গাঁয়ের পাড়ে বয়ে চলে পুকুরের জল,
সোনালি ধানের খেতে মিশে যায় মাটির সুবাস অবিরল;
সকাল বেলায় ঝলমলে উঠে নীল আকাশ,
হৃদয়ে জাগে এক অদ্ভুত, মধুর আশার পাথশালা আশে।
অই মেঘ মল্লিকা, গাঁয়ের সুগন্ধি কন্যা,
তোমার হাসিতে ফুটে ওঠে সবার মনে অনন্য রমনা;
চুলে বাঁধে কুটুম্বের স্নেহ, পায়ে দোলে হালকা ছন্দ,
প্রকৃতির কোলে বাজে তোমার নাম, প্রেমের অমর বন্দ।

বসন্তের হাওয়ায় ফুটে ওঠে বকুলের কোমল গন্ধ,
গাঁয়ের প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তোমার মধুর স্পন্দন;
পথে পথে হেঁটে যায়, মাটির কুঁড়িয়ে শূন্য নয়,
লোকেরা বলে, "মল্লিকা, তুই যেমনি আকাশে নেমে রয়!"
তোমার চোখে ঝিলমিল স্বপ্ন, নীরবতা ভরা সুর,
প্রকৃতির ঢেউয়ের মাঝে বাজে হৃদয়ের মিষ্টি দূর;
প্রত্যেক সকাল, প্রত্যেক দিগন্তে,
তোমার স্মৃতিতে সেজে ওঠে প্রাণের অনন্ত গীতি।

একদিন খেতের ধারে, ভোরের কুসুম হাসে,
পথের ধুলায় মিশে যায় মিলনের এক অনবদ্য আশা;
সেই দিন তোমার দৃষ্টি ও এক অনাথ কনের,
হৃদয়ের কোণে বাজলো প্রেমের প্রথম সুর, নিস্তব্ধ ও অবিনশ্বর।
তুমি ছিলে সেই মেঘ, স্বচ্ছ এবং মধুর,
তারার আলোয় ভেসে উঠেছিলো প্রেমের প্রথম পুর;
বুকের কোণে জমে ছিলো অজানা আকুলতা,
গাঁয়ের হাওয়ায় বয়ে গিয়েছিলো ভালবাসার দুলতা।

পাঁজরের পথে, সরু সরু গলিতে,
কথার মালা গাঁথে ভালোবাসার নীড়ে-নীড়ে;
বিকেলের রোদ্দুরে, ছায়া ও আলো মিলায়,
দুই হৃদয় হাতের মুঠোয়ে জীবনের গল্প লিখায়।
পুকুরের পাড়ে সুরের ঝর্ণা বয়ে যায়,
প্রতিটি ফোঁটা নিঃশব্দে তোমার স্মৃতি নিয়ে আসে,
মেঘ মল্লিকা, তুমি সেই নদী যেমন,
যে প্রবাহে ভেসে যায় অমল প্রেমের গাথা, মধুর ও প্রাণবন্ত।

তবু বাঁধা বাধা ঢেউয়ের মতো উঠে আসে গাঁয়ের কথা,
শুনে জানে সব, প্রেমের মধুর বাণী, হোক সৎ বা মিথ্যা;
কখনও হাসি, কখনও কাঁদা, জীবনের ছন্দে মিশে যায়,
তোমার মুখে ফুটে ওঠে সবার মনে প্রেমের আশ্বাস, অটল রয়।
জীবনের খেতে বয়ে চলে কত ব্যথা-কাহিনী,
তবুও প্রেমের বীজ বোনে যায় তোমার দীপ্তি, অমল ও পরিণত বিনি;
মেঘ মল্লিকা, তোমার স্পর্শে জাগে আশার সুর,
স্মৃতির পাতায় লেখা থাকুক তোমার নাম, জীবনের চিরন্তন গুর।

একদিন আকাশে মেঘ ঢেকে গেলো হঠাৎ কালো,
হৃদয়ের কোণে জমে গেলো অজানা ব্যথার আলো;
প্রেমের নিকটে ছিঁড়ে গেলো সেই মধুর মিলন,
বিচ্ছেদের আগুনে পোড়ালো স্বপ্নের নীল বিন।
নদীর কোলাহলে শুনে গেলো বিরহের সুর ভাঙা,
তবুও স্মৃতির মাটিতে ফুটলো তুমি, অমল রাঙা;
আঁধারের মাঝে জ্বলে উঠলো অন্তরের দীপ,
মেঘ মল্লিকা, তোমার প্রেম আজও করে হৃদয়ে শ্বেত।

শিশির ভেজা গাঁয়ের পথে ফিরে আসে আলোর খোঁজ,
অতীতের কাহিনী হয়ে ওঠে নতুন আশার গোঁস;
প্রতীক্ষার সুরে, নীরবে ফোটে প্রেমের নবজাগরণ,
স্মৃতির ঝিলিক হয়ে বাজে তোমার নাম, এক অনন্ত গাথা-সরণ।
তুমি ছিলে সেই মেঘ, যে ছড়িয়ে দেয় আশার বাণী,
হৃদয়ের প্রতিটি কোণে বাজে তোমার সুর, অমল, প্রাণের রাণী;
জীবনের বাঁকে বাঁকে, গাঁয়ের প্রান্তরে,
তোমার গল্প রয়ে গেলো, রক্তে-সুরে, প্রেমের অপার চরণরে।

ঝর্ণার মত নিরব সুরে গাঁয়ের গলিতে বাজে,
তোমার কন্ঠে মিশে যায় প্রকৃতির এক অনন্ত সাজে;
প্রকৃতি বলে, "এমন হাসি, এমন মনমোহন চরণ,
জীবনের পথে আলো জ্বলে, তোমায় নিয়ে প্রতিটি মরণ।"
পাহাড়ের কোলে, নদীর তীরে,
তোমার স্মৃতির মাধুর্য ভাসে, যেমন সোনালি সুরের বারে;
প্রকৃতির আঁচলে, রোদ্দুরের নুপুরে,
মেঘ মল্লিকার নাম গাঁথা থাকুক, চিরন্তন, নিরুপুরে।

মাটির গন্ধে, ফসলের রঙে, ফুটে ওঠে স্মৃতির সুর,
প্রত্যেক প্রান্তরে বাজে তোমার চিরন্তন, মধুর দুর;
যেমন ধানের খেত ধীরে ধীরে শস্য দেয়,
তেমন প্রেমের বীজ তোমার নামে হৃদয়ে ফুটে থাকে, রয়ে যায়;
শরতের হাওয়া, বসন্তের স্নিগ্ধতা,
মেঘ মল্লিকার নামে জাগে নতুন প্রাণের সততা;
গাঁয়ের নীরব পথে, বাঁশির সুরে,
জাগে স্মৃতির জ্যোৎস্না, প্রেমের অমল ছন্দে, ভরে।

সদা স্মরণীয় হোক সেই মেঘের মৃদু নাচ,
মেঘ মল্লিকা, তোমার প্রেমে ভরে থাকুক গাঁয়ের প্রতিটি আচ্ছ;
যুগে যুগে বয়ে যাক তোমার অনন্ত, মধুর গান,
যারা পথিক, শুনুক চিরন্তন প্রাণের বাঁশি-তান;
বাঁশির তানে, রোদ্দুরের স্নিগ্ধ আলোয়,
তোমার নাম চির অমর থাকুক, হৃদয়ের সর্বদা সজাগ ছায়ায়;
মেঘের মায়ায়, প্রেমের সুরে, হৃদয়ের অমল বুকে,
মেঘ মল্লিকা, তুমি থাকো—জীবনের প্রতিটি নতুন শুক।