কবিতাঃদেয়ালের ওপারে
লেখকঃ এস,এইস,মানিক

দেয়ালের ওপারে কী আছে, জানো কি?
অদেখা এক স্বপ্নজাল,
অসংখ্য না বলা কাহিনী,
অপূরণীয় সব আকাঙ্ক্ষা—
যা কখনো প্রকাশ পায় না,
থাকে শুধু লুকিয়ে ইতিহাসের অলিন্দে।

বাংলা সাহিত্যের অপার ভাবনারা
খেলা করে দেয়ালের এই পাশে,
যেখানে রবীন্দ্রনাথের কবিতা,
নজরুলের বিদ্রোহ,
জীবনানন্দের নির্জনতা—
এক হয়ে বয়ে চলে নিরন্তর এক স্রোতধারায়।

আমরা শুধু দেখি দেয়ালের এপাশের আলো,
এই আলোয় ফুটে ওঠে আমাদের পরিচিত চেনা ছায়া,
কিন্তু জানো কি, দেয়ালের ওপারেও আছে
এক সমান্তরাল জগৎ, যেখানে আমাদের
অপর পূর্ণতা, অন্য রূপের প্রতিবিম্ব।

দেয়ালের ওপারে থাকে সেই বিস্মৃত আবেগ,
যা ভাষাহীন, অথচ শব্দের চেয়ে গাঢ়।
যেখানে ছুঁতে পারো তুমি
কাজী নজরুলের দুঃখিনী বাংলার আহ্বান,
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত বাতাসে
মুক্তির এক অদৃশ্য অনুরণন।

ওপার থেকে ভেসে আসে
সেই প্রাচীন নদীর গানের সুর,
যা এক সময় শুনেছিল বাউল ফকির লালন,
যার প্রতিধ্বনি বাংলা সাহিত্যের
প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে,
অমর এক শিকড়ের স্পর্শে।

দেয়ালের ওপারে আছে সেই চিন্তাধারা,
যা আমাদের পরাধীনতা আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি—
যেখানে কবিগুরুর "বঙ্গমাতা" আর বিদ্রোহী কবির
"চির উন্নত মম শির"।
সেখানে বসন্ত আসে,
আসে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি,
আসে কাশফুলের দোল,
যা বাংলার হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে
সবসময়, চিরকাল।

ওপারেই তো আঁধারের মাঝে
লুকিয়ে থাকে এক আলো,
যা সাহিত্যের প্রতিটি লাইন,
প্রতিটি ছন্দে বুনে চলে এক অজানা স্বপ্ন।
বিভূতিভূষণের পথের সাথি,
বঙ্কিমচন্দ্রের দেশপ্রেম,
সেই শিকড় যা আমাদের বাঁচায়,
আমাদের টিকিয়ে রাখে এই সৃষ্টির বাঁধনে।

আমরা যদি একদিন সেই দেয়াল ভাঙতে পারতাম,
তবে হয়তো দেখতে পেতাম
সেই চিরকালীন অমর রূপ,
যেখানে সাহিত্যের প্রতিটি শব্দ,
প্রতিটি ভাবনা এক নতুন পরিধিতে ছড়িয়ে পড়ে—
অসীম আকাশে যেমন তারারা ছড়ায়,
তেমনি করে ছড়িয়ে যায় বাংলার অনন্ত কাব্য,
মনের গহীনে রেখে যায় আলোর স্বপ্ন।

তবে হয়তো এমনও হতে পারে,
দেয়ালের ওপারেই আমাদের সত্যিকারের বসবাস,
যেখানে আমরা দেখি না, বুঝি না—
তবু অনুভব করি সেই অপরূপ বাংলা সাহিত্যের আকাশ,
যা শুধুই আকাশ নয়,
আমাদের সমগ্র অস্তিত্বের এক চিরন্তন ছায়া।

- "দেয়ালের ওপারে"