যদি প্রশ্ন করো আমার উৎস কোথায়,
নিতান্তই কৌতূহলে যদি করো
আমার অস্তিত্বের অনুসন্ধান,
আমি সগৌরবে বলে দেবে
আমি এইখানে ছিলাম, আমি এইখানে আছি;
আমি এ বাংলার-ই সন্তান।

যদি আমাকে জর্জরিত করো অনাকাঙ্খিত প্রশ্নবানে, যদি জানতে চাও আমার জন্মের দু'একটি প্রমান,
আমি সগর্বে বলে দেবো-
আমার শরীরের রক্তের গন্ধ পরখ করে দেখো,
আমি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের
সংগ্রামী অবদান।

তোমাদের অসংখ্য জিজ্ঞাসা, রাশি রাশি কৌতূহলি দৃষ্টি। তোমরা জানতে চাও-
এ মিশ্র আকৃতি আসলে আসলো কোথা' থেকে? যদি করো তার উৎসের অনুসন্ধান!
আমি বিলক্ষণ বিলম্ব না ক'রে বলে দেবো:
চার হাজার বছর আগেকার দ্রাবিড়দের নাম কি শুনোনি তোমরা?
আমি সেই দ্রাবিড়দের সন্তান।

জানি আমার এ গাত্রবর্ণে তোমাদের যাবতীয় জিজ্ঞাসার তীর।
যদি প্রশ্ন করো কি ক'রে আমি এমন হলাম , কী আমার উৎসস্থান?
আমি নির্দ্বিধায় বলে দেবো: তোমরা কি গাঙেয় সমতল ভূমির গুপ্তদের কাহিনী শুনোনি? আমি তাহাদের উত্তরসূরি, আমি এ বংগভূমির হাজার বছরের ইতিহাসের উজ্জ্বল প্রমান;
আমি গুপ্তদের সন্তান।

আমার ঋজু দেহ, কালো চুল, কালো চকচকে চোখের মনি কিংবা তামাটে শরীর দেখে যদি করতে চাও অস্তিত্বের অনুসন্ধান,
আমার নি:সঙ্কোচে বলে দেবো:
আমাকে বরন ক'রে তোমরা ধন্য হও,
আমি তোমাদের বর্ণাঢ্য গৌরবগাঁথা;
আমি পাল ও সেনদের সন্তান।

আমার এ শংকর অবয়ব দেখে যদি প্রশ্ন করো আমি কোথা থেকে উঠে এলাম? আমি বলবো: আমি মহাকালের সাক্ষী,
আমি দ্বাদশ শতকের সূফীদের সন্তান।

যদি প্রশ্ন করো আমার এ রক্তে কেন
সহসা বিপ্লবের গান?
আমি সদম্ভে বলবো রামমোহন আর ঈশ্বরচন্দ্রের জাগরণের বাণী প্রবাহিত আমার প্রতিটি রক্ত কনিকায়, আমি সিরাজউদ্দৌলার উত্তরসূরি,
আমাকে অবহেলা করো না,
আমি-ই তোমাদের বিপ্লবী ক্ষুদিরাম।

যদি প্রশ্ন করো আমার উৎস কোথায়,
যদি করো আমার অস্তিত্বের অনুসন্ধান,
আমি বলবো গীতাঞ্জলি কিংবা সঞ্চিতা,সঞ্চয়িতায় আমাকে খুঁজে দেখো,
আমি রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা কিংবা কাজী নজরুলের  অগ্নিবীনার সুর কলতান।
আমি ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বারদের সুযোগ্য উত্তরসূরি ,
ব্রহ্মপুত্রের তেজস্বী প্রস্রবিনী আমার ধমনীতে,
এই বঙ্গীয় ব-দ্বীপে আমার জন্ম সহস্র বছর আগে,
আমি এ বাংলায় ছিলাম, আমি এ বাংলায় আছি; আমি এ বাংলারই সন্তান।

রচনাকাল:
লন্ডন
২১ মার্চ ২০১৮