মাইজদী থেকে রাজধানীর দূরত্ব প্রায় দু'শ কিলোমিটার।
দু'শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে,
সপ্তাহে অন্তত একদিন আমি আসতাম রাজধানীতে;
তোমার সাথে দেখা করার জন্য ।
আমার দৌড় ছিল-তোমাদের বারান্দার সামনের ঐ রাস্তা পর্যন্ত।
বারান্দা থেকে রাস্তার দূরত্ব মাত্র কয়েক গজ,
দু'শ কিলোমিটার পথ সহজে অতিক্রম করতে পারলেও;
কয়েক গজ দূরত্ব আমি অতিক্রম করতে পারিনি কোনদিন,কিছুতেই ।

তুমি থাকতে মনে মনে আমার অপেক্ষায়-বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
আর আমি সে অপেক্ষার পথ ধরে হাটাহাটি করতাম।
আমাকে না দেখলে তুমি অস্হির হয়ে যেতে।
আমি তোমার ঐ অস্হিরতার নাম দিয়েছিলাম ভালবাসা।
সে ভালবাসার প্রতি আমি দিই আমার শূণ্য হাত বাড়িয়ে।
রাস্তা থেকে বারান্দা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি
আমার হাত কোনদিন , কোনভাবেই ।

তোমার আকর্ষনে আমার মন চাইতো
সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে বারান্দার সামনের ঐ রাস্তায়;
শুধু তোমাকে এক পলক দেখার জন্য।
তুমি নিঃশব্দে , কখনো কখনো ইশারায়
অনেক কথা বলতে।
আমি নিঃশব্দ সব কথার অর্থ বুঝে নিতাম,
এবং ঠিক ঠিক উত্তর দিতাম ।
কি আশ্চর্য ,তুমিও অনায়াসে বুঝে যেতে
আমার নিঃশব্দ সব কথার সারার্থ।
হৃদয়ের কথা বুঝতে কিংবা বুঝাতে
উচ্চারনের কোন প্রয়োজন অনুভব করিনি আমরা ।
হৃদয়ের কথাগুলো ছিল প্যাচগোছহীন সরল।
হৃদয়ের কথা মানে- ভালবাসার কথা,
আমাদের ভালবাসার কথায় কোন জটিলতা ছিলনা ।

কখনো কখনো তোমাদের ঝুলানো বারান্দায় একটি পাখি এসে বসে,
মুহূর্তে আমার মন চায় পাখি হয়ে যেতে ।
তোমাদের বারান্দায় এক টুকরো রোদ এসে
দারুন আরামে স্পর্শ করে তোমার গ্রীবাদেশ,
মুহূর্তে আমার মন চায় রোদ হয়ে যেতে ।
তোমাদের বারান্দায় এক লহমা বাতাস এসে তোমার চুল ছুঁয়ে যায়,
মুহূর্তে আমার মন চায় বাতাস হতে ।

কারো একজনের তাড়া খেয়ে
তুমি ঘরে ফরে যাও।
পাখি , রোদ কিংবা বাতাস ;
আমার কোনকিছুই আর হয়ে উঠা হয়না।
বেশী রাত হলে ট্রেন পাবো না,
এই আশংকায়-
আমি পথ ধরি মফস্বলের পথে ।

প্যারিস
০৭ জুন ২০০৮