আমি অবিশ্বাসী নই, বিশ্বাস করি
এক পশলা বৃষ্টির পর রংধনু
গ্রীস্মে বামার নৃত্য,বৈশাখের দাপাদাপি
বর্ষার যৌবনে পদ্মার বুকের উত্তাল ঢেউ,
তীর ভাঙার অবিরাম শব্দ,শুভ্র ফেনা রাশি,
অসহায় মানুষের আর্তনাদ,শিশুর ক্রন্দন ধ্বনি,
শুষ্ক মাতৃস্তনে অশ্রুসজল মা, বিশ্বাস করি

আমি অবিশ্বাসী নই,বিশ্বাস করি
সিডর আয়লায় আহত হাজারো মুখচ্ছবি,
উপকূলের কূল ঘেঁষে লাশের মিছিল,
অনাহারী মানুষের চিৎকার কান্না,
গগনবিদারী শোকধ্বনী,যা কেউ শুনে নি।
একমাত্র শিশু,নয়নের পুত্তলি, নাড়িছেড়া ধনের
একমুঠো খাবার,আশ্রয়- পানির জন্য,
তোমাদের ট্যাপের পাশে,চালের গুদামে,
সরাইখানায়,গাছের ছায়ায়,নির্জন রাস্তায়
অসহায় মায়ের পতিতাবৃত্তি, বিশ্বাস করি

আাম অবিশ্বাসী নই,বিশ্বাস করি
তোমার মর্মর পাথুরে-প্রাসাদে অলক্ষিতিলক;
আমার ভাগ্যরেখার বাঁকা দাগে নয়,
বিরহ-মিলন কষ্ট-ব্যথার প্রতিফলনে,আমি;
আমার সুখ সকল দৃষ্টি,আমার ভাগ্য- আমিই নিয়তি।
ভোরের শিশির পাখির মুক্ত কোলাহল
মধ্যাহ্নের দীপ্ত অরুন,গোধূলীর ধুলাহল
চাঁদোয়া আলোয় প্রিয়ার অধর চুম্বন
অমাবস্যার আঁধারে সোডিয়ামের ঝলকানি
শীতের শিশির,শরতের ঘাসফুল, বিশ্বাস করি

আমি অবিশ্বাসী নই,বিশ্বাস করি
মসজিদ মন্দির গির্জা সিনেগগ নয়
কোন নক্শাকারী,পতনকারী,অত্যাচারীকে নয়,
কোন নেতা,বিজেতা,ঈশ্বর-বাহিনীকে নয়,
কোন হিংস্র জানোয়ার,অশান্ত পায়রাকে নয়,
কোন রহস্যময় প্রথা,বিশ্বাসকে নয়...
আমি বিশ্বাস করি উলঙ্গ শিশুকে
পলিমাটির ঘ্রানকে,অনর্থক বৈচিত্রময়
একপশলা ঝিলিককে,গাঁধা ফুলের গন্ধকে,
কারো করুনায় আমি নই,কোন করুনাময়কে নয়,
আমি বিশ্বাস করি ঝিনুকের হৃদয়ে বিষরসে সৃষ্ট
এক রত্তি স্বচ্ছ মুক্ত। আমি বিশ্বাস করি
অনর্থক জীবনে নিরর্থক পথ চলার মাঝে ব্যথার
সার্থক আঘাত; আঘাত উত্থিত অমূল্য রতন মাঝে
অবিনাশী সুখের নিরন্তর সন্ধান।

ভাবী-মন্দির
২৭, অক্টোবর, ২০১১