আমি বাঁচিয়া রইবো—৪৮
- এম ডি সবুজ
যাঁহারা আমারে নিয়ে করিয়াছে ভাগাভাগি
তাঁহাদের মাঝে আমার বিশ্বাস নাহি রচি।
আমারও মাঝে মাখে বিষন্নতা
কেউ কি আমারে দেখিয়াছে দু'নয়ন ভরিয়া?
মায়ার নক্ষত্র দেখিয়া।
আমি ঝরিয়া পড়িবো শুকনো পাতার মত
মাটিতে নয়ন রাখিয়া কুড়াইবে যাঁহারা অন্তরে_
তাঁহাদের মন নরম ঘাসের মত
সবুজ রঙের মত, হলুদ পাখির মত।
আমারে ভুলিয়া যাঁহারা নয়ন রেখেছে অন্য ঘরে
তাঁহারা শিউলি ফুল ফেলে দেয়, নয়ন ফিরিয়ে
তাঁহাদের মাঝে আমি অবহেলিত, নক্ষত্র দূরে
নিঃসঙ্গ পেঁচার মত, বটবৃক্ষের কোনো ঢালে শুয়ে।
আমি গ্রাম হয়ে রয়েছি গ্রামের মাঝে
ফুল, পাখি, ঘাস, পেঁচা, বৃক্ষ, প্রেমিক হয়ে।
আমারে যাঁহারা ভাগাভাগি করিয়া নেয় হাজারি_
তাল গাছের মত, নারিকেল, আম গাছের মত করে,
আমি তাঁহাদের মাঝে বিশ্বাস নাহি রচি
আমি বাতাসে মিশে আছি সবার মাঝে
যাঁহারা বকুল ফুল ভালোবাসে, আমাকেও
নক্ষত্রের, আকাশের, বৃষ্টির, চাঁদের মাঝে
আমি সারা জীবন বাঁচিয়া রইবো, গ্রাম্য রূপে।
সোনার ধান—
গ্রাম্য উঠোনে-উঠোনে ছড়ানো-ছিটানো সোনার ধান
গ্রাম্য বধু-রমনীর পায়ে-পায়ে নূপুরের তালে-তালে
ধানের বাজনা বাজে; সাজে; নববধু অন্য গাঁয়ে;
কেউ ধান ঝাড়ে, কেউ ধান সিদ্ধ করে খেজুর গাছের নিচে।
নাজুর ডাকে সাজু আসে মাথায় করে ধান
উঠোনে-উঠোনে ছিটিয়ে দিল, ধানের কাঁড়ি বান।
হাওয়ায়-হাওয়ায় বেসে আসে রেহেনার মুখে গান
দক্ষিন কোনে মেঘ ধরেছে হাউড়া ধরে টান!
সিমুর হাতে ঝাড়ু নাচে, মেঘ চলে যা ঘাটে
উঠোনেতে ধান দিয়েছে বাড়ির সবাই বাটে।
মজিব ডাকে মেঘ ধরেছে! বৃষ্টি আয়রে ঝেপে!
শাহিন, শাহনাজ, তিন্নি মিলে পানিতে দিল চেপে!
সোনার ধান শুঁকাতে কত কষ্ট দিল মারে!
রশিদার মায়ের ঘাড় বেঁকে যায় সোনার ধানের ভারে।
হাওয়া কাঁদে, আকাশ ডাকে, উঠোনেতে ধান
খোঁদা তুমি বৃষ্টি দিওনা, মেঘের মায়েরে দিব পান।
সূর্য হাসে, মাটি তাপে, রৌদ্র ত্রাসে-ত্রাসে
মেঘেরা সব দূর আকাশে ঘুরছে পাহাড় ঘেঁষে।
সোনার ধান শুঁকিয়ে গেলো রোদ্র মেখে-মেখে
সবার মুখে হাসি ফুটে মনের সুখে-সুখে।
নিঃশ্বাসে গ্রামের ঘ্রাণ—
গ্রামের সুখ শান্তি নরম বাতাসে নিঃশ্বাস নেই,
আমি ভুলে আছি ক্লান্তির লাল জঞ্জাল—বিভীষিকা,
আকাশে তাকিয়ে নিঃশ্বাস সাদা মেঘে মেঘে ভাসে
সবুজ ঘাসের রংধনু চোখে সুখ মাখে আঁকা বাঁকা।
গ্রাম্য আকাশের সাথে সম্পর্কটা খুব গভীর
দিনের সূর্য রাতের চাঁদ আমাকে দেখে মিষ্টি হাসে,
আমি গ্রামের পুষ্প কাননে বসে বসে_
স্বর্গের কথা ভাবি, কত সুখ গ্রামের মত করে?
বাতাসে মিশে থাকা পুষ্প ঘ্রাণ চুষে নেই
গ্রামের ঘ্রাণও লেগে আছে নিঃশ্বাসে।
কয়েক টুকরো আলো চোখে মেখে
গ্রামের রূপ দেখে যেতে চাই হাজার বছর ধরে।
বছরের পর বছর গ্রামের ঘ্রাণ নিতে চাই নিঃশ্বাসে
মাটিতে, ঘাসে, চুমু দিয়ে, নিঃশ্বাসে বাতাস মিশে।
গ্রামের বটবৃক্ষের সাথে আমি পাখি হয়ে রয়েছি
সবুজ পাতার বাতাস নিঃশ্বাসে, গ্রামে রয়েছি বাঁচি।
ভোরের রূপ—
পূর্ব গগণে উঠেছে রবি
ফুঠেছে ফুলের কলি_
বনের পক্ষিরা হাসিয়া বলে
ডাকিবো আজ আমি।
তোমরা মানুষ উঠিবে ভোরে
দেখিবে ভোরের রবি,
তোমাদের তরে, তোমাদের সাথে
রাখিবে মোদের যতনে সবি।
ভোরে ভোরে ডাকে পাখি
দেখ আজ মেলিয়া আঁখি।
এত সুন্দর ধরনীর তরে
রূপ রূপ অপরূপ ঝরে।
যেখানে দেখিবে চেয়ে, রূপ সেজে
গ্রাম রয়েছে সাজ, ধরনীর মাঝে।
একটু আঁখি মেলিয়া দেখ,
দেখিবে সবুজ গাছ, ঘাস, পাখি
গ্রামের চরণে মেলিয়া আঁখি।
আজ ভোরে উঠিয়াছি লাল সূর্য মেখে
পাখিদের গানে মুখোরিত ভোর
আমি মুগ্ধ এত রূপ দেখে।
শীত সকালের রূপ—
আমার ঘুম-ঘুম চোখে, ভোরের কুয়াশা মেখে
আমি একেলা হেঁটে গ্রামের পথে-পথে_
কুয়াশা মাখা ঘাসে পা ভিজিয়ে, ভুলে যাই ক্লান্তি।
কচুরিপানার দু'টি ফুল হাতে নিয়ে চোখে মেখে
তখনও চার দিকে কুয়াশা ঢাকা আমার শরীরে_
উষ্ণ বাতাস এসে শীতের ছোঁয়া দিয়ে যায় হঠাৎ!
সবুজ পাতা থেকে ফোঁটা-ফোঁটা জল পড়ছে
তরুণ ফুল মৃদু হেসে আমার চোখে রয়েছে চেয়ে;
রং মাখা চোখ—সবুজ মুখে।
গ্রামের পথে হেঁটে-হেঁটে, ক্লান্তি যাই ভুলে,
গ্রামের স্বাদ ছুঁয়ে, সবুজ ঘাসের পথে সিন্ধু রূপ
আমারও নয়নে-হৃদয়ে যতনে রয়েছে কোলে।
পূর্ব গগনে হলুদ হয়ে উঠেছে ভোরের রবি
কুয়াশার ফোঁটা ঘাসের সাথে আঁকে রূপ ছবি।
আমার নয়নে চেয়ে থাকা ঘাস ফুল হলদে হাসে
গ্রাম্য রূপ মাখামাখি, গ্রাম্য রূপে রয়েছি মিশে।
গ্রাম্য রূপে ডুব দিতে চাই—
গ্রাম্য রূপে ডুব দিতে চাই; হাজার বছর ধরে!
ঘাস বিছানা জড়িয়ে আছে মাটি ছুঁয়ে-ছুঁয়ে।
মাটির কোলে ঘুমিয়ে থেকে, স্বপ্ন চোখ জুড়ে
ঘুমের ঘরে শালিক এসে, গানের গলা ধূয়ে।
পায়ে করে হলুদ আলো আমায় দিলো ছুঁয়ে
ঘুম ভেঙ্গে যায়, সূর্য চোখে, হাসে চেয়ে-চেয়ে।
গ্রাম্য রূপে ডুব দিতে চায়; আমায় সাথে নিয়ে_
সবুজ পাতা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে, সবুজ রঙ গায়ে।
ঘরের কোণে চড়ইর বাসা, আমার হয় না জায়গা!
তোদের সাথে থাকতে চাহি হলুদ কাঁঠাল পাতা।
আমগাছেতে কবুতরে পাখম তুলে নাচে,
গ্রাম্য রূপে ডুব দিতে চায়, থাকতে চাহি কাছে।
সাজনা গাছে বাজনা বাজায়; টুনটুনি পাখি!
সবুজ পাতায় ঘুমিয়ে আছে কত রঙের আঁখি
গ্রাম্য রূপে ডুব দিতে চাই, স্নান করা ভোরে
জীবন আমার রয়ে যেন যায়, গ্রাম্য রূপের ঘরে।
শীতের সকাল—
খেজুর গাছে-গাছে মাটির হাড়ি ঝুলানো
সকালের থরথরে শীতের চাদর মুড়িয়ে নুরু এসে_
হাড়ি ভর্তি খেজুর রস এক-এক করে নামিয়ে রাখে
বাড়ি—বাড়ি বিক্রি করে_
দোকানেও খানিক রাখে।
শালিক এসে হলুদ পায়ে-পায়ে খেজুর গাছে বসে
ছোট-ছোট বাচ্চারা আসে-হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকে।
শীতের সকাল কুয়াশা মাখা গ্রাম, স্তব্ধ হয়ে আছে,
কোথাও কেউ নেই, কয়েকটি সাদা বক'
চুপ করে বসে আছে ধান গাছের আড়ালে;
ধানের পাতায় বিন্দু-বিন্দু শিশিরকণা রয়েছে চুমি
আমার গাঁও অপরূপ, সোনালী হয় ভূমি।
শীতের সকালে বাতাস বহে, কার গায়ে-গায়ে!
ভেজা ঘাসে পা রেখে হাঁটে কে, দোয়েল হয়ে?
ঘুঘুর পায়ে ভেজা পাতা সবুজ রং মাখে_
শীতের সকাল, রূপের সকাল, রূপ ছোঁয় গায়ে।
অন্ধকারের সুন্দর—
তখনও মোবাইলে ফ্ল্যাশলাইট জ্বলছিলো
হটাৎ মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়!
চার দিকে অন্ধকার, কুচকুচে অন্ধকার_
অন্ধকার পথে হেঁটে-হেঁটে যেতে-যেতে
শত-শত জোনাক পোকার আনাগোনা-জ্বলে
অন্ধকারের সুন্দর, অপরূপ সাজে, পরাণ জাগে।
তারা'র মাখা আলো, চাঁদের আলিঙ্গণে অন্ধকার_
আমি অভয় নিয়ে জোনাকের দলে নীল রং মাখি
পথের দুপাশে সবুজ ধানপাতা শিশির জমে রয়েছে
অন্ধকারের সুন্দর আমার নয়নে রয়েছে উজ্জ্বল।
কোয়াশা আচ্ছন্ন দূরের গ্রাম অন্ধকার_
জোনাকির লেজবাঁধা ফোঁটা-ফোঁটা আলো জ্বলে।
জোনাকির পিছু-পিছু যেতে-যেতে অন্ধকারের ঘরে
এত সুন্দর! কালোর মাঝে ফোঁটা-ফোঁটা আলো,
ছুঁয়ে দিলে মিলিয়ে যায় আলো' অন্ধকারে'
আমি হেঁটে-যেতে চাই অন্ধকারে জোনাকির সাথে।
আমার গাঁয়ে শীত এসেছে—
শীত, শীত, শীত এসেছে, শীত এসেছে গাঁয়ে
কুয়াশা ঢেকে সবুজ গ্রাম, সবুজ ঘাসে ছুঁয়ে।
শীত সকালে কাঁপছে সবাই, ঘুমায় কাঁথা গায়ে
উঠে না কেউ শীতের সকাল, শীত লাগে পায়ে।
শীতের সকাল হাঁসের হাসি, শীত লাগে না গায়ে
পুকুর জলে সাঁতার কাটে মাছ খাঁমচে পায়ে।
রমনীদিগের শীত লেগেছে লজ্জাবতী গায়ে
কৃষ্ণ চূড়ার রং মেখেছে নববধুর পায়ে।
বটগাছেতে ডাকছে ঘুঘু শীতের ছাদর গায়ে
সূর্য উঠা সকাল-সকাল দাদা জ্বালছে চায়ে।
গ্রাম্য আমার শীতের সকাল রূপ জ্বেলেছে গাঁয়ে
কুয়াশা মাখা সবুজ পাতা, স্নিগ্ধ বাতাস ছুঁয়ে।
আমার গাঁয়ে শীত এসেছে, কুয়াশার গোমটা দিয়ে
ঘাসে-ঘাসে কুয়াশার ফোঁটা হাঁটিবো খালি পায়ে।
যত দূর হেঁটে-হেঁটে যাই, অপরূপ গাঁয়ে
গ্রাম্য রূপ শীত হয়ে শরীর দেয় ছুঁয়ে।
আমগাছ—
মোম আলুর সুরু গাছটি ঝুলে রয়েছে আম গাছে
গোল-গোল পাতারা শূণ্যের পানে চেয়ে রয়েছে
টুনটুনি বাসা বাধে হলুদ সুতোর সেলাই প্যাচে।
সোনালী পিঁপীলিকা দল করেছে ডালে-ডালে
সবুজ আম পাতা করে নাকো হিংসে'
রয়েছে যে যার মত ভালোবেসে, ভালো ঢেলে।
ডালে-ডালে কবুতর ঘুম ছুঁয়ে স্বপ্ন নিয়ে
ক্লান্ত দুপুরে কাক এসে বসে রয়েছে-ডালে
শুকনো পাতা ঝড়ে পরে রমনীর সাজ গায়ে।
ছুট্ট ছেলেটি দোল দেয় সকাল-দুপুর চেপে
কেঁপে-কেঁপে আসে মৌমাছি, মধু লয়ে মুখে
আম গাছে বসেছে মেলা মানুষের চুপে।
নিশীতে নিদ্রা লয়ে ঘুমিয়ে সবে রয়
কালো পেঁচা চোখ মেলে চেয়ে রয়েছে অভয়।
বাদুড়ের দল উড়ে-উড়ে আসে-যায়-বসে
আমগাছ একেলা নহে সকলে রয়েছে ভালোবেসে।
মোর সঙ্গে রবে—
কেউ নেই, সেও নেই, কে মোর সঙ্গে রবে
প্রেমা অবিনাশে কে মোর অঙ্গ শিহরে দেয়'
শিশিরের বিন্দু-বিন্দু জল অঙ্গে ঢেলে"
গঙ্গার সাথে বিরহের টান গ্রাম্য ঘরে_
কে মোর সঙ্গে রবে কালো-নিশী রূপ জ্বেলে'
জারুল ফুলের রঙে মোরে লয়ে নিশী কাটাবে;
বুড়ু কাকটির গভীর নিশ্বাসের শব্দে কে রবে_
মোর সাথে; তারা গুনে-গুনে নয়নে ঘুম দিবে?
গভীর নিশীথে শুকনো পাতা ঝরে পড়িবে নিমবনে'
মোরে নিয়ে খুঁজিবে এই গ্রাম্য রূপ-গ্রাম্য মায়া,
সে দিন কেউ রবে না, রবে শুধু গ্রাম, গ্রাম্য ছায়া_
কাক, শালিক, ফুল, নদী, পুকুরের বেশে মোরে।
বাঁশ বাগানের পাশ ঘেঁষে অন্ধকার পথে মোর লয়ে-
কে কথা বলে, খুব মায়া দিয়ে, সে-গ্রাম অন্তরে_
মোর প্রাণে রয়েছে দীপ জ্বেলে, অন্য কেউ নেই'
মাটির গন্ধ নিয়ে জড়িয়ে রয়েছি হে গ্রাম-গ্রাম্য।
তুমি বলে ডাকি তোমায়, হে গ্রাম;
আমি দেখেছি তোমায়, তোমার নয়নে-নয়ন রেখে
তুমি ডেকেছ আমায়, তোমার মনের বাসে,
তুমি হাসি মুখে সাজাবে আমায়, রঙিন-রঙিন সুখে
তোমার শরীরের সুবাস নিতে ভ্রমরে আসে।
পাখিরা ডাকে উড়ে-উড়ে, তোমার অপরূপ গায়
হে গ্রাম, হে গ্রাম তুমি ঘুমিয়ে আছ মায়েরই পায়।
হে গ্রাম, তুমি ডাকো মোরে, আমার মায়ের পায়ে
তৃষ্ণা মিটাইয়া শতত যোগ থাকিব তোমার লয়ে।
মেঘের কোলে বসিয়া ঈশ্বর সাজাইছে তোমার রূপ
হে গ্রাম, তোমার রূপ সাজাইয়াছে, প্রকৃতি অপরূপ,
তুমি সাজ আমার হৃদয়ে, বাঁধিয়াছ তোমার অপরূপ
তুমি বলে ডাকিব আমি, তোমায় হে গ্রাম-রবে চুপ?
হে গ্রাম, তুমি ডাকিবে আমায়, আমি আসিব বার
বাতাসে সবুজ ঘ্রাণ উড়িয়ে খুলে দাও দ্বার।
তোমার রূপে গা মাখাবো, মাটি-ঘাস দিয়ে,
তোমার ডাকে আসিব ছুটে, দাও বার ছুঁয়ে?
তোরা নেই, গ্রাম কাঁদে—
আজ তোরা নেই বলে ‘অশান্ত রাস্তা’ রয়েছে শান্ত
সবুজ ঘাস বাতাসের চাদর গায়ে গন্ধ নেয় না।
আমিও আজ নেই, পুরনো দিনে দেখা_
বিকেলের ডুবো-ডুবো সূর্য টি,
কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটির মাথায় দেখা হয় না।
সন্ধ্যা ঝিঁঝিঁপোকার ডাক, জোনাকির আলো,
কত দিন দেখি না_
মধ্য রাতে শিয়ালের ডাক আজ আর শুনিনা,
পূর্ণিমা রাতের লুকোচুরি-চুপিসারি গান কোথায়,
হারিয়ে যাওয়া দিন গুলি আজ আর নেই—
নেই চঞ্চল উদাসীন মনের বেপরোয়া দুষ্টুমি।
দুরন্ত ছেলে হয়ে দূরত্ব কত খানি তোদের মাঝে?
তোরা নেই, গ্রাম কাঁদে, মাঝে মাঝে আমার কাছে,
তোদের খোঁজে, গায়ে সবুজ গন্ধ মেখে দেয়_
বাতাসে গন্ধ উড়িয়ে দেয় তোদের জন্য;
যত দূরে থাকি, গ্রাম্য ছেলে, ভাবিস গ্রাম্য হয়ে।
জড়িয়ে রয়েছে সবুজ পাতা—
চারি পাশ সবুজ হয়ে রয়েছে-অপরূপ গ্রাম
সবুজ পাতায় মেখে দেয় উড়ন্ত মেঘাশ্যাম।
মাটির রস মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছে ঘাস
বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় ক্লান্তির খরা ত্রাস।
সাদা বকের ডানায় ছড়ে আসিলো শিমুল ফুল
ভোরের সূর্য পুকুরে উঠিবে, পদ্ম ফুটে কুল।
মাছরাঙাটি নীল হয়ে, দৃষ্টি রেখেছে শেওলা জলে
বাঁশ পাতা হলুদ হয়ে উড়ে-উড়ে গোলে।
বট বৃক্ষ ছড়িয়ে রয়েছে সবুজ ছায়া দিয়ে
কৃষকের শরীরে বাতাস মাখে, আনন্দ ছুঁয়ে-ছুঁয়ে।
মায়ের চোখেতে ছেলের হাসি, মেয়ের রয়েছে মায়া
মা-গ্রামের ভালোবাসা সবুজ পাতার ছায়া।
সবুজ পাতার গ্রাম খানা মোর, সবুজ রঙের শরীর
সবুজ পাতায় ঢেকে দেও মোরে, সবুজ ঘর জরির।
ঘাস ফড়িং-এর সবুজ ডানা, সবুজ শ্যামলা মাঠ
সবুজ পাতা রাঙিয়ে দেয়, গ্রাম্য রূপ মেলেছে খাঁট।
খুব মনে পড়ে—
জং-ধরা কংক্রিটের স্তুপ্ত শহরে মন মরে
কে আমি ভুলে যাই আমার আমিত্বকে!
শ্বাসরুদ্ধ কোলাহল দেহের বৃত্ত ঘরে
অজানা হয়ে যায় গ্রাম্য সবুজশ্যামলাকে।
আজ খুব মনে পড়ে হে গ্রাম্য-মা জননী
ছুটে যেতে চাই তোমার কোলে, তোমার তরে,
কত দিন তোমার হাসি মুখ দেখেনি
তুমি ডাক মা-গ্রাম, সেই গত দিনের সুরে।
ভাত খাব বলে আবার যেতে চাই তোমার তরে
উঠোনে বসে সবুজের ছায়া তলে,
কবুতর এসে চার দিক রবে আমাকে ঘিরে
দেখে যাবো আবার নতুন করে সেই পুরনো ছেলে।
আজ খুব মনে পড়ে মাগো-গ্রাম্য সবুজ ছায়া
ছুটে যেতে চাই তোমার কোলে, সবুজ ঘাসে
রেখে যাওয়া গত দিনের কত করুণ মায়া
তুমিও কি দেখনা আমায় ভালোবেসে?
ফিরে ফিরে চাহে মন—
ফিরে–ফিরে চাহে মন, ফিরে–ফিরে যায়
করুণ চোখে দেখি গ্রাম্য মায়াবী মুখ
যেতে নাহি চায় ছেড়ে গ্রাম্য রূপ
গ্রাম্য রূপে ডুব দিয়েছি, মন দিয়েছি–
প্রেম দিয়েছি, ভালোবাসায় বাঁচি।
যেতে নাহি চাই, বার বার ফিরে চাই
পিছন থেকে ডাকে নরম সুরে
ফিরে-ফিরে চাহি করুণ চোখে, আছি অদূরে।
কলমিলতা রেখেছে বেধে চুম্বন করে
শত বার চাহে যাবো না চলে,
যেতে মোরে হয় কাজের ঘরে
রাখিব তোমায় আদর করে, হৃদয় কোলে।
এনেছি এক গুচ্ছ শাপলা, স্মৃতির করে
জানি শুকিয়ে যাবে কোন এক ভোরে
শুকনো পাপড়ি মনে করে দিবে ডিঙির বৈঠা
ভোরের বাতাসে গ্রাম্যের গান সুরটা।
এই পথের শেষ নেই—
পথে–পথে হেঁটে–হেঁটে, ধূলো জমেছে পায়ে
কত পথে হেঁটে যেতে মনে লাগে স্বাদ,
জনে–জনে গাঁয়ে–গাঁয়ে ডাকে আমায় মায়ে
যত দূরে চোখ পড়ে চোখে নামে স্বাদ।
পথে–পথে গাঁয়ে–গাঁয়ে চার'ধারে সবুজ বাঁধ
ধুলো জমে গায় হয়েছে সোনালি মাঠ,
পথে–পথে মনে–মনে আমিযে হতে চাই পথ
হেটে যাবে কত মানুষ আমার গায়ে হাট।
থেমে–থেমে হেঁটে–হেঁটে দেখি গ্রাম্য অপরূপ
সেজে আছে সবুজ শাড়ি পড়ে, মাথা নুয়ে,
চোখে–চোখে দেখে–দেখে মায়া লেগেছে মনে
মন চায় না যেতে, রেখে ধুলিমাখা গায়ে।
পথ জুড়ে মায়া বাধে রেখ মোরে কবর কুঁড়ে
গ্রাম্য পথ এঁকেছি মনে সবুজ বৃক্ষের ঘরে,
পা যদি না হাটে অপরূপ গ্রাম্য ছেড়ে
রেখে দেও আমায় তোমার করে।
মাঠে মাঠে সবুজ—
মাঠে–মাঠে সবুজ ফসল, সজীব হয়ে রয়
ছুঁতে গেলে ভালোবাসা বড্ড বেশি হয়।
আজ নেমেছি সবুজ মাঠে, সবুজ ঘাসে গা;
নরম ঘাসে মন ছুঁয়ে যায়, প্রাণে লাগে দোলা;
ঘাস ফড়িং ঘাসে–ঘাসে চুম্বন দিয়ে যায়
শরীর মিশিয়ে আদর করে, সবুজ গন্ধ গায়।
খালি পায়ে নেমেছি মাঠে, দেখিব সবুজ মাঠ।
দূরের মাঠে ফসল যত, দূরে আকাশ নুয়ে রয়;
চার দিকেতে ফসল মাঠে সবুজ হয়ে রয়
আমার বাড়ি সবুজ মাঠে, সবুজ বৃক্ষের জয়।
সব খানেতে চরণ ঢেলে থাকতে আমি চাই
সবুজ মাঠে–সবুজ ফসল, যত দূরে যাই।
মাঠে–মাঠে সবুজ ফসল, সবুজ বৃক্ষ বাড়ি
গ্রাম্য আমার সবুজ রূপে পড়িয়াছে শাড়ি।
সবুজ গাঁয়ে মন দিয়াছি, থাকবো সবুজ গাঁয়ে
সারা জীবন কাটিয়ে দিব, সবুজ ঘাসে শুয়ে।
প্রকৃতির সাথে খেলা—
রৌদ্র মাখিয়া গায়ে, চুম্বন আঁকি অপরূপ গাঁয়ে
সূর্য উঠিয়াছে ভোরে পাখিদের কলরবে
গাছে–গাছে পাখি, বেঁধেছে বাসা,
ডুমুরেরফুল ঝরিতেছে পুকুরের পাড়ে;
লাল পিঁপিলিকা ডিম পেড়েছে আম পাতায়,
ডিমের খোঁজে শালিক পাখিটি এসেছে।
সূর্য উঠা হলুদ পাখিটি গ্রাম্য রূপে সবুজ হয়ে আছে
আকাশের পানে চেয়ে আছে গ্রাম্য সবুজ!
শখ করা পুষ্প গাঁথিয়া মালা রমনীর হাতে;
বকুল ফুল রয়েছে চুলে, ঘ্রাণ সারা গাঁয়ে।
নারিকেল ফুল ঝরিতেছে গায়ে, রমনীর পায়ে পায়ে
সাদা–সাদা ফুল চোখ ভুলায় মায়াবী প্রকৃতির।
প্রকৃতির সাথে খেলা করতে করতে আমি ভুলে গেছি
আমার ক্রোধ, হিংসা, অবহেলা, অশান্তি_
আমি বাঁচি প্রকৃতির সাথে, শালিকের সাথে
সবুজ গ্রাম্য রূপে করি খেলা, প্রাণে মোর শান্তি।
গ্রাম্য পিঠে—
সকাল–সকাল পিঠের গন্ধে ঘুম ভেঙেছে আমার
ঘুম থেকে যে উঠে দেখি পিঠে কত রঙের।
ঘর ভরা সব বাবিগনে বানাচ্ছে পিঠের দুম
কত রঙের পিঠে দেখি তেলে হচ্ছে চুম।
পিঠে ফুলির অনুষ্ঠানে আসছে কত বাবি
গ্রাম্য রূপে হাসছে দেখ, পিঠে কি আর খাবি?
হাতে–হাতে পিঠে সবার করছে ভাগাভাগি
বাবিরা সব আমার চোখে আছে চোখ রাগি_
আমি নাকি খাচ্ছি বেশি পেট ফুলে যায় তাই
একটু তুমি কম খেলে কি, হয়না তোমার ভাই?
কম খেতে পারি না আমি, লাগে আমার বেশি
দেখছোনা পেটটা আমার বাড়ছে কত পেশি।
গ্রাম্য সকাল রূপের বাহার, সকাল সূর্য দেখে
পিঠের গন্ধে সারা বাড়ি, আহা কি যে গন্ধ মাখে!
মধুর পিঠে খেয়েছি আজ, সকাল-সকাল উঠে
গ্রাম্য সকাল, রূপের সকাল, উঠবে খেতে পিঠে।
ছোট্ট ছেলে—
ছোট্ট ছেলে হেসে খেলে, গ্রাম্য পথে–পথে
পথের ধুলো গায়ে মেখে পুকুর জলে ধুয়ে_
মায়ের বকা আসছে তেড়ে, দৌড়াচ্ছে ভয়ে–ভয়ে
খালি গায়ে বাঁশ বাগানে উঁকি দিয়ে চাহে।
আজ বাড়ি আসবিনা কি,_ ছালা বেঁধে আসিস!
তোর পিঠেতে ভাংবো লাঠি মনে তবে রাখিস?
খুঁজছে সবাই হারিকেন জ্বেলে, লুকিয়ে আছে আড়ি
মায়ে কান্দে আয়রে খোকা মারবো নাকো ঝাড়ি।
আদর করে খুব যতনে খাইয়ে দিব রাতে
ছোট্ট ছেলে ঘুমিয়ে আছে বাঁশ বাগানে গিয়ে
নিশার ঘুমে স্বপ্ন দেখে খেলছে খেলা পথে।
ছোট্ট ছেলে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে তবে থাকে
এমন বকা দিবোনা আর জড়িয়ে রাখিবো বুকে।
ছোট্ট ছেলে খেলবে খেলা গ্রাম্য পথে–পথে
বড় হয়ে মানুষ হবে সত্যের কথা গেঁথে।
এসেছি ফিরে—
আমি আবার দেখিতে চাই তোমার রূপ_
ছবির মত সাজানো,
তুমি রূপ মেলিয়া আমাকে করিবে কি বরণ?
আমি আসিতেছি তোমার কোলে, আদর নিতে
হে গ্রাম, হে অপরূ,
করি বার–বার তোমাকে সরণ।
আবার দেখিবার চাই গ্রাম্য রূপ
মায়ের হাসি অপরূপ।
তুমি মায়াবতী, মায়া দিয়েছ, চোখ অর্চনা
তাইতো ফিরে আসি তোমার রূপে স্নান পেয়ানা
শিশিরকণা মেলিয়া ঘাসে, মৃদু মলয় গায়ে মেখে
তোমার রূপ আছে উজ্জ্বল হয়ে, শাখে সুখে—
নারিকেল গাছে কাঠবিড়ালির খেলা দেখতে
আবার এসেছি ফিরে তোমার বুকে,
শুপাড়ি গাছে পিঁপিলিকার দলে খেলতে_
আবার এসেছি ফিরে, হে—গ্রাম, সুখ পেতে।
মায়ের গ্রাম—
দেখতে বড় ইচ্ছে করে আমার মায়ের মুখ
আমার মায়ে কেমন আছে, হয় যেন বড় সুখ।
সোনার গাঁয়ে ঘর তুলেছে তাল পাতারই চাল
ঘরের ভিতর আলো আসে, দেয়াল ফুটা জাল।
সবুজ গাঁয়ে মায়ের দেখা হলুদ পাখির সাথে
হলুদ পাখি জারুল গাছে মায়েরে দেয় মালা গেঁথে।
ঘর সাজিয়ে নানান ফুলে চড়াইর বাসা ঘরের কোনে
উঠুন জুড়ে বৃক্ষ মেলা মায়ের হাতে বুনে।
মায়ের চোখে নরম ভাষা রাখাল কৃষক স্বপ্ন চাষা
মায়ের ঘরে মায়ের তরে যতন করা ভালোবাসা।
মায়ের গ্রাম মায়া ভরা, শীতলপাটিতে ঘুম
মাটির কোলে ঘুমাই সবুজ বৃক্ষ কোমল চুম।
মায়ের হাতে আদর মাখে মাটির কোমল মায়া
মায়ের বক্ষে মাথা রেখে বেহেশতের স্বাদ পাওয়া।
মায়ের গ্রাম মায়ার গ্রাম তুলাগাঁওয়ের মায়া
মাগো তোমার কোলে ঘুমিয়ে আছি, মাটির ঘ্রাণ পাওয়া।
ভুলি নাই তোমায়—
হে গ্রাম তোমায় খুব মনে পড়ে আজ,
দেখিনা কত দিন বাহিরের চক্ষু দিয়া,
মনের চক্ষুতে আঁকি তোমার অপরূপ সাজ।
তোমায় দেখিবার চাই–দৃশ্য,
না দেখিলে হায়হুতাশ মনের বিশ্ব।
সারাক্ষণ শুধু তোমায় নিয়ে ভাবি,
তোমার সবুজ মায়াবি আপরূপ ছবি।
আমি তোমার তরে থাকিতে চাই
তোমার বুকে নিশ্বাস নিতে চাই,
নরম ঘাসে শুয়ে ঘুমাতে চাই বারবার,
হে গ্রাম তোমায় দেখিবার চাই বারংবার।
আজ খুব মনে পড়ে তোমায়, তোমার রূপ।
ভুলি নাই তোমায় ভুলি নাই যত দূরে যাই
তোমারে লয়ে বিশ্রাম খোঁজে, তোমার অঙ্গে চাই।
মন আমার তোমার মাঝে, তোমারই তরে ঘরে
হে গ্রাম, তোমারই রূপে রবো চিরকাল পড়ে মরে।
আজ খুব মনে পড়ে
মনে মনে মনের কথা মানুষ কেউ শুনে না
কানের ভিতর কোলাহলে বাজায় ব্যঙ্গ গঞ্জনা।
আমার কথা বুঝিতে চাহে গ্রাম্য রূপ—শ্যামলা
আমার শরীর গ্রাম্য রূপে মাখিবে চড়াই চঞ্চলা।
চামচিকারা চৌকাঠ থেকে বেড়িয়ে আসে বাতাসে
উড়ে উড়ে আকাশ ঘুরে রঙ মাখানো আবাসে।
উড়োফড়িং—এর ডানা মেলে সবুজ রঙে রঙে
প্রজাপতি গ্রাম্য রূপে উড়ায় আমায় সঙ্গে।
কোলাহলের শহর ছেড়ে যাবো অনেক দূরে
যেখানে আমার মায়ের চরণ রয়েছে মাটি কামড়ে।
জং ধরা এই বদ্ধ শহর, আমায় রেখেছে মেরে
আমার মায়ের গ্রাম্য রূপে রৌদ্র পড়েছে ঝরে।
পাখির ডানায় উড়ে উড়ে যাবো গ্রাম্য রূপে
মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়ে সবুজ ঘাসে চুপে।
যেতে চাহে মন গ্রাম্য রূপে, মায়ের চরণ তলে
আজ বুঝি খুব মনে পড়ে সবুজ—শ্যামল কোলে।
আমার বাড়ি—
আমার বাড়ির চারি পাশে কত শত গাছ
কামরাঙ্গা, পেয়ারা গাছ চেয়ে আছে উকি দিয়ে_
আতা গাছ, জাম্বুরা গাছ, পেঁপে গাছের আবাস
আম, কাঁঠাল, ঝেপে আছে বাড়ির চারি পাশ।
গাব গাছের সাথে মিশে আছে বেল গাছ
আমার বাড়ির চারি পাশে সবুজ গাছের চাষ।
ঘরের আঙিনা জুড়ে সন্ধামালতী ফুলের গাছ
রক্ত জবার হাসে, বাসাতে মাখে ঘ্রাণ।
কচু ফুলের লতা জড়িয়ে আছে নয়টার ফুলের সাথে
গাঁদা ফুলের গাছ টবে-টবে, লাগিয়েছে শাহনাজে-
মিনহাজেও লাগিয়েছে গোলাপ গাছ ছাদে-সাজে।
তাসফিয়া চুপি-চুপি আমরুজ গাছে উঠে।
কুমড়া লতা গাছে-গাছে, লাউয়ের লতা বাঁশে
সিম লতা ছড়িয়ে আছে টিনের ছালে-ছালে
আমার বাড়ি সবুজ বনে, সবুজ চারি পাশে
গাছে-গাছে আমার বাড়ি, ভরিয়ে রেখেছি ফুলে।
কাক ডাকা দুপুরে—
কাক ডাকা দুপুরে, মাথার উপরে সূর্য
আলো দিয়ে-দিয়ে শরীর তপ্ত করে।
নারিকেল গাছে বসে আছে ক্ষুধার্ত কাক
মানুষের সাথে কথা বলতে চায়-চিৎকারে_
খাবার—দে, খাবার—দে, বাতাস—দে
আমার নরম শরীরে, গলা শুকিয়ে গেছে_
এক ফোঁটা পানি—দে, আকুতি করছি।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি
দূরের নারিকেল গাছে, ঘরের ছাদ সমান।
এদিক-ওদিক চোখ, ডিম খাবারের আশায়
আমিও কাকের ডাকে দুপুরের সূর্য স্নানে
নিজের শরীর দূরে রাখার চেষ্টা করছি।
কাক দেখে-দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি
সূর্যের কাছাকাছি। আমিও তৃষ্ণাত্বক_
কাকের সমান উচুতে। আকাশের দিকে চেয়ে-চেয়ে
সূর্যের খুব কাছাকাছি, কাক ডাকা দুপুরে।
শিমুল গাছ—
শিমুল ফুল লাল হয়ে আছে, আকাশ মাথায় করে
বাতাসে দুল খেলে; হলুদ পাখি ডালে-ডালে ঘুরে
ভ্রমরাও আসে উড়ে-উড়ে, গুনগুনিয়ে, সুরে-সুরে
ঝুলে আছে বাদুড়, নিঃশ্বাস টেনে, উল্টো ঘুরে।
কত সব পাখিদের আড্ডা মিলে শিমুল গাছে;
আসে স্বপ্নে দেখা পরী, নীল আত্নার কাছে।
আমিও দেখতে যেতাম রাতের তারা, শিমুল গাছের মাথায়!
চাঁদ উঠা, পূর্ণিমার চাঁদ, শিমুল ফুলের গায়;-
স্পষ্ট আমি দেখতে পেতাম পরীদের উত্সব ময়।
রাতের আকাশ ঘুমিয়ে আছে শিমুল গাছের গায়
পাখিরা সব স্বপ্নের ঘরে, সুখের স্বপ্ন ময়;-
শিমুল গাছের ঘুম নাহি হায়, বাতাস দিয়ে যায়।
শিমুল গাছ দাঁড়িয়ে আছে মাথায় করে ছাতা
বাতাস দিয়ে জীবন বাঁচায় সবুজ গুচ্ছ পাতা।
শিমুল গাছের দুঃখ নাহি, ভালোবেসে যায়
মানুষের সেবায় থাকে সদায়, পাখির মত হয়।
ধান ফুলের ঘ্রাণ
ধান ফুলের-ঘ্রাণ বাতাসে, আমার ঘরে আসে
আমার নাক ঘেঁষে, সারা গ্রাম জুড়ে ভাসে।
ধান ক্ষেতে মন বার-বার ছুটে আনমনে
ভালোবাসি সবুজ ধান পাতা, ধান ফুল দুলে_
ভুলে যাই করুন ব্যাথা, ধান ফুলের ঘ্রাণে।
ঈদুরের দল বাসা বাঁধে ধান খেতে গর্ত করে
আমি হারাতে চাই না ধান ফুল, ফসল-
ঈদুরের সাথে যুদ্ধ করি, ধান খেত বাঁচাতে,
আমি এক বেলা ঘুমাতে চাই ধান ফুলের ঘ্রাণে
নিজেকে হারাতে চাই সবুজ ধান খেতে।
আবার জেগে উঠতে চাই ধান ফুলের ঘ্রাণে
নিঃশ্বাসের সাথে মিশাতে চাই ধান ফুল।
বাতাসে বেসে আসা সোনালী ধানের ঘ্রাণ_
ফুলের-ঘ্রাণ আমাকে আচমকায় জাগিয়ে দেয়।
ঘুম আসা, না আসা সময় গুলিতে মিশে যাই_
থাকতে চাই ধান ফুলের-ঘ্রাণ নিয়ে-নিয়ে।
বৃষ্টি ভেজা গ্রাম—
বৃষ্টি ভেজা গ্রাম, আমায়ও ভিজিয়ে দিয়ে যায়
পাখিরাও ভিজে, উড়ে-উড়ে যায় দূরে,
লিচু গাছে ঝাপটিমেরে বসে আছে বাদুড়_
সেগুন ফুল ভিজে-ভিজে আনমনে
সবুজ ঘাসে বৃষ্টি নামে, নয়নে-নয়নে।
লজ্জাবতী ফুল স্নান করে
ভিজিয়ে দিয়ে যায় কৃষকের অন্তরে_
গ্রামের বধুদের চোখের পাতায়
হাঁসের গায়ে, মাছের গায়ে-পুকুরে।
বাঁশ পাতা ভিজে আছে, আকাশে চেয়ে-চেয়ে
বকের ডানা ভার হয়ে আছে, বৃষ্টিতে ভিজে,
বৃষ্টি ভেজা গ্রামের রূপ-অপরূপ সাজে।
ব্যাঙের মাথার উপর কচুপাতার ছাতা
কিশোর-কিশোরীও বসে আছে মাথায় দিয়ে তালপাতা
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় আমায়, গ্রাম, ঘাসে
উজ্জল হয়ে আছে গ্রাম্য রূপ বৃষ্টি নামা শেষে।
প্রকৃতির খেলা—
কদম গাছের হলুদ ফুলে-ফুলে
ভ্রমরের দল উড়ে-উড়ে মধু চুষে
এক ফুল থেকে অন্য ফুলে, দুলে-দুলে_
পায়ে ঘাস মেখে, পুকুরের পাড়ে খেজুর গাছে বসে।
কখনও লেবু ফুলে, কখনও চালতা ফুলে
ভালোবাসা মাখে, মায়ায় জড়িয়ে।
আমার নয়নে মেখে দিতে চাই পাতি হাঁসটির_
হলুদ পায়ের পানি; বটপাতায় বসে-বসে।
সরপুঁটির খেলা দেখতে চাই রুই মাছের সাথে
বাড়ির বধুরাও আসে দলে-দলে চোখ মেলে।
পুকুর পাড়ে বড় ব্যাঙ্'টি বসে আছে নীরবে,
পুঁটি মাছটি চেয়ে আছে আমার চোখে।
মাছরাঙ্গা পাখিটির লম্বা ঠোঁট দিয়ে
এক-এক করে মাছ মারছে; 'চিল' দূর থেকে চেয়ে আছে
পাতি হাঁসটির দিকে; বড়-বড় রুই মাছ নিয়ে-নিয়ে।
আমি সবারে চোখে রেখে-রেখে ভালোবাসি।
মা-মাটির গ্রাম—
আমি আমাকে চিনার আগে মা-মাটির গ্রাম চিনেছি
মা-মাটির ঘ্রাণ অন্তরে মেখে-মেখে গ্রাম দেখেছি;
মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কত বড় হয়েছি;
মা-মাটির কোলে খুব যতনে বেড়ে উঠেছি।
মা-মাটির কোলে ঘুমিয়েছি কত কাল,
আজও গায়ে ঘ্রাণ আসে ধুতরা ঘাসের।
বুকে বাধে মা-মাটির ঘ্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই
সবুজ ঘাস, মাটি মেখে-মেখে গায়ে।
আমি আমার হতে চাই না, আমি হতে চাই বাংলার
মা-মাটির কোলে দুলে-দুলে নিতে চাই অবসর।
গ্রাম বাংলার কোলে নিজেকে খোঁজে পাই বার-বার
মা-মাটি আমার, আমার, শুধু আমার।
মা-ওগো মা' আমি তোমার ছোট্ট খোকা
তোমার কোলে ঘুমিয়ে আছি, মাটির ঘ্রাণ নিয়ে।
ওগো খোদা-মরণ দিও আমায় এই গ্রাম বাংলার বুকে
মা-মাটির ঘ্রাণ নিঃশ্বাসে রবে সব যুগে যুগে।
পাখি হতে চাই—
আমি যদি পাখি হতাম, মানুষের থেকে দূরে
উড়ে-উড়ে আকাশ ঘুরে, দূর থেকে বহু দূরে,
গাছের সাথে গল্প করতাম, মনের আনন্দ মেখে,
দিনের শেষে ঘুমিয়ে যেতাম গাছের কোন ডালে
আমি একা আমার মত, মানুষ নাহি কাছে
মানুষের মাঝে কোলাহল, দুর্নীতিতে চলে।
আমি যদি পাখি হতাম, মানুষ নাহি হয়ে !
নিজের মত উড়ে-উড়ে প্রকৃতির সাথে যেতাম মিশে ।
মানুষের মাঝে হিংসা-বিদ্বেশ, মানুষের মাঝে ভয়
মানুষের মাঝে মিথ্যা বহে, সত্য হয় ক্ষয় ।
আমি আজ পাখি হতে চাই, কথা নাহি বলে
সত্যের মাঝে উড়ে-উড়ে সত্যের পথে চলে ।
মানুষের মাঝে মানুষ কারা? সত্য কথা কয়
সত্য মানুষ, সত্য যারা পাখির মত হয় ।
মানুষের মাঝে মানহুশ আছে- মানুষের কত ধাপ
আমিও আজ পাখি হতে চাই- নিষ্পাপ ।
গ্রাম্য ফল—
আফিমফল পেকে লাল হয়ে আছে
গাছ নুয়ে আছে পুকুরের উপরে;
পাখিরা আসে হলুদ পায়ে-পায়ে
ঠোট রঙিন করে উড়ে যায় নীড়ে ।
গ্রাম্য ছেলে-মেয়ে খবর রেখেছে
কখন লাল হবে আফিম, গাছে-গাছে;
কয়েক দল নজরদারী করছে
বাগানে-বাগানে, পুকুরের পাড়ে।
কাউ গাছের খোঁজ পরান নিয়েছে
হাওয়ার ঘরের দক্ষিণ পাশে
বাসাতে দোল খেলে ঠেং ঠেংয়া গাছে
কাউ উৎসব পল্লবহীনে চেয়ে আছে।
কাউ,আফিমের খোঁজে গ্রাম্য ছেলে-মেয়ে
দল বেঁধেছে; গাছে-গাছে বসে আছে হাসি দিয়ে।
পাখির মত উড়েবেড়ায় এগাছ থেকে ওগাছে-
গ্রাম্য ফলের খোঁজে, গ্রাম্য ছেলে-মেয়ে।
কাঁদিতেছি আজ—
কাঁদিতেছি আজ গ্রাম ছেড়ে চলে যা'ব বলে-কত দূরে
ধূলিবালি গায়ে মেখে, মাঠে-মাঠে ঘুরে-ঘুরে_
তৃষ্ণা মিটাইয়াছি শত জনমের গ্রাম্য রূপে।
কাশফুলে ব'রে যাবে এক দিন 'কবরে' চুপে-চুপে;
আমি আবার ফিরে যেতে চাই বাঁশবনে_
সাদা বকের ডানায় চড়ে, মাছরাঙার ডাক শুনে;
কাক ডাকা দুপুরে জেগে উঠতে চাই তন্দ্রা চোখে,
চোখ মেলে দেখিবার চাই বসে আছি সবুজ ঘাসে।
ঘুঘু পাখিটির গোঙরানি স্পষ্ট শুনিতেছি
আজ সবাই কাঁদিতেছে_কৃষ্ণবর্ণ নেই।
আমি আজ মৃত্তিকার সাথে মিশে আছি
দেহে সবুজ ঘাসের আবরণ দিয়ে।
পাখিরা কাঁদিতেছে গাছে-গাছে নীরবে
মাটি হয়ে মিশে আছি তোমাদের পায়ে পায়ে;
দূরে নহে আমার দেহ, বাঁচিয়া আছি তোমাদের তরে
গ্রাম্য রূপে, বাঁশবনে, সবুজ ঘাসের চাদরে ডাকা কবরে।
বৃষ্টি এলে;
বৃষ্টি এলে; মাঠের কৃষক ছুটে আসে ঘরে
টিনের ছালে বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি নামে খালে,
উঠোন জুড়ে বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি নামে ধানে;
বৃষ্টি নামে খড়কুটুতে, সবুজ গাঁয়ে-গাঁয়ে।
পাখির গায়ে বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি নামে গাছে;
ঘাসের গায়ে ভিজিয়ে দিয়ে বৃষ্টি নামে-নেচে।
বৃষ্টির ফোঁটা আমার গা ভিজিয়ে দিয়ে যায়
আমার চোখে বারে-বারে ফিরে-ফিরে চায়।
বৃষ্টি এলে; বুড়ো দাদু গাঁয়ের রূপে ছুটে
দাদুর আগে ছুটে গরু চার পায়েতে জুটে।
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি নামে গায়
বৃষ্টি নামে সোনার গাঁয়ে, বৃষ্টি ছুঁয়ে পায়।
জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁতে চায়
বৃষ্টির ফোঁটা ভিজিয়ে দিল রমণীর চোখে হায় ।
বৃষ্টি নামে টাপুরটুপুর, ভিজতে আমি চাই
বৃষ্টি এলে; গা ভিজিয়ে সোনার গাঁয়ে যাই।
ধান কেটে-কেটে
ধান কেটে-কেটে, দুর্গম পথে ঘাম ঝরে
ধানের আঁটি মাথায় করে বাড়ি ফিরে।
ধান কেটে-কেটে একাকার মাঠের পর মাঠ ৷৷
হাঁটু সমান পানি, ধান মাথায় পারাপার,
বাহু দৈত্যের ক্ষরাপর, ঘামের বৃষ্টি সাদা ঘর
সাদাসিদে কৃষক ধান কেটে খুশি চরাচর।
মুখে লয়ে হাসি-স্বপ্ন বরা আঁখি ৷৷
ক্ষেত-ক্ষেতে ধান, সোনার ধান ভরা
কৃষক মাথায় ধান তুলে কড়া-কড়া ।
দূরের মাঠে ধান কাটে, মানুষ নাহি পাশে
রৌদ্দুর-বৃষ্টিতে খেঁটে-খেঁটে ধান কাটে-রাশে
ধানে-ধানের বসত হবে কৃষকের ঘরে।
বৈশাখের হুতাশন গায়ে মেখে-মেখে
ধান কাটে কৃষক মাঠে-মাঠে দূরে-দূরে
ধান কেটে-কেটে দেহ পুড়ে, তবুও হাসে সুখে
আকাশের ছায়া নেই, রোদ্র-ধান ঘরে।
আমি কৃষক হতে চাই
আমি কৃষক হতে চাই, কৃষকের সাথে
মাঠের পরে মাঠ ধান কেটে-কেটে;
সোনালী ধান চেয়ে আছে নিষ্পাপ কৃষকের চোখে
কৃষকও হাসে ধান দেখে-দেখে;
ভালোবেসে, ঘাম সেঁচে, দিনের পর দিন খেঁটে-খেঁটে_
হেঁটে-হেঁটে ধানের ক্ষেতে, থেকে-থেকে
আজ মাথায় করে লক্ষ্মী বাড়ির উঠোনে মেলেছে।
আমিও কৃষক হতে চাই, দুঃখ ভুলে, এক-এক বেলার
হাসি দিতে চাই; সোনার ধান দেখে-দেখে ।
কৃষকের মন নরম মাটির মত, এত খেঁটেও হয়নি শক্ত
কৃষক- গ্রাম বাংলার হৃদম, সবুজ ভক্ত;
আমিও কৃষক হতে চাই, নরম মনের, কৃষকের সাথে।
উঠোনে-উঠোনে ধান লক্ষ্মীর বরণ
সোনার চেয়েও দামি ধান-মহামূল্যবান!
কৃষকের হাতে গড়া ধান, রক্তকে করে ঘাম, গোলায় উঠে ধান,
আমিও ঘাম ঝরাতে চাই, কৃষক হয়ে।
ঝড়ের দিন
মেঘে ঢাকা আকাশ–বাতাস,বৃষ্টিনামে গাঁয়ে;
গাঁয়ে–গাঁয়ে, নদীর বাঁধ ভেংগে যায় ঝড়ে
ঝড় উঠেছে গাছে–গাছে,ঘর চলে যায় উড়ে
ধূলি বালি উড়ছে দেখ ঝড় উঠেছে গাঁয়ে।
ঐ গাঁয়েতে ঝড় উঠেছে এগাঁয়েতে ধূলি
কৃষক ভাইয়ের মাথায় ধান গাঁয়ের দিকে চলি।
আকাশ ডাকে,কালো আকাশ,অন্ধকারে বাতাস
বিজলি আলো ছড়িয়েছে,দিনে–রাতের আবাস।
গাছের উপর গাছ পড়েছে,ডাল গিয়েছে ভেংগে
খাল–বিলেতে ঘাংর ঘাং ডাকে শুধু ব্যাঙে।
ঝড়–তুফানে মানুষ সবাই লুকিয়ে আছে ঘরে
কেহ আবার আম কুড়াতে ছাতা মাথায় ঘুরে।
ঝড় এসেছে,ঘর ভেংগেছে,বাঁধ গিয়েছে ছুটে
এবার বুঝি পানির ঢলে মাঠ গিয়েছে ডুবে
মানুষ সবাই ঘরে ঘরে আকাশ গেছে ফেটে
ঝড়–তূফানে,বৃষ্টিনামে, ঘরও গেছে ডুবে।
গ্রামের সন্ধ্যা দেখে দেখে—
গ্রামের মেঠো পথে বসে-বসে সন্ধ্যায় পাখিদের
নীড়ে ফিরার দৃশ্য দেখি_
ঘরে-ঘরে কুপি জ্বলে, জোনাকিরাও জেগে উঠেছে
সন্ধ্যা তারা মিটিমিটি জ্বলে, পূর্ণিমার আলো চুপি
রাত জেগে-জেগে ব্যাঙ ডাকে, ঝিঁঝিঁ পোকা ঘরে
গান্ধীপোকার আনাগোনা ঝোপঝাপটা-আঁধারে।
শেয়ালের ডাক শুনি গভীর অন্ধকারে
উড়ে যাওয়া ক্লান্ত বাদুড়_
দূরের তাল গাছে বসে আছে গম্ভীর পেঁচা একা
অন্ধকারে জারুল ফুল হলুদ চোখে চেয়ে আছে
শিমূল গাছ স্তব্ধ হয়ে ঘুমিয়ে আছে
পাখিদের কোলে নিয়ে, চার দিকে সব স্তব্ধ।
আমি গ্রামের মেটু পথে বসে আছি সন্ধ্যা দেখে
ডালিম গাছে মাকড়শার জাল বুনা প্রায় শেষ!
গ্রামের সন্ধ্যা অপরূপ সাজে সবুজ ঘাসে ঘাসে
স্তব্ধ হয়ে আছি, গ্রাম বাংলার তরে মিশে মিশে।
গ্রাম্য রমণী—
শিউলি ফুলের মালা গেঁথে গ্রাম্য রমণী;
চুলে বেণী করে কলমি লতার অবনী।
গ্রাম্য রমণীর চরণে লেগে আছে মৃত্তিকার চুম্বন
উনণে বসে রমণীর দল গল্পের ভুবন।
গ্রাম্য রূপে মেলিয়াছে চোখের ঈক্ষণ
বৃক্ষ রূপ মেলে বেলা-অবেলা সারাক্ষণ;
গাছে গাছে রমণীর দল, লঙ্কার বাটি হাতে নিয়ে_
লটকন, আমড়া, চালতা, ডুমুর স্বাদ লয়।
ঠোঁটে লেগে থাকে রস-তেঁতুলের;
বকে মা_আসেনা ঘরে, গ্রাম্য রূপ ছুঁয়ে-ছুঁয়ে হাঁটে।
এপাড়ায়-ওপাড়ায় ঘুরে-ঘুরে, দল বেঁধে চঞ্চল
গ্রাম্য রমণী, গ্রামের সাথে মিশে থাকে অঞ্চল।
মা ডাকে, ফিরে-ফিরে চাহে, নাহি আসে ফিরে
আফিন গাছে চোখ পড়েছে-ভিড়ে, নাহি ধীরে;
টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদ লাগায় জিহ্বায় বারে-বারে
রমণীর ঘর গ্রাম্য রূপে, রমণীর রূপ গ্রাম্য ঘিরে।
নাটাই হারা রঙ্গিন ঘুড়ি—
ঘুড়ি উড়তে-উড়তে মেঘের সাথে লেগে গেছে
ঘুড়ির নাটাই ঘুরছে তাড়াই, আমার হাতে-হাতে;
বাতাস ছুটে ঘুড়ির সাথে, শূন্যে ঘুড়ি উড়ে।
কখন দৌড়াই, কখন গড়াই মাটির গায়ে-গায়ে
ধুলাবালি ছুটছে পিছু, আমায় ধেয়ে- ধেয়ে!
মাঠ থেকে মাঠ, মাঠের পরে, মাঠ চলে কোন পাড়ে?
রৌদ্র-বাতাস মিশিয়ে গায়ে, আমায় ভুলায়-ভিড়ে।
সবুজ ফসল তাকিয়ে আছে আমার চোখে-চোখে
ঘুড়ির মায়া খুব উপরে মেঘের সাথে-সাথে।
মেঘ জমেছে সূর্য আশে; বাতাস বহে-বহে
বাতাস উড়ায় মেঘের আবাস, গাঁয়ের পর গাঁয়ে;
আমার ঘুড়ি উড়ছে ধেয়ে বাসাত বেয়ে-বেয়ে।
ঝড়-তুফানে, মেঘের কোলে উড়ছে আমার ঘুড়ি
কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া ঘুরছে ধুলাবালি,
আমার ঘুড়ি উড়ে-উড়ে কোন গাঁয়েতে ছুটে
নাটাই হারা রঙ্গিন ঘুড়ি, আমার থেকে দূরে।
বৈশাখীর উৎসবে আলপনার সাজ
আলপনার সাজে গ্রামের অলিগলি-পথ
মুখে-মুখে সাজ কত রঙ, দূর থেকে দূরে.....
আলপনার সাজ, আজ বৈশাখী উৎসবে।
রাত থেকে সাজ রমনার বটমূলে, গ্রাম্য রূপে
পান্তা ভাত ইলিশের প্লেট হাতে-হাতে ভোরে
বৈশাখী উৎসব সবার মনে-মনে, অন্তরে।
আমিও সবার দলে, বৈশাখীর সাজ গায়ে
বাতাসে-বাতাসে রোদ্র মিশে যায়-শরীরে
সবাই বসে-বসে বট ছায়া সবুজ নরম ঘাসে।
শাড়িতে-শাড়িতে আলপনার সাজ, মেখে গালে
দল বেঁধে, ঢোল বাজাতে-বাজাতে চলে পথে-পথে।
চার দিকে কোলাহল, রঙের খেলা-আলপনার
গাছে-গাছে কাঁচা আম, রমণীর জিহ্বা রসে টলমল!
আমিও খেতে চাই সবার দলে, রমণীদের হাতে_
খেতে চাই পান্তা-ইলিশ, ভোরের পাতে।
বৃষ্টি এলে
বৃষ্টি এলে মন ভিজাতে ইচ্ছে করে খুব!
পাখিদের সাথে, দুরন্ত ছেলেদের_
খেলার সাথি হয়ে সবুজ গাঁয়ে চুপ।
উঠোনে-উঠোনে পানি, উলঙ্গ শিশুদের ঝাঁক
বৃষ্টির অম্বনি বেসে-বেসে এদিক ওদিক নেয় বাঁক।
গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ, ব্রজপাত, আলোর খেলা
সাদা আকাশ কালো হয়ে রয়েছে গোমড়া
মেঘে ঢাকা সূর্য, বৃষ্টি এসে আমায় ভিজিয়ে দেয়,
বৃষ্টি এসে গ্রাম বাংলার গা ভিজিয়ে দিয়ে যায়;
অপরূপ গ্রাম, ঘাস, পুকুর, খাল,
কচুপাতার মধ্য মনিতে বৃষ্টির জল কয়েক ফোঁটা।
কিশোরীর চোখের পাতায় বৃষ্টি এলে;
আচমকা শরীর শিহরে উঠে; বৃষ্টি হাসে রূপ দেখে
ভিজিয়ে দিয়েছে সারা শরীর; বৃষ্টির সাথে মাখে
বৃষ্টি এলে আমিও ভিজাতে চাই শরীর, সবার দলে।
দুপুরের সূর্য স্নানে—
দুপুরের সূর্য স্নানে, বকুল গাছের নিছে বসে-বসে
বাতাসের সাথে মাখামাখি; গায়ে-গায়ে রাজ হাঁসটি।
বট গাছের মাথায় নিঃসঙ্গ পেঁচাটি বসে-বসে
সূর্যের মুখে তাকিয়ে রয়েছে নীরবে।
রাখালির গায়ে ঝরা ঘাম, কামড়ে আছে সূর্য
ফসলের মাঠে কৃষকের স্বপ্ন চোখে সূর্য স্নান
আমিও কৃষকের গায়ে-গা লাগাতে চাই তুর্য
দুপুরের সূর্য স্নানে রাখালির মুখে সুখের গান।
দুপুরের ক্লান্তি কাকের মুখে দীর্ঘশ্বাস
ভেজা কাপড়ে গ্রাম্য বধুর শরীর,ঢেঁকিতে পা-!
গ্রাম্য রূপে সূর্য স্নান করে, হলুদ রঙের আবাস
আমিও দুপুরে সূর্য স্নান করতে চাই-বিলাপ।
মেঘে-মেঘে ডেকে যায় সূর্য রাজ!
আবার জেগে উঠে চোখ মেলে, সবার চোখে।
সূর্য রাজ গাঢ় হলুদ হয়ে আছে, গাঁয়ে গাঁয়ে সাজ
সূর্য স্নানে আমিও সবার সাথে গা ভিজাতে চাই।
তালপাতার বাঁশি বাজাতে বাজাতে—
তাল পাতার বাঁশি বাজাতে-বাজাতে
গাঁয়ের মেঠো পথে ছুটে যায়, গ্রাম্য ছেলেটি_
ধূলিবালি উড়িয়ে অবুঝ মনে;
আমি তাঁহার সাথে অবুঝ মনের হতে চাই।
বাঁশি বাজাতে-বাজাতে ফড়িং এর পিছু-পিছু
ছুটে-ছুটে আবার ভুলে যেতে চাই ষাট।
তাল পাতার বাঁশি বাজাতে-বাজাতে বাংলার বুকে
বহু বার হেঁটে-হেঁটে ভুলে যেতে চাই ক্লান্তি।
উলঙ্গ ছেলেটির সাথে গ্রাম্য ছেলে হয়ে,
সবুজ গাঁয়ে অবুঝ, সহজ-সরল তালগাছের
সাথের মিশে বাঁশির সুর মিলাতে চাই
সবুজ তালপাতার বাঁশির সুর অন্তরে পাই।
মনের ভিতরে, নরম বাঁশির সুর-উদাসীন হয়ে
তালপাতার নিচে বসে-বসে_
গ্রাম্য ছেলেটি নিজের মত করে বাঁশির সুর তুলে,
আমিও বসে আছি তাহার সাথে সুর অন্তরে মেখে।
গ্রাম্য রূপ দেখে দেখে—
গ্রাম্য রূপ দেখে-দেখে, গ্রামের স্বাদ অন্তরে মেখে
চোখ অপরূপ হয়ে আছে গ্রাম্য বাংলার তরে,
গ্রাম্য রূপ দেখে-দেখে, চার দিকের সবুজ মেখে
বাতাসে দোল খেলে, আমি গ্রাম্য কোলে_
গ্রাম্য রূপ মেখে-মেখে শরীরে,
সর্ষা ফুলের মাঠ দূর থেকে দূর আকাশের কাছে
পাখি উড়ে-উড়ে যায় প্রান্তর থেকে প্রান্তরে।
খেজুর ফুলের রঙ শালিকের পায়ে-পায়ে
হাবিল পাখিও রঙ নিতে আসে নেচে-নেচে।
আমি গ্রাম্য রূপ দেখে-দেখে কত রঙ মেখেছি
চোখের মনিতে। আবার জল দেখেছি চোখের কোণে
গ্রাম্য রূপ দেখে-দেখে, সাজ চোখে-চোখে বুনে।
শিমূল গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে
আকাশ মাথায় করে; ছাতার মত ছায়া দিয়ে-দিয়ে
দূর থেকে স্পষ্ট চোখে গ্রাম্য রূপ দেখিতেছি
শত বছরের স্বাদ নিয়ে গ্রাম বাংলার বুকে ।
কৃষকের মুখের ভাত—
কৃষকের মুখের ভাত হতে চাই_
কৃষক; হাসি মুখে আমার সাথে কথা বলে
লক্ষ্মীর মত আদরে-ভালোবাসে।
ফসল চাষে, কত যতন করে, রৌদ্রে পুড়ে-পুড়ে
নিজেকে ভুলে, ভালোবেসে ভাত চাষে।
ফসলের মাঠে বেলা-অবেলা হাঁটে, নিজেকে ভুলে
ঘাম ঝরে, রক্ত ক্ষয়ে-ক্ষয়ে, কৃষকের গায়ে।
ঘামের ঘ্রাণে ফসলের সাথে মিশে যায়
মাঠে খেঁটে-খেঁটে দুঃখ ভুলে যায় শরীরে_
মন ফসলের চোখে মাঠে-মাঠে।
আমি কৃষকের মুখের ভাত হতে চাই
যদি মানুষ না হয়ে, হতাম ভাত।
মাসের পর মাস খেঁটে-খেঁটে, উঠোনে তুলে ধান
হাসি মুখে কৃষক, চোখে আনন্দের ঝড়।
আমি হতে চাই ভাত কৃষকের মুখে
এক বেলার কত আনন্দ দেখে-দেখে।
হলুদ পাখির সাথে—
হলুদ পাখির সাথে, হলুদ হতে চাই,
পাকা আনারস, পেঁপে, পেয়েরা, খেয়ে-খেয়ে
জারুল ফুলের হলুদ রঙ মেখে গায়ে_
ডাল থেকে ডালে কামরাঙ্গার রস খাই।
হলুদ পাখির গায়ে, হলুদ আলো ঘুমাতে দেখে
পুকুরের পাড়ে আমরুজ গাছে বসে-বসে
পাতা দিয়ে বাসা বানাতে-বানাতে
মাকড়সার জালের সাথে মিশে গেছে, হলুদ রঙ।
বড়-বড় হলুদ পাতার বাসা, হলুদ ডিমের_
ভাঙ্গা খোসা, লেগে আছে পাতার সাথে,
হলুদ পাখিটি বসে আছে হলুদ পাতাটির নিচে_
ঘুমাতে চায়; আমিও হলুদ পাখিটির সাথে।
বড়ই পাতা ঝরে পড়ে, নিঃশ্বাসের সাথে
হলুদ হয়ে-হয়ে শুঁকনো পাতা করে ঝংকার,
হলুদ পাখীটিও বারবার ছুটে আসে-বসে, ঘুমায়,
আমিও পাখিটির সাথে, পাখি হতে চাই।
নরম ঘাসের বিছানা—
আমি নরম ঘাসের বিছানায় ঘুমাতে চাই
বছরের পর বছর_
দূর্বা ফুলের ঘ্রাণ বাতাসে মিশে আছে প্রহর।
ভ্রমরা উড়ে—উড়ে ফুলে—ফুলে ঘাসে
আমার চোখে ঘুরে—ঘুরে ফুল ফুটায়
কোমল বাতাস মুখে মাখে ঘাসে-ঘাসে
ফুল হাসে—ভাসে, নরম ঘাসের আলয়।
এক দিন আমার গায়ে ঘাস চুপে-চুপে দেখে
স্নান শেষে লজ্জায় হলুদ আলো গায়ে মাখে।
ঘাসের বিছানায় ঘুমিয়ে শীতল হতে চাই
ভাবনাহীন সুখে_
যেখানে কেহ নেই, ঘাসের বন, ঘাসের আসরে।
কুয়াশায় ভিজে—ভিজে, আলোর পরশ ঘাসে
আমিও ভিজতে চাই ঘাসের আদর গায়ে ঘেঁষে।
চোখ মেলে দূর্বা ঘাস ফুল, চোখে মেখে-মেখে
বছর—বছর কাটাতে চাই, ঘাসের সাথে সুখে-দুঃখে।
আমার গাঁয়ের শীত
কুঞ্জ বনে গুঞ্জন করে ভোরের পাখি
ভোরের দোয়েল, শালিক, টিয়া রঙ্গন_
করে (আমার গাঁয়ের রূপের বাহার
সব গাঁয়ের ভিন্ন, যেন হরিণী ছিন্ন)
তিন্নও অভিন্ন কুহেলিও কিরন্ন হে–
যেন সাত রঙ্গে বাঁধা এ আমার বঙ্গ।
শীতের সকাল আসলো ধেয়ে এ গাঁয়ে
তুলাগাঁয়ের সোনা রূপের–রূপ ছুঁয়ে।
এ গাঁয়ে, রাখাল ছেলের বাঁশির সুরে,
মাঠের ফসল উলকি হাসে, সূর্য–চে।
ঐ বনের মধ্যস্থ পলাশ হাসে চুপে!
অদূর গাঁয়ের ছেলে–মেয়ে ছুটে আসে।
শীতে এমন সোনার দিনে সূর্য ডাকে,
আঁচল ভরা মা’র আদর অঙ্গে মাখে।
মায়ার গ্রাম
দেখিয়াছি তোমায় মনেরই মধ্যাহ্নে
হে অভিন্ন গ্রাম, সুবিন হরিণী রূপ
ছুটিয়া গিয়াছি বার ছুটন্ত পথিক,
ধানেরই সিঁড়ি সবুজ বৃক্ষের দ্বার।
পুকুরের মায়া মত্ত্ব করেছে আমায়
নিশিদিন (সরিষার ফুলের হলদে-
রঙ, রাঙ্গায়াছে আমার নয়ন প্রাণ)
বার বার গেয়ে যায় মন গ্রাম্য গীত।
হে গ্রাম্যই তুমি যে মোর চোখের মনি
তুমি যে মোর মনে—প্রাণে, অঙ্গের সঙ্গে।
হিরা বৃক্ষ এখনও জাগায় নিশিতে
নব্দর পায়ে পক্ষির ছদ্ম গাঁও বনে।
গ্রাম্যের পাশে বয়ে গেছে লেক একাকি
সাদা হাঁস স্নান করে গ্রাম্য রূপ ধারে।
সবুজ গাঁও
গাঁয়ের সাথে মিশে যেতে-যেতে
গাঁয়ের বহু স্বাদ লয়ে, তৃষ্ণা মিটেছে,
সবুজের বিছানায় চোখ পেতে-পেতে,
সবুজ খুঁজে-খুঁজে ইট-পাঁথর ভুলে গেছে।
প্রতিটা মুহূর্ত নরম ঘাসের স্পর্শ করতে-করতে
মন হারিয়ে গেছে পাখিদের মাঝে, আকাশের কাছে,
ধান ক্ষেতে গাঢ় সবুজ নরম পাতা দেখতে-দেখতে,
কচু পাতা, কলমিলতা উঁকি দিয়ে চেয়ে আছে।
আমি বারবার হারিয়ে গেয়েছি চোখ পেতে-পেতে
হলুদ পাখি, ঘাস ফড়িংয়ের খুব কাছে,
নারিকেল পাতা, তাল পাতার বাঁশি বাজাতে বাজাতে
উলঙ্গ শিশুদের সাথে ছুটে যেতাম পিছে-পিছে।
পুকুরের পাড়ে খেজুর গাছ থেকে লাপ দিতে-দিতে
মাছের সাথে খেলা করতে জর-সর্দি লেগে আছে,
সারা দিন পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতে-কাটতে
মা রেগে আছে, বুড়ো নানা হাঁকাতে-হাঁকতে আসছে
গাঁয়ের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে-ঘুরতে
ইট-পাঁথরের কথা মন থেকে মুছে গেছে,
যেতে চায়না মন গাঁও থেকে বাঁচতে-মরতে,
থেকে যেতে চায় মন জীবন-জীবন, সবুজ গাঁয়ে।
আমি বাঙালী
চার দিকে আকাশ নুয়ে পড়েছে বৃক্ষের ওপারে
পাহাড়, সাগর, বন, সীমান্তের ধারে_
এপারে ধানের খেতে মিশে-মাখে বাঙালির প্রাণ
বাঙালীর—বাংলা তুলেছে সবুজ নয়ন।
সরিষা ফুলে ফুলে আমি ভ্রমরা হয়ে
মধু লয়ে মিশাই বাংলার মুখে মুখে; স্বাদ ছুঁয়ে।
দোয়েল, শালিক, ঘুঘু, পেঁচা, বক, হাঁসটি_
রূপসী বাংলার বুকে নিজেরে দিয়েছে বিলিয়ে মিলিয়ে,
ভোরের বাতাস আমার দুঃখ দেয় ভুলিয়ে_
সূর্যের চোখে হেসেছে বাংলার বাটী, সবুজ হলুদ আঁটি।
অন্ধকারে জোনাকি জ্বলিতেছে রূপ জ্বেলে
বাঙালীর প্রাণ এই বাংলার বুকে, সুখ লয়ে কোলে।
রক্ত মাখা মাটিতে ছুঁয়ে যায় বুক, ময়ূর মেলেছে ডানা
ধূলিমাখা শরীরে রূপ ঝরিয়া পড়ে, আলো হয়ে;
ঘাস ফুল ফুটিতেছে রমণীর নয়নে—চেয়ে আয়না,
হাসিতেছে সবাই, মাটি মেখে গায়, বাঙালী হয়ে।
দেখিয়াছি কৃষকের মুখে লেপটে থাকা বাংলার হাসি,
সমগ্র বাঙালীর হাসি; কোকিল বাজাইতেছে বাঁশি।
আমি বাঙালী, বাঙালী, খাঁটি বাঙালী, বাংলার মাটি
বাংলা আমার প্রাণ, মাখিয়াছি মাটি, বাংলার মাটি।