হাতে হাত রেখে ছেলেটি বল্ল- আপনি শিমু?
আমি বল্লাম-হ্যা।আপনি ভর্তি হবেন নাকি?(আমাদের কলেজে তখন ভর্তি পরীক্ষা চলছিল।)
-না। আমি খুলনায় পড়ি।
-ও...ঠিক আছে। আজ খুব গরম লাগছে।
হাটতে হাটতে সেকেন্ড কয়েক নিরবে কাটল। ছেলেটি আবার আমাকে বল্ল-দাদা অাপনার সঙ্গে একটু কথা বলব।
আমি ঠিক আমার মত থেকে (স্বাভাবিক) বল্লাম-আচ্ছা, বলেন। হাটতে হাটতে ফাকা জায়গা তে চলতে লাগলাম। এরই মাঝে সে আমাকে একটি প্রশ্ন করল।
-আপনি কি একটা চিঠি দিয়েছেন?
প্রশ্নটা শুনামাত্র আমি ভিষণ বিষ্মিত হলাম। ভাবলাম কি ব্যপার! আমি মিনিট খানেক চিন্তা করতে করতে হাটতে থাকলাম। ছেলেটি আবার বল্ল- অাপনার কোন ভয় নেই।
তবুও চিন্তা আমাকে ছাড়ল না। এবার অামি স্বাভাবিক হয়ে বল্লাম-হ্যা, চিঠি একটা লিখেছি, কিন্তু কাকে তা অামি জানিনা।
-সে আমার বোন।
-নামটি কি আপনার বোনের? প্রশ্ন আমার।
-কবিতা, চিনেছেন?
-হ্যা, ঠিক আছে, এখন বুঝতে পারছি। আমি লিখেছি।
-চিঠি দেখে বুঝলাম আপনার কোন খারাপ মন ছিলনা।
-হ্যা, তখনো আমার কোন খারাপ মন ছিলনা, এখনো নেই।
-আপনি বন্ধু হতে চেয়েছিলেন?
-একথা সত্য। আসলে এখনো আমার খারাপ মন নেই।
-আসলে ও এরকম মেয়ে নয়, ওসব পছন্দ করে না। ও তো রেগে গিয়েছিল।ও বলছিল : “আমার কি বন্ধু নেই? আমার কি বন্ধুর অভাব?” বুঝতেই তো পারছেন কেমন মেয়ে। একে বারে নরম প্রকৃতির।
আসলে কি কথা সে বলতে চাইছে তা আমি অনুমান করে নিয়েছি অনেক আগে। আমি বল্লাম-
সে যদি বন্ধুত্ব করতে না চায় তবে সমস্যা নেই। আসলে আমার কোন খারাপ মানষিকতা তখনো ছিল না, এখনো নেই।
-আর ওর বিয়ে ঠিক হচ্ছে। ছেলে দেখা চলছে। এ সময় যদি এভাবে চিঠির কথা জানাজানি হয় তাহলে একটু সমস্যা তো হয়। আমি বল্লাম -ঠিক আছে। কোন  সমস্যা হবে না।
-বুঝেন তো আপনি শিক্ষিত ছেলে আপনাকে আমার না বুঝালেও চলবে। কিন্তু যদি অশিক্ষিত হত তাহলে না হয় অন্য কথা।
-আচ্ছা, ঠিক আছে । কোন সমস্যা হবে না।
-আপনি কোন বিভাগে পড়েন?
-বানিজ্য।
-এস এস সিতে কোন গ্রেড ছিল?
-“বি” গ্রেড।
-আমার বোন এবার পরীক্ষা দিয়েছিল।
-ওর রেজাল্ট ভাল হয়েছে তো? আমার প্রশ্ন।
-হ্যা,
-কোন গ্রেড?
-“বি” গ্রেড।
-ভাল। আমি বল্লাম। অাপনি কি একা এসেছেন?
-না, আমার এক দিদি এসেছেন। তা হলে আসি দাদা, কিছু মনে করবেন না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আপনিও কিছু মনে করবেন না। আসলে ভুল বুঝাবুঝি তো হয়ে থাকে মানুষের।
আর একবার হাতে হাত মিলিয়ে বিদায় নিল।

(আমি শুধু মনকে বলেছিলাম। এতটা দরকার ছিলনা। শুধু চিঠির উত্তরে “না” শব্দটি লিখে দিলেই হত।-চাইলাম কি আর পেলামই বা কি।)

ঠিক দিনটি মনে নেই-২০০২ সনে ঘটে যাওয়া আমার জীবনের প্রথম কোন রোমন্সকর ঘটনা। পুরোনো কাগজ উল্টাতে গিয়ে আমার লেখা সেই চিঠিটির খসড়া চোখে পড়ে আর মনে পড়ে সেই অদেখা কবিতার পাঠানো (জানি না তার পাঠানো কিনা) ভাই-বোনের কথা।  

চিঠিটি ছিল এরকম :
আপনাকে
         আমি কোনদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। অতএব এটা স্পস্ট হয় যে, আপনার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই। তবে আপনার নামটা আমার খুবই পরিচিত। তাই পরিচিত নামে একটি চিঠি লিখলাম। কিছু মনে নেবেন না।
          
         আপনি অপরিচিত হলেও আপনার সাথে আমার একটা বড় মিল আছে। সেই মিলের অধিকার নিয়েই আমি আপনাকে লেখার প্রয়াস পেয়েছি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। একটা মিল হচ্ছে আপনি যে পৃথিবীর মানুষ আমিও ঠিক সেই পৃথিবীর মানুষ। তাই আপনি অপরিচিত হলেও আপনাকে চিঠি লেখার অধিকার আপনি না দিলেও আমি পেয়েছি। আর একটা বড় মিল হচ্ছে- আপনি প্রতিনিয়ত যে বায়ু গ্রহন করে ত্যাগ করছেন এবং আপনার জীবন বাচিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন, আমিও সেই একই বায়ু গ্রহন করে জীবন রক্ষা করছি। আপনার শরীর যে বায়ু স্পর্শ করছে আমার শরীরেও সেই বায়ু স্পর্শ করছে। তার মানে আপনার শরীরের সংগে আমার শরীরের স্পর্শ রয়েছে এটা মিথ্যা নয়। শুধু চোখের দেখাটুকু বাকি রয়েছে।হয়ত একদিন দেখা হয়েও যেতে পারে। এই খুলনায় থাকলে। সেদিন হয়ত চিনতে পারব না, আপনিও হয়ত চিনতে পারবেন না। এটা স্বাভাবিক, তাই নয় কি? অপরিচিত জন কে চেনা বড়ই কঠিন। আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু কঠিন বাস্তবতার ভিতর দিয়েই জীবন কাটাচ্ছি।

যাক সে সব, ইতি মধ্যে অনেক কথাই লিখে ফেল্লাম। আর একটু খানি লিখব।

শরৎচন্দ্রের একটি উপন্যাস পড়তে গিয়ে আপনার ঠিকানাটা পাই। একটি পরিচিত মিষ্টি নাম দেখে চিঠি লেখার সাধ জাগে।ও, হ্যা! আপনার সংগে আমার আর একটা মিল খুজে পেয়েছি। সে হল-আপনার ঠিকানায় আপনার বাবার নাম(হয়তো হবে) লেখাছিল। আমার বাবার নাম ও ঠিক তাই.........। দেখুন কত মিল। এর পরও আপনি আমার অপরিচিত থাকবেন?

শুনেছি চিঠিতে নাম না থাকলে সেটা বেনামী চিঠি হয় । আমি কিন্তু নাম দিয়ে দিলাম। উত্তর পাঠাবেন কিন্তু। আমি প্রতিক্ষায় রইলাম।
                                                ইতি -
                                                     শিমু