কৃপণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি ভিক্ষা করে ফিরতেছিলেম
গ্রামের পথে পথে,
তুমি তখন চলেছিলে
তোমার স্বর্ণরথে।
অপূর্ব এক স্বপ্ন-সম
লাগতেছিল চক্ষে মম--
কী বিচিত্র শোভা তোমার,
কী বিচিত্র সাজ।
আমি মনে ভাবেতেছিলেম,
এ কোন্ মহারাজ।
আজি শুভক্ষণে রাত পোহালো
ভেবেছিলেম তবে,
আজ আমারে দ্বারে দ্বারে
ফিরতে নাহি হবে।
বাহির হতে নাহি হতে
কাহার দেখা পেলেম পথে,
চলিতে রথ ধনধান্য
ছড়াবে দুই ধারে--
মুঠা মুঠা কুড়িয়ে নেব,
নেব ভারে ভারে।
দেখি সহসা রথ থেমে গেল
আমার কাছে এসে,
আমার মুখপানে চেয়ে
নামলে তুমি হেসে।
দেখে মুখের প্রসন্নতা
জুড়িয়ে গেল সকল ব্যথা,
হেনকালে কিসের লাগি
তুমি অকস্মাৎ
"আমায় কিছু দাও গো' বলে
বাড়িয়ে দিলে হাত।
মরি, এ কী কথা রাজাধিরাজ,
"আমায় দাও গো কিছু'!
শুনে ক্ষণকালের তরে
রইনু মাথা-নিচু।
তোমার কী-বা অভাব আছে
ভিখারী ভিক্ষুকের কাছে।
এ কেবল কৌতুকের বশে
আমায় প্রবঞ্চনা।
ঝুলি হতে দিলেম তুলে
একটি ছোটো কণা।
যবে পাত্রখানি ঘরে এনে
উজাড় করি-- এ কী!
ভিক্ষামাঝে একটি ছোটো
সোনার কণা দেখি।
দিলেম যা রাজ-ভিখারীরে
স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে,
তখন কাঁদি চোখের জলে
দুটি নয়ন ভরে--
তোমায় কেন দিই নি আমার
সকল শূন্য করে।