আপনারা তো মস্ত বড় মাপের মানুষ,
জানেন তো?
আমার কোন বন্ধু নেই;
সভ্যতার বন্ধু;
চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিম্বা মহাজন ;
উচু দালানবাড়ির তুলার কেদারায় বসা কোন বাবুও না।
আমি বেশ অসভ্যই বটে,
নয়তো,
কাল বিকালেও কেন নিরীহ নরসুন্দর এর সাথে সখ্যতা গড়বে?
মৃতপ্রায় শব্দগুলো ঠোঁটের কিনারায় জমাবে?
কেন সে সহসা আগত প্রতিক মূর্তির সাথে বাক্যালাপে জড়াবে?
প্রাণ খুলে সুখ-দুঃখের কথা বলবে?
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বুলি গুলিকে সজীবতায় প্রাণবন্ত করে তুলতে উৎসাহে লিপ্ত হবে?
থাকুন,
আপনারা আপনাদের সভ্যতা নিয়ে।
আমি ঐ কালির ঘাটে চায়ের দোকানে পেটেভাতে কাজ করা ছেলেটিকে সম্মতিদান করেছি,
তার প্রাণে যত্রতত্রভাবে ছড়ানো ছিটানো কথাগুলো বেলা শেষে হলেও শুনবো।
আপনাদের সভ্যতায় আমার বেশ অনীহা;
কেনই বা হবে না বলুন?
সভ্যতার নৈপুণ্যতা যদি হিংস্রতাকে অতিক্রম করে;
তবে!
মাত্র হাত চারেক এগিয়ে দাঁড়ানোয়,
রিক্সাওয়ালাকে কেমন করে অকথ্য ভাষার আবৃত্তিটি শুনালেন;
বাহ্!
সত্যি কথা বলতে কি;
এতটা বকুনির প্রাপ্য সে ছিলনা।
আমি বলেছি,
আমি বলেছি কোন এক অবসন্ন বিকেলে তোর গল্পগুলো শুনবো।
এরপর,
এরপর এমন মায়া হাসির জালে আমায় জড়ালো,
বাঁধনে বাঁধলো,
আমি কেমন করে অস্বীকার করবো বলেন তো?
কালিটা একটুখানি কম পড়েছিল বলে মুচিকে কেমন করে শাসালেন,
আপনার তুলনা হয় না।
এত দেমাগের জোর যখন তখন এখানে কেন?
অমুক তমুকের পা চাটার অভ্যাস গড়েছেন;
সভ্যতার ফাঁকফোকড়ে কয়টা পয়সা গুজে দিয়ে একটা চাকুরী জুটিয়েছেন;
বসে থাকুন বা শুয়ে থাকুন নিশ্চিন্তের কোন যন্ত্রণা নেই;
তাই, এখন আর সহ্য হয় না।
না?
আচ্ছা বলুন তো দেকিন,
সভ্যতাটি বুঝতে শিখবে কবে?
মানুষ হবে কবে?
থাকুন,
আপনারা আপনাদের সভ্যতা নিয়ে।
আমি ঐ ব্যথাতুর নখ দন্তের রাক্ষুসে চিহ্ন বহনকারী নিগৃহীতার কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি,
সংগ্রামের সাথি হবো।
আমি ঐ বিরহবিধুর বঞ্চিতার সহিত জবান ঠিক করেছি,
অসময়ের সুখকর নক্ষত্র হবো।
আমি ঐ শয্যায় শায়িত স্বজনহারা বৃদ্ধাকে কথা দিয়েছি,
ক্লান্তিতে উচ্ছ্বাস হবো।
আমি ঐ অবহেলিত বৃদ্ধর নিকট ওয়াদা করেছি,
নিশিকালো আঁধারে আলো ছড়াবো।
থাকুন,
আপনারা আপনাদের সভ্যতা নিয়ে।
অশালীন, অশুদ্ধ, কুরুচিপূর্ণ, নোংরা, দূষিত, রোগগ্রস্ত বজ্জাতির সভ্যতা নামক অসভ্যতা নিয়ে।
ডেইলি বাহাদুর/জুন ২৮, ২০২০
এ যুগের রুদ্রাক্ষ, বরানগর, কলকাতা/২৯ জুন, ২০২০
বিষাক্ত ভাবনা/ISBN: 978-984-35-6430-6