেই তোঁয়াজ শিল্প চর্চা করতে পারিনি। এবং এও বলেছি, আমার যৌবন কালে পত্রিকা-ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কবিতা পড়ে দেখেছি, সেগুলো অনেক ছিল আমারই মতো দুর্বল, এমনকি তখনকার বিখ্যাতদেরও, তবু আমি ধর্তব্য যোগ্য হইনি! কবি দুঃখ কোথায় রাখি ?

তাই সেদিন যেমন জানিয়েছিলাম, আজও ভালােবাসা শ্রদ্ধা দিয়ে জানাই, মাননীয় এডমিন পল্লব আশফাক এর প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা। তিনিই বুঝেছিলেন, আমাদের মতো কবিদের মর্ম যন্ত্রণা। তাই আমাদের মতো কবিদের জন্য তিনি গড়েছেন একটি অনন্য ঠিকানা, একটি আনন্দ আশ্রয়। হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের প্রিয় কবি ও মাননীয় এডমিন পল্লব আশফাক।

আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন যে, আমি কি-রকমের মারাত্মক পর্যায়ের উদার পাঠক এবং সেই অনুসারে, কবিতা পাঠে সীমাহীন উদারতা রাখার উপদেশ আমি সবসময় সবাইকে দেই। রচনার আঙ্গিক অনুসারে এই আসরের বিভিন্ন ঘরানার কবিদের শত শত কবিতায় আমার মন্তব্য এবং স্বল্প সংখ্যক আলোচনা করার প্রয়াস, তাই প্রমাণ করে। আমার কাছে কবিতার মূখ্য বিষয় হলো অনুভব সৃষ্টি, এবার যে কবি যেভাবেই লিখুক না কেনো, আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কবিতা লেখার ব্যাকরণ নিয়ে আমি অশান্তিগ্রস্থ থাকতে পছন্দ করি না। যে কবিতা পাঠে অপূর্ব অনুভব হৃদয় মথিত করে দেবে সেটাই আমার কাছে কবিতা।

এবার পদার্পণ করি কিঞ্চিত কটু পর্বে। উপরে যে বলেছি, আমাদের কবিতা আসরের কিছু কিছু কবি, তারা যেন আউটসাইডার। কবিতা আসরের সদস্য হয়েছেন যেন শুধু নিজের কবিতার ছাপাবার জন্য এবং ঐ ফেসবুক এবং পত্রিকা-ম্যাগাজিনের কবিদের নিয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা প্রকাশ করবার জন্য। অথচ, এতদিন কবিতা আসরে থেকেও ওনাদের বিবেক কী একবারও জিজ্ঞাসা করেনি, "তুমি তোমার নিজ পরিবার অর্থাৎ কবিতা আসরের  সদস্যের কবিতা পড়ছো না কেনো ?" "মন্তব্য করছো না কেনো ?" "আলোচনা করছো না কেনো ?" এই কিছু কিছু কবিদের আলোচনা করার ক্ষমতা কিন্তু দুর্দান্ত সমৃদ্ধ। অথচ তারা বাইরের যে সব সমকালীন কবিদের নিয়ে আলোচনা করেন, যদি, এইসব বাইরের কবিদের জন্য যে পরিশ্রম করেন, সেরকম যথার্থ পরিশ্রম করে খোঁজ নিতেন এই কবিতার আসরে, তবে তারা আশ্চর্য হতেন যে, ঐ সব বাইরের কবিদের সমকক্ষ বা তার চেয়ে সমৃদ্ধ কবিদের কবিতা, এই কবিতার আসরে জ্বল জ্বল করছে আকাশের নক্ষত্রের মতো, জ্যোস্না মথিত নদীর স্নিগ্ধ জলের মতো। চ্যালেঞ্জ করুন, আমি তালিকা দিয়ে দেবো।

কবিতা আসরের সদস্য হয়ে তার দীর্ঘ পূর্ব ইতিহাসে ভ্রমন করবো না, অনন্য সব কবিদের  রেখে যাওয়া কবিতার ছাপ স্পর্শ করবো না, সেইরকম স্বার্থপর সদস্য বা কবি আমি নই। আমি এই আসরের কবিদের মাঝে ছড়িয়েছি ভালোবাসা, আমি অভিমান করেছি, বিরক্ত হয়েছি, নিশ্চুপ হয়েছি, যেমন একটি পরিবারের সদস্যের মধ্যে হয়, ঠিক তেমন। সবকিছু কবিতা আসরকে ঘিরে, আমার ক্ষুদ্র এই কবিতার জীবন যাপন।  

আমার আলোচনা করার তেমন ক্ষমতা নেই। কিন্তু যে কয়টি এই অবধি পেরেছি, তাতে কবিতা আসরের কবিদের নিয়ে মূখ্যত করেছি এবং বাইরের কবিদের নিয়ে দুটো করেছি। যেমন করেছেন আসরের অন্য কবিরা। প্রথমেই উল্লেখ করবো, কবি সরদার আরিফ উদ্দিন এর কথা। তার দুইশত বা তার উপরে কবিদের কবিতা নিয়ে আলোচনা আছে, যার পুরোটাই হয়তো কবিতা আসরের কবিদের কবিতা নিয়ে আলোচনা। এরপর এই মুহূর্তে মনে পড়ছে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল, কবি সহিদুল হক, কবি যাদব চৌধুরী, কবি সমীর প্রামাণিক, কবি রণজিৎ মাইতি, কবি শরীফ এমদাদ হোসেন, কবি মুকুল সরকার, কবি গোপাল চন্দ্র সরকার, সম্প্রতি কবি সুহেল ইবনে ইসহাক, বর্তমান এবং পূর্বের আরো অনেকে আছেন, যারা শুধুমাত্র আমাদের কবিতা আসরের কবি অথবা কবিতা আসর ও বাইরের, উভয় দিকের কবিদের নিয়ে আলোচনা করেছেন।

যারা তর্ক তুলবেন, নিয়মাবলীর কথা তুলবেন, তাদের আগেই বলে রাখি, আমার এই বক্তব্যের মূল বিষয়টি কী? মূল বিষয়টি হলো, "আমি কবিতা আসরের সদস্য, অতএব যোগ্য কর্মটি হলো, যদি আমার আলোচনা করার দক্ষতা থাকে, তবে আমি আমার সতীর্থ সদস্য কবিদের কবিতার প্রতি মনোযোগী হবো, তাদেরকে সকলের সামনে উজ্জ্বল করে তুলবো। কবিতা বিশ্লেষণের তাত্ত্বিক ক্ষমতা যদি আমার থাকে, তবে আমি আমার সতীর্থ সদস্যের কবিতা পড়বো এবং মন্তব্য করবো যথার্থ প্রীতি এবং কবি বন্ধুত্বে। আউটসাইডারের অহংকার নিয়ে থাকবো না।" আমি একদিন এই কিছু কিছু সদস্য কবিদের একজনের সমৃদ্ধ আলোচনায় মন্তব্য করলাম এবং একটি বিষয় তিনি আলোচনায় আনেননি, তা উল্লেখ করলাম। কিন্তু তার অহংকার এমনই উচ্চতর যে, তিনি অন্যদের সাধুবাদ গ্রহন করে উত্তর দিলেন, শুধু আমাকে উত্তর দেবার ধর্তব্যযোগ্য মনে করলেন না। এটা ঠিক না। আমিও এই কবিতা আসরে আপনার সতীর্থ সদস্য, মনে রাখা উচিৎ। (এখানে সবখানে "আমি" বলতে বুঝিয়েছি এই কবিতা আসর পরিবারের যে কোন সদস্য।)  

সুতরাং উপসংহারে এই কিছু কিছু কবি ও দক্ষ আলোচকদের প্রতি অনুরোধ, নিজেদের এই কবিতা আসরের সদস্য ভাবুন, কোনো আত্মশ্লাঘা বা অহংকার বোধে একটি কবিতা পরিবারে যুক্ত হয়েও বিচ্ছিন্ন বসবাস করবেন না। ধন্যবাদ।

(০৪.১১.২০২৩)