"ভালোভাবে বেঁচে থাকাই সর্বোত্তম প্রতিশোধ"
(Living well is the best revenge.)
- George Herbert (born April 3, 1593, Montgomery Castle,
Wales—died March 1, 1633, Bemerton, Wiltshire, England),
English poet, orator and priest of the Church of England.
এ জগতের মহান দার্শনিকরা যুগে যুগে প্রচুর বাণী রেখে গিয়েছেন আমাদের এই জীবনের বিশ্লেষণে, জীবনকে উপলব্ধি করার বা বুঝবার জন্য, জীবনকে সামাল দিয়ে বা তার সাথে লড়াই করে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য। তবে দার্শনিকদের সাথে বহু কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব....কে নয় ? তাঁরাও পিছিয়ে ছিলেন না, রেখে গিয়েছেন অনেক অমর বাণী।
যেমন হাতের কাছেই ছোট একটি উদাহরণ দিতে পারি, আমাদের কবিতা আসরের শ্রদ্ধেয় কবি কবীর হুমায়ূন সব সময়ে বলেন "কবিরা উত্তম মানুষ, তাদের সবকিছু হয় সত্য সুন্দর"। এটি আমার কাছে সরাসরি সরল একটি সুন্দর বাণী। তিনি কখনো বলেননি বা আমিও জিজ্ঞাসা করিনি, তবে আমি ধারণা করি, এটা তাঁরই কথা। এমনই ভালো লেগেছে যে, অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলাম রুবাইয়াৎ ২০২০ সালে:
কবিরা সকল উত্তম মানুষ অধম এ মর্ত্য ’পরে
কবি মন হয় সত্য সুন্দর ভুবন আলোকিত করে
কবিতার বাণী সত্য যে কবির, মুখের কথাও তাই
উত্তম কবির দেহে ও আত্মায় অমিয় প্রভারা ঝরে।
(২৯.০৯.২০২০)
(*শ্রদ্ধেয় কবি কবীর হুমায়ূন বলেছিলেন একদিন, “কবিরা উত্তম মানুষ, তাদের সবকিছু হয় সত্য সুন্দর”। খুব ভালো লেগেছিলো তাঁর কথাগুলো, তা দিয়ে আমার রুবাইয়াৎ গঠন। প্রিয় কবিকে অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।)
আমি ছোটবেলা থেকেই ইংরেজী চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজের খুব ভক্ত। এই গতকাল নতুন একটি টিভি সিরিজ দেখছিলাম। সেখানে মূল তরুণ চরিত্রের দাদী মারা যাবার পর সে যখন শোকার্ত, তখন তার দাদীর একজন বন্ধু তাকে বোঝাবার একটি পর্যায়ে এই বাণীটি বলে এবং উল্লেখ করে এটি তালমুদ ধর্মগ্রন্থের বাণী। সাথে সাথে আমি গুগলে সার্চ দিলাম। কয়েকটি উত্তর পাওয়া গেলো। দেখা গেলো, এক জায়গায় The New Yorker বলছে এই বাণীটি একটি স্প্যানিশ প্রবাদ বাক্য, যা Calvin Tomkins নামক এক লেখক জুলাই ২০, ১৯৬২ সালে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন এবং বাণীটি দিয়ে তার একটি বইয়ের নামকরণও করেছেন। তবে তালমুদ ধর্মগ্রন্থের কথা যে এটি নয়, সে সম্পর্কে অনেক জায়গায় গুগল সমর্থন জানালো । এরপরে ভালো করে গুগল প্রদক্ষিণ করে নিশ্চিত হলাম যে, এই বাণীটি জর্জ হাবার্ট এর, যিনি সপ্তদশ শতাব্দীর একজন কবি ও ধর্ম বক্তা। তার আরো কিছু লেখা খুঁজতে গিয়ে আরেকটি সুন্দর দু লাইনের কবিতা পেলাম, যা তার The Temple (1633) গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত:
Dare to be true. Nothing can need a lie:
A fault, which needs it most, grows two thereby.
(সত্যবাদী হবার সাহস রাখো, যে কোনো কিছুরই মিথ্যের প্রয়োজন হবার কথা নয়,
একটি দোষ, যা'র প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী একটি মিথ্যের, সেখানে দুটোর জন্ম হয়।)
খুব সুন্দর এবং ছন্দময় । আমরা সবাই অবগত, একটি দোষ ঢাকতে গেলে কিভাবে মিথ্যের পর মিথ্যের জন্ম হতে থাকে।
তো ফিরে যাই, ‘Living well is the best revenge.’ সংলাপটি শোনা মাত্রই আমি ধাক্কা খেলাম। ভালোভাবে বেঁচে থেকে...কিসের প্রতিশোধ, কোন রকমের প্রতিশোধ, কার প্রতি প্রতিশোধ ? বাণীটির গভীরতা আমাকে মুহূর্তে আশ্চর্য এবং মুগ্ধ করে দিলো। প্রচলিত প্রতিশোধ মোটেই এটি নয়। এটি আরো বড় কিছু। স্পিরিচুয়াল। কেউ আমাকে আঘাত করলে, ক্ষতি করলে আমিও একইভাবে তাকে তাই করলাম, সেরকম ব্যক্তিক পর্যায়ের সংকীর্ণ প্রতিশোধ নয়। আক্ষরিক অর্থে, প্রতিশোধ নিলে হয়তো আমার ক্ষোভ, আমার অহংকার প্রশমিত হলো। কিন্তু আমরা যদি এই প্রতিশোধ চক্রমাঝে বিরাজ করি, তাহলে একসময় নিজেরা একটি জীবন-নিঃস্ব অনুভবে জর্জরিত হবো।
সুতরাং এই অপূর্ব বাণীটির নিগূঢ় রহস্য ভাবতে গিয়ে অনুভব করলাম, যে জীবনের মাঝে আমরা বাস করি, সেই জীবনই যখন শত্রুর মতোন, দুঃখ-বেদনা-হতাশা, রোগ-শোক-দুর্ঘটনা, নিপীড়ন-শোষণ, অন্যায়-অত্যাচার-যুদ্ধ, ধর্মীয় বিদ্বেষ-লোভ-লালসা-হত্যা ইত্যাদি দিয়ে, আমাদের সমস্ত জীবনটির বিভিন্ন পর্যায়ে যেভাবে, বেঁচে থাকার সুখ কেড়ে নেয়, বাধাগ্রস্থ করে, ক্ষতিগ্রস্থ করে, এই এসবের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে, সহ্য করে, অবজ্ঞা করে, এসবের ঊর্ধ্বে উঠে যদি জীবনের সঠিক গুণাবলী অনুসারে আমরা বেঁচে থাকতে পারি, তবে সেটাই হবে জীবনের বিরুদ্ধে সর্বত্তোম প্রতিশোধ। অর্থাৎ, জীবনকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন....কত ভাবেই তো চেষ্টা করলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি পারলে, হে জীবন?
কবি ও ধর্ম বক্তা জর্জ হার্বাট এর এই বাণীতে খুঁজে পেলাম অনন্য সুন্দর রহস্য গভীর জীবনবোধ। বাণীটির অনুবাদ এভাবেও মননে এসেছিল "উত্তমরূপে বেঁচে থাকাই সর্বোত্তম প্রতিশোধ" । ধন্যবাদ সবাইকে।
(২৭.১০.২০২৩)