অনেক দিন পরে ফিরে এলাম-
এসে কী পেলাম?
আলের পাশে তালগাছগুলো কাটা,
মাঠ চৌচির ফাঁকা-
এখানে সেখানে এবড়ো-থেবড়ো ইট, বালুর স্তুপ-
আর তুমি দূরে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ
সবুজ শাড়ি পড়ে- ফ‍্যাকাসে ধুলো ময়লা লাগা-
বিব্রত অবহেলিত অসম্মানিত লজ্জিত,
তবুও যেন লাগাতার চেষ্টায় রত
আপন গৌরব আর অবস্থানকে ধরে রাখার!

তোমার যৌবনের জবাকুসুম ভেদ করে এখন
রড-সিমেন্টের রাহাজানি,
যে নিভৃত মেঠোপথখানি বেয়ে হারিয়ে যেতাম আমি
তোমার দয়ার দিগন্তে
হতাম শিহরিত, হতাম আমি রোমান্টিক এবং কবি-
আমার দ্বারা দু-একটি লাইন হতো
আশ্চর্য রকমের আহরিত-
সে পথ এখন মাটিহীন ঘাসহীন ঘাসফড়িংহীন
শক্ত কালো পিচঢালা সাপের মতো-
কেন যেন আমি এখনো সাপুড়ের মতো
তার সাথে খেলতে পারি না।

কী দেখবো সে পথের সীমান্তে গিয়ে-
কোনো ভিড়ভাট্টাময় বাজার
কোনো কৃত্রিম পার্ক অথবা লেক, অথবা কোনো রিসোর্ট
তোমার পিনদ্ধ বুকের এক পাশ ধসিয়ে বানানো,
অথবা দেখবো কোনো যানবাহনের স্ট‍্যান্ড
শব্দের ব‍্যান্ড পার্টিসহ, প্রচণ্ড ভিড়ে আক্রান্ত,
ব‍্যস্ত শ্রান্ত মানুষের অঢেল প্রবাহ-
দেখবো না সে আবহ
যা আবহমান কাল থেকে আমাদের
প্রশান্তির আকর হয়ে থেকেছে, প্রত্নতাত্ত্বিক
বিষয় হয়ে নয়- এখনকার মতো।

যে নদীটা তোমাকে দুভাগ করেছে কিছুটা,
যেখানে যেতাম আমি রাতে কখনো
জোছনার জলকেলি দেখতে, অথবা সকালে বা বিকেলে
সূর্যের হোলিখেলা দেখতে, সৈকতে অথবা
নৌকোয় ভেসে, সেখানে
এখন তেমন কাশবন বাঁশবন কিংবা ধানখেতের
প্রান্ত নেই, 'মনমাঝি তোর বৈঠা নে রে' গাওয়া
অতি সরল সাধারণ মাঝিরা নেই, মধুকর ধরনের
ডিঙা নেই ব‍্যবসায়ীদের, সেখানে এখন ঢের
ট্রলারাদির টালমাটাল আন্দোলন
দোকানপাটের দাপাদাপি-
কখোন চাঁদ ওঠে, কখোন সূর্য ডোবে তার খবর
না-রাখার জবর একটি অবস্থা বিরাজমান।

সে নদীর পাশের প্রাচীন সে বিশালদেহী বটগাছটি কোথায়,
কোথায় সে পিতৃপুরুষের ঐতিহ্যের মতো ছড়ানো
সুদীঘল ছায়া তার, যার নিচে ছলছল
নদী বয়ে যেতো, কলকল বয়ে যেতো কাছে
অবারিত জীবন প্রবাহ শত
কলকাকলি ভাটিয়ালি পালাগান বাউল গান
গীতিকা গাথায় ঝলকিত,
উৎসব পাবন মেলায় শোভিত স্রোত নিয়ে,
শত পুলকিত পথ ঘাট আর 'নক্সী কাঁথার মাঠ'-এর মতো
মাঠ নিয়ে- ধান-কাউনের লিখন লেখা-
বুকে যার আঁকা 'রূপসী বাংলা'র ছবি- কী কোমল সুন্দর
জীবনের আরতি আর সংস্কৃতির মণিমুক্তো খচিত!

আপন গ্রামের স্বরগ্রামে যে সুর বাঁধা আমার
তা চিরকাল থাকবে উদ্ভাসিত!

© Shukdeb Chandra Mazumder
   31-01-2023