বিগত এক যুগ হতে আমার বুকের ভেতর যে ক্ষোভ জন্মেছে,
তা হয়তো আজও বহিঃপ্রকাশ করা সম্ভব হবে না।
ব্যর্থতার যে ঊর্ণাজাল আমার জীবনকে আজও ঘিরে আছে,
তা হয়তো কোন কালেও পরিষ্কার হবে না,
কারণ রবী-ঠাকুর যখন বনফুল লিখতে বসেছিলেন তখন কি আর তিনি ভেবেছিলেন,
কয়েক পাতার লিখায় হয়ে যাবেন তিনি বিশ্বকবি?
কিন্তু আমি যে ভাবি! দুটো কথা যখন লিখতে বসি তখনই নিজেকে রবী ঠাকুরের আসনে বসিয়ে নিজের স্তব গানে মত্ত হয়ে যাই আর পরক্ষণে পরঃনিন্দা আর পরঃচর্চা তো আছে বটেই।
এদিকে কেউ লিখা বাজে বল্লে অমনি গাল ফুলিয়ে বসে থাকা!
নয়তো রেগে গিয়ে লৌহ মানবের ন্যায় কষিয়ে দুটো থাপ্পর বসিয়ে দেয়া।
রাগের মাথায় হাত খানি যে কোথায় গিয়ে পড়ল তা আর ফিরেও তাকাই না।কারণ মাঝে মাঝে তো গণ্ডদেশে লেগে যায়, আর তখনই যত বিড়ম্বনা!যাই হোউক কবি বলে কথা, ভেতরের সব উচ্ছাস, আবেগ আর অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ না করলেই যে নয়।
আবার যে কবি নামের উপাধিতে ভূষিত হওয়ার জন্য এতো পরিশ্রম, কেউ যদি সেই কবি বলেই সম্বোধন করে তখন পায়ের রক্ত মাথার চুলের আগায় উঠে লাফাতে থাকে, আর তখন আমি আবার হয়ে যাই সেই লৌহ মানব। কেননা আমার তখন মনে হয়, আমাকে নিয়ে যেন উপহাস করছে। আর লোকে ভাবে কবিরা হয়তো এমনই হয়। কিন্তু আমি বলি, যারা এরূপ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তারা কবি নন, মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। আর নিজের সুনাম পেশি-শক্তির বিনিময়ে পাওয়ার জন্য লড়াই করেও যখন তাদের ঝুলি শূণ্য, তখন সে আঘাত তাদেরকে মানসিক ভাবে ব্যতিগ্রস্ত করে তোলে। আর তখন তাদের জায়গা একমাত্র শূণ্য ঘরের কোন এক কোণে নয়তো তাদের সমগোত্রীয সহোদরদের সাথে।
আর আজ আমি তাদের দলেরই একজন আন্যতম সদস্য। কারণ লোকে যখন আমার পান্ডুলিপী পড়তে চায় তখন আমি নিজেকে মনে করি সেই মাপের কবি, আর পান্ডুলিপী পড়ার পর তার অনুভূতি দেখে নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রাণী রূপে দেখতে পাই।
কিন্তু আজও আমি নিজেকে কবি বলেই পরিচয় দেই এবং লিখে যাই নিজের মতো করে।
আজ আর নিজেকে রবী ঠাকুরের স্থানে বসাই না, তবে আমরা যে সমগোত্রীয় তা বুঝে নিতে আর সমস্যা হয়না।
তাই ভাবছি লিখে যাব অনন্তকাল পর্যন্ত, যতদিন না বার্ধক্য আমায় ছোঁয়ে যাবে, চোখের জ্যোতি কমে যাবে,
শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাবে, স্মৃতিশক্তি ফুরিয়ে যাবে। আসলে আমি কবিতার নেশায় আসক্ত মানব।
তাই একটা নোবেল তো আশা করতেই পারি!