মেঘবালিকা,

কোন সম্বোধনে তোমাকে ডাকলাম না। তোমাকে ডাকতে আমার কোন সম্বোধনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ভালোবাসি কিংবা ঘৃনা করি এজাতীয় কোন সম্পর্ক আমাদের হয়ত ছিল না। আমাদের একটা গল্প ছিলো, একসাথে বেড়ে ওঠার গল্প। এক আনন্দে নেচে ওঠার গল্প। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে দূর মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ানো স্বাধীনতার গল্প। তাই তোমার নাম দিয়েছিলাম মেঘবালিকা। আর, সেজন্যই তুমি আজ অনেক দূরে, প্রচন্ড অবিশ্বাস নিয়ে ভেসে গেছো নীলিমার ওপারে, দৃষ্টি সীমানার বাইরে। কিন্তু মনের গভীরে যে ঝড় তুলেছো, তাকি থামবে কখনো, কিংবা; থামানো যাবে?  

বারে বারে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, ফেলে আসা অতীতের সুখানুভূতিতে। যখন অনেক না পাওয়ার ভীড়েও প্রত্যাশা আর স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্খা আমাকে বুদ করে রাখত। কিন্তু আজ এক চরম হতাশার কাল আমাকে প্রতি নিয়ত গ্রাস করছে। আমি জানি না কেন? কিন্তু করছে। আমার আজ অনেক কিছু আছে। যার প্রত্যাশা ছিলো, যেমনটি চেয়েছিলাম।
আমার যেটা নেই, সেটা লক্ষ্য। মানুষের জীবনে আসলে লক্ষ্য থাকে না। লক্ষ্য বড় অস্থির। সে আমাদের ধোকা দেয়। আমাদের ভবিষ্যত যে নিশ্চিত মৃত্যু, সেটা যেনেও মানুষ অলীক স্বপ্ন বিলাসী। অর্থ, কামনা, ক্ষমতা আর সুখের খোজ;  মানুষকে ভাবনার জালে আচ্ছন্ন করে। আমিও হয়ত এমন এক জালে আটকা পড়েছি। কি চাই তাই আমরা জানি না।
মুখ বই এর কল্যানে তোমার পারিবারিক ছবিগুলো দেখি। সমুদ্রের ওপারে তোমরা ভালোই আছো। বরফের দেশে গিয়ে তোমার গৌড় বাঙ্গালি সৌন্দর্য্যে ফ্যাকাশে ফর্সা ছাপ এসেছে। চুলগুলো আরো প্যাচানো আর নাকের ডগায় রিমলেস চশমা। বয়স বাড়ার বদলে তোমার সুখি চেহারার হাসিখানা আরো চওড়া হয়েছে। মধ্যবিত্ত ভেতো বাঙ্গালির মতন মেদ বাড়েনি একটুও।

কিন্তু আমি! প্রত্যাশার চাপে জর্জরিত এক নিশ্চল পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ঠায় আগের জায়গায়। আমার বুকে আগের মত আর ঝর্ণার কলতান নেই, বহুদিন মেঘ হয়ে ঝরে যায়না স্বপ্নময় বাদলের ধারা। অগ্ন্যুৎপাতের অপেক্ষায় উত্তপ্ত ধূসর আমার বুক।
জানি না আবার কবে দেখা হবে? তবে ওক গাছের শহরে আমার এই চিঠিখানা পৌছে গেলে আমার শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যাক তোমার কাছে এই কামনাই করছি। যদিও চিঠিখানা একেবারে অবাঞ্চিত ও অনাকাঙ্খিত তোমার জীবনে, তবুও অপেক্ষায় থাকবো উত্তরের।  

ভালোবাসা নিও।
তোমার হিমালয়