কবিতাঃ একচেটিয়া।
লেখকঃএস,এইস,মানিক
এক চেটিয়া ব'সে আছে পুকুর পাড়ের ধারে,
মুখটা গোমড়া, যেন মেঘ ঢেকেছে জ্যোৎস্না রাতে।
পিঠে তার ঝুলছে বোঝা, গায়ে মলিন চাদর,
হাজার ভাবনার বোঝায় ক্লান্ত, তবু নেই সে আদর।
পাড়ার লোকে তাকে বলে, "ওই যে অলস বেকার!"
মনে মনে সে হাসে, ভাবে, "আমি রাজা একাকার!"
হাত মেলে ধরলেই নাকি ধরা দেয় তার সুখ,
কিন্তু মেঘে ঢাকা রোদ্দুরে মিলায় সবই দুখ।
এক চেটিয়া দিন কাটায় পুকুর ধারে ব'সে,
মাঝে মাঝে ভাবুক চোখে আকাশপানে চেয়ে।
পুকুরের মাছেরা টিপটিপ খেলে জলে ভেসে,
সে ভাবে, আহা, তার জীবন কি তবে শুধু তৃষ্ণার দেশে!
একদিন পুকুরপাড়ে এল এক নীল চিল,
ডানা মেলে বলল, "চলো সখা, দূরে চলে মিল।"
এক চেটিয়া ম্লান হেসে বলল, "আমার ডানা কই?
এই বোঝা ফেলে উড়ব আমি—সে তো স্বপ্নময়!"
চিলটি হাসল, বলল, "তুই যে বেঁধে রেখেছিস নিজেকে,
স্বপ্নেরা উড়ে গেছে তোর বাঁধনেরই ফাঁদে।
যে বোঝা তুই ধরে আছিস, তা তো ছিল বাতাস,
মুঠি খুলে দেখবি তখন, কোথায় দুঃখবাস!"
এক চেটিয়া চমকে উঠে খুলল বুকের বাঁধ,
মনের আকাশ মুছল যেন ঘন কালো কাঁদ।
ডানায় ভর দিয়ে সে এবার হল নীল আকাশ,
পুকুরপাড়ে বাজল শুধু আনন্দেরই শ্বাস।
এক চেটিয়া আর ব'সে থাকে না পুকুর পাড়ে,
এখন সে উড়ে বেড়ায় দিগন্তেরই ধারে।
মুক্তি যে তার নিজের ছিল হাতের মুঠোয় লুকায়,
শুধু একবার সাহস চাই—দুঃখ দূর হোক আকাশ ছুঁয়ে।