নন্দগ্রামের নন্দদুলাল লোকটি বড়ো ভালো,
দোষের মধ্যে একদিন সে গোবর মারালো৷
তাই না দেখে গাঁয়ের পিসি চোখটি করে লাল,
লোক জুটিয়ে তাকে অনেক দিতে এলো গাল৷
বলল তেড়ে, " নন্দু, তোর বুদ্ধি হবে কবে?"
"গোবর ছুঁলে সংসার তোর রসাতলে যাবে"
নন্দু এমন বিপদ বুঝে নত করে মাথা,
বলল, " পিসি আর হবে না, দিলাম তোমায় কথা"৷
এই কথা শুনে বুড়ি পিসির মনটা হল শান্ত,
ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে তিনি হলেন শেষে ক্ষান্ত৷
স্নানটি সেরে শুদ্ধ হয়ে সে এলো পিসির কাছে,
বলল " পিসি তোমার সঙ্গে দুটো মনের কথা আছে"৷
দাওয়ার ওপর চাটাই পেতে বসলো পিসি এসে,
ভাবলো বুঝি নন্দুবেটা সব বুঝেছে শেষে৷
মুড়িবাটি হাতে নিয়ে বলল " পিসি শোনো,
গোবরের মাহাত্ম্য তুমি শোনোনি কখনো৷
শুনলে তুমি এমন করে ভাবতে নাকো আর
গোবর খেলেই সারছে অসুখ, হচ্ছে উপকার৷"
এমন কথায় পিসির চক্ষু হল চড়কগাছ!
পিসির মেয়ে খেন্তি এসে জুরলো যে ফ্যাঁচফ্যাঁছ৷
বলল পিসি, " এমন কথা শুনিনি এর আগে,
কেন আমার পিত্তি জ্বালাস, ফোটাস এতো রাগে?
গোবর ছুঁলে কিই বা হবে? তোর মাথায় গোবরপোড়া,
দামালদের পাল্লায় পড়েই আওড়াচ্ছিস এই ছড়া৷
সময় থাকতে শুধরে যা, নইলে পড়তে হবে গর্তে,
অসুখ হলে ওষুধ খাবি বিনা দ্বন্দ্ব শর্তে৷
দেশে আছে রাজা-উজির, করবেন অনেক উক্তি,
শুনতে হবে তাঁদের কথা, উড়িয়ে দিয়ে যুক্তি?
বিচারবুদ্ধি শানিয়ে নেওয়ার হয়েছে এখন সময়,
তোরাই যদি এমন বলিস, তবে তো আসবে অবক্ষয়!
আমার কথা মেনে নিবি, যদি বুদ্ধিমান হোস
আশাকরি তাঁদের মতো তুই গোবরগণেশ নোস"...
এসব কথায় নন্দু তখন ফিরে পেল হুঁস,
যুক্তিগুলো সাজিয়ে নিয়ে হল যে দিল খুস৷
নন্দু বলে " সিদ্ধিদাতা মাথায় আছেন, হবে না আর ভুল,
তোমার নন্দু চালাক এখন, চিন্তা নেই বিলকুল ৷
তবে পিসি তোমায় আমি একটা কথা বলি
শুচিবাইয়ের রোগটা তোমার দাও গো জলাঞ্জলি৷
এই রোগেরও ওষুধ আছে, সেটাও আমি জানি,
চাও যদি এই ছুটে যাবো, আনবো এক্ষুনি৷ "
এই না শুনে পিসি এমন রেগে আগুন হল,
নন্দু তখন পালিয়ে বাঁচার পথ খুঁজে না পেল৷৷