তার এক হাতে অসংখ্য স্বপ্নের বর্ণিল প্রজাপতি,
অন্য হাতে টুকরো টুকরো অন্ধকার।
অন্ধকারের বিভীষিকার চেয়ে বর্ণিল প্রজাপতি কে না পছন্দ করবে!
অথচ কী আশ্চর্য আমি তার মুঠ খুলে
ভয়ংকর অন্ধকারের ছোট ছোট টুকরোগুলোই
হাত বাড়িয়ে তুলে নিলাম।
আমার জীবনের অন্ধকার আঙিনা ;
যা কিনা তার হাতের অন্ধকারে
আরো বেশী নিকষ কালো হয়ে উঠলো,
আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, সে ;
সে অন্ধকারে তার হাতের বর্ণিল প্রজাপতিগুলো ছেড়ে দিয়ে
উপভোগ করতে লাগলো অন্ধকারে প্রজাপতির প্রানস্পর্শি এক খেলা।
শৈশবে , যখন গ্রামে ছিলাম-
মধ্যরাতে কখনো অমবস্যার অন্ধকারে দেখেছি-
জোনাক পোকার নাচানাচি।
শরীর থেকে আলো ছড়িয়ে জোনাক পোকার খেলা-
এ ছিল আমার কাছে এক বিরাট বিস্ময়!
দিনের আলোয় প্রজাপতির বহুরঙিন পাখা
আমাকে মুগ্ধ করলেও বিস্মিত করেনি কখনো।
কিন্তু আজ আমার বিশ্বাস ও বিস্ময়ের সব সীমানা ভেঙে,
আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করছি-
প্রজাপতিগুলো ঠিক জোনাক পোকার মতো;
তাদের শরীর থেকে মায়াময় এক আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিটি প্রজাপতি ঠিক সে রকম আলো ছড়াচ্ছে,
যে রকম কারুকাজ এঁকে দিয়েছে প্রকৃতি তাদের পাখায়।
গভীর অন্ধকারেও আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি-
তাদের বহুরঙিন নিপুন শৈল্পিক আল্পনা খচিত পাখাগুলো।
বিস্ময় আর বিমুগ্ধতা নিয়ে আমি তার কাছে জানতে চাইলাম-
"আচ্ছা বর্ণিল প্রজাপতির পরিবর্তে,
আমি তোমার হাতের অন্ধকারের টুকরোগুলো তুলে নিতে গেলে-
তুমি কোন আপত্তি করলে না কেন?"
শুভ্র কাধে উড়ে এসে বসা একটি প্রজাপতি
সযত্নে আলতো করে তুলে নিয়ে
স্মিত হেসে আমার হাতে দিয়ে সে বললো-
"তুমি অন্ধকারের টুকরোগুলো তুলে না নিলে
কখনোই এতো ঘন গভীর অন্ধকার
তৈরি হতো না ;আর আমিও
তোমাকে কোনদিন দেখাতে পারতাম না,
অন্ধকারে প্রজাপতির এই অভূতপূর্ব খেলা।"
আমার হাতে থাকা প্রজাপতিটি উড়ে চলে গেলো।
হাত খুলে দেখলাম -
প্রজাপতির শরীর থেকে ঝরে পড়া
কিছু মিহিন আলোকচূর্ণ আমার সারা হাত ভরে আছে।
অবাক বিস্ময়ে বিমূঢ় আমি আমার বহুরঙিন হাতের দিকে
তাকিয়ে থাকলাম নিষ্পলক।
লন্ডন
২৪ নভেম্বর ২০১৪