পৃথিবীর হৃদয় জুড়ে জঞ্জাল
স্তুপীকৃত কতকাল।
করোনা করে চলেছে ভস্মীভূত-
এক এক করে।
ভেঙ্গে পড়ছে পুব-পশ্চিমের
সব, সব অচলায়তন।
সেই পুড়ে যাওয়া আলোতে
কত কিছুই না প্রতিভাত হয়।
আজ সবথেকে বেশি দেখি নিজেকে,
নিজের ভেতরটাকে।
আরো দেখি, রোনালদো-মেসির মূল্য-
চকচকে কাগজে মোড়া লজেন্সের চেয়েও কম।
দেখি, তেরেসা-নাইটিঙ্গেলরা সবযুগেই অমূল্য।
দেখি, আমাজনের হৃদয়ের ঘাতক বনিকদের;
টাকা পুড়িয়েও যাদের ফুসফুসে-
আজ বাতাস ভরেনা আর।
দেখি, কোন অদেখা ইয়েমেনি শিশুর কান্না,
কিংবা আয়লানের নিথর দেহটা;
একদিন যা দেখেও দেখা হয়নি।
আজ তারই সীমাহীন ভরের আঘাতে-
দুমড়ে-মুচড়ে যায় পাশ্চাত্যের সব রুদ্ধদ্বার।
দেখি, এতকাল ধরে অভুক্তের অশ্রু সঞ্চিত হয়ে-
টাকার কুমিরগুলোর শেষ বাতাসটুকু শুষে নেয়।
ওরা ভেবেছিলো ডলার থাকলেই-
পৃথিবীর সকল সম্পদ গ্রাস করা যায় অকপটে।
ওরা জানেনা, উপার্জন মানেই অধিকার নয়।
যে উপার্জন করেনি, তার কেবল পথটিই জানা নেই।
কিন্তু সেও এই ধরিত্রীর উত্তরাধিকার,
এমনকি ঐ শালিক কিংবা চড়ুইগুলোও।
আরো দেখি, সুইসব্যাংকে টাকা রেখে-
নিউইয়র্ককে যারা নিরাপদ ভেবেছিল,
করোনা এসেছে আজ সেই পথ ধরে;
না, এবার আর আফ্রিকাকে আগে শশ্মান করে নয়।
মৃত্যুর আগে এত সমতা, এত সাম্য দেখবো ভাবিনি।
ভাবিনি, উদ্ধতরা মাথা নোয়াবে কখনো।
যাকে দেখিনি, সেই করোনা,
পৃথিবীর শেষ ঘূর্ণনের আগে,
করে গেল সব বক্রতার সমাধান।
আরো দেখি, নিভৃতচারী মেধাবী-
আর কর্মীদের প্রতি আমাদের চিরায়ত অবজ্ঞা;
আজকের যুদ্ধেতো তারাই অগ্রসৈনিক।
দেখি, আস্ফালন করা ভণ্ড-
দেশপ্রেমিকের প্রতি নতজানু মনোভাব;
এই দুর্দিনেও তারা লুটে চলে আমাদের।
এ সবই ছিল ক্ষমার অযোগ্য ভুল।
সেই পুড়ে যাওয়া আলোতে আরো দেখি,
এথিক্স ছাড়াও অর্থনীতি হয়, হয় উন্নয়ন,
তবে মানুষ হয়না।
দেখি, মুখাপেক্ষিতা একটি বিভ্রমের নাম,
এটি জন্ম দেয় আজন্ম অভিশাপের।
নিঃশেষ করে দেয় মানুষকে।
মানুষ হয়ে ওঠেনা আর মানুষ।
তাই, পৃথিবী হোক করোনামুক্ত,
তবে আগের মত নয়,
আগের পৃথিবী আবার এলে
সেই পুরোনো করোনারই ভয়।
রাত ১১ টা ৩৯
এপ্রিল ১২, ২০২০
সিলেট।