অন্ধকারে লুকাই আমি
আঁধারে আশ্রয়,
আঁধার থেকে আলোয় এলে
আমার যতো ভয়।

যেই না আসি আলোর নীচে
সবাই দেখে মেকাপ করা রঙ,
ফিসফিসিয়ে বলে পিছে
দ্যাখো- সেজেছে কী সঙ!

একটু খানি আলো দিলে
কী যে ক্ষতি হতো,
কালো কন্যা নিয়ে সবাই
কতো মর্মাহত!

নিপা'র চেয়ে বয়স আমার
বছর পাঁচেক বেশী,
গায়ের রঙটা সাদা হওয়ায়,
কতো যে তার খুশী।

আমার মুখে দেখলে হাসি
সবাই কেমন রাগ,
"কালা মাইয়ার ডঙ কতো!
যা,এখান থেকে ভাগ।"

স্কুলেতে অ্যাসেম্বলীতে ফর্সারা
ডাক পায়,
যেতে চাইলে বলতো সবাই-
'অন্য একদিন আয়'।

ঘরের কাজে হাত পিছলে
ভাঙতো যদি কিছু,
সারাটাদিন থাকতে হতো
মাথা ক'রে নীচু।

ধমক দিয়ে বলতো দাদী:
"অলক্ষুনে কাল, আর একটা কিছু
ভাঙ্গিস যদি-
দেখিস কি করি তোর হাল"।

নিপার হাতে ভাঙলে কিছু
সবার কতো খেয়াল,
দেখিতো হাত কাটলো কিনা,
হয়েছে কিনা লাল!

এমন অযুত নিযুত কষ্ট
রয়েছে আমার বুকে,
কেউ জানে না কত যে রাত
কেটেছে গভীর শোকে!

বান্ধবীরা খেলতে যেতো
আমার হাতে বই,
বাবা চাইতেন মেধার জোরে
বিয়েটা পার হই।

কালো বলে কেউ আসে না
নিতে আমায় ঘরে,
এখন বুঝি কষ্টটা কী,
কালোরা ক্যান আত্মহনন করে!

দেখতে এলো আমায় ছেলে
নিপা ছিলো সাথে,
যাওয়ার বেলায় ছেলে জানায়
নেই মত তাহার এতে।

এমন ক'রে এক কুড়ি বার
সঙ সেজেছি আমি,
গায়ের রঙটা এই সমাজে
কতো বেশী দামী!

এমনি কালো তাহার উপর
কুঁকড়া আমার চুল,
কে আর আমায় নেবে ঘরে
করবে এমন ভুল!

সখীরা সব একে একে
সাজে নতুন বধু,
শনের ঘরের খুঁটি হয়ে
আমি-ই থাকি শুধু।

বুঝবি না মা এই মেয়েটার
কষ্ট ভরা বুক,
একটু খানি সাদা বলে
তোদের কতো সুখ!

স্বামী তাহার এতো সাদা
মেয়েটা কেনো কালো,
ননদ ননশ এ নিয়ে মা'কে
কত কী যে শোনালো!

আমি বুঝি আমায় নিয়ে
মায়ের যতো ভয়,
যৌবনের এই পর্ব শেষে
বিয়ে যদি না হয়!

তাই আমাকে বলা হতো-
"বোরকা পরে চল,
সকাল বিকাল মুখের ওপর
কাঁচা হলুদ ডল"।

এমনি কালো তাহার ওপর
মুখ ভরতি দাগ,
মা খালারা সবাই বলে
বেশী বেশী স্নো পাউডার মাখ।

আতুঁড় ঘরে দেখলে যখন
মেয়েটা তোমার কালো,
বললে না ক্যান- চাই না আমি
মুখেতে বিষ ঢালো।

এই সমাজটা আমার চেয়ে
চিনতে মাগো বেশী,
কেন তুমি বাড়তে দিলে
এমন সর্বনাশী?

মরতে শুনি ডাস্টবিনে
মানব শিশু কতো,
আমায় তুমি ছুড়ে দিলে
কী আর ক্ষতি হতো!

খোদায় বলি: হে রহমান
কতো তোমার জ্যোতি,
এই কালীকে একটু দিলে
কিসে হতো ক্ষতি!

একটুখানি মানুষ হতাম
পেতাম একটু মান,
কালো বলে আর পারি না
সইতে অপমান!

একদিন ষাট বছরের বুড়ো এলো, আমার চৌত্রিশ,
বিদায় বেলায় মা কেঁদে কন-
" মারে, মারুক কাটুক যাহাই করুক
আঁকড়ে পড়ে থাকিস"।


রচনাকাল:
লন্ডন
১১ মার্চ ২০১৮