ভুল না হয় কিছু হয়েছে সীতে, নিজেকে নিজে সংবরণ করো,
ভূমি যেমন গাছ-পালা তরুলতা- তৃণ ছাড়া ধূধূ মরুভূমি,
তেমনি তুমি বীণে আমি যে উত্তপ্ত বালুর মাঠ!!
পুরো অন্তর জুড়ে অস্তিত্বহীন তীব্র কষ্টের দহন।
তোমার বিয়োগে জীবন যে বিপন্ন অবসাদ!!
ওহে সীতা ।।
ওহে রঘুবংশীয় দশরথ ননন্দ রাম; সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হয়,
আবার পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়, রাত পেরিয়ে প্রভাত আসে
কেটে গেলো এক এক করে বারোটি বছর !!
চৌদ্দ বছর কাটলো সুখের বনবাস প্রতিটি ক্ষণে
রাবণ হরিলো, অতটুকু ভয় ছিলো না মনে
ভরসা ছিলো আমার প্রতি আপনার প্রেম-বিশ্বাস।
কিন্তু এখন!!
ওহে জনক নন্দিনী মিথিলা, মাটির কন্যা ভূমিজা, চেয়ে দেখো নেত্র তুলে
সমস্থ অয্যোধ্যাবাসী এসেছে, আজ তোমায় ফিরাতে, ভুলে যাও দহন ব্যথা,
যত কষ্টের সকল তীব্রতা এই সংসারে খেলাঘরে
তুমি ছাড়া আজ অয্যোধ্যার আলো-বাতাস অন্ধকার
কাঁদছে সকল নগরবাসী-আত্নীয়-স্বজন সকল প্রতিবেশী।
ফিরে চলো সীতে ফিরে চলো আপন ঘরে...
ওহে সীতা।।
ওহে রাজন অয্যোধ্যাপতি কূলের গৌরব, রগুবংশীয় কৌশল্যানন্দন প্রভু
জীবন যেখানে অবিশ্বাসের চোরাকাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত,অগ্নি-পরীক্ষায় যেখানে সীতা
নিজের সতীত্বের মুল্য খুঁজে পাইনি, সেখানে আবার !!
ইচ্ছে তো করেছিলো, সেদিন নিজেকে নিজে শেষ করে দি'ই
কিন্তু অমন অবিবেচক আমি যে নই। শরীরের ধারণ করেছিলাম
তখন আপনার সন্তান। আজ ওরা বড় হয়েছে, লব-কুশ,
যাদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছি, রঘুবংশীয় আচার- সংস্কার
এবার আমার আপন ঘরে যাবার পালা ।।
নাহ! সীতা নাহ! এমন শাস্তি অয্যোধ্যাকে দিও না ক্ষমা'ই ধর্ম- ক্ষমা'ই গতি,
ফিরে চলো, অয্যোধ্যায়, সমস্থ প্রজা প্রতিবেশী তোমার পথপানে চেয়ে আছে,
যেই প্রজারা তোমায় বনবাসে সঁপেছে তাঁরা আজ কাঁদছে বসে,
যেমনি আলো ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার, তেমনি সীতা ছাড়া অয্যোধ্যা-
বেদনার কারাগারে বন্দি তারা- মাতারা দেখো তোমায় নিতে এসেছে।
ফিরে চলো প্রিয়ে । হোক পুনঃ মিলনের জয়। ওহে সীতে;
ওহে সংসার অধিপতি, বীরযোদ্ধা দশরথ নন্দন রঘুবংশীয় কূলের মুকুট,
জীবন যেখানে থমকে দাঁড়ায় অনাস্তার পথের ধারে, সেখানে নিয়তিও ভাবে
একবার বুঝতে চায়, নিয়তির খেলার প্রতিচ্ছবি,
যখন দেখলাম প্রাণের চেয়ে প্রিয় ভ্রাতা লক্ষ্মণ ভ্রাতৃ ধর্ম পালনে
বনের গহিনে রেখে গিয়েছিলো, একান্তে নির্জনে তখন আমি স্তব্ধ।
ছলনায় আবার বনবাস!আপনি একবার বলে দেখতেন হাসিমুখে স্বীকার করতাম।
ওহে বসুমাতা আপনি প্রকট হোন, আপনার কন্যাকে কোলে তুলে নিন।
আমার যে প্রস্থানের সময় হলো । দুয়ার খুলুন বসুমাতা দুয়ার খুলুন।
রচনাকাল
২৮। ০২। ২০১৭
ইউ এ ই