তোমার পুরনো বাড়িটাতে    
কতো রাত কাটিয়েছি আমরা এক সাথে  
একদিন চিলে কোঠায় নিয়ে গিয়েছিলে আমায়
মনে আছে?
আকাশে তখন রক্তিম আলোর আভা
পাখীরা কিচির মিচির করে খাবার খুঁজতে বেরুচ্ছিলো মাত্র  
তুমি আমি
পাশাপাশি হেলান দিয়ে একটা সকাল হতে দেখেছিলাম দুজনে।  
তুমি একমুঠো কাঁচা রোদ আমার মুখের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বলেছিলে
“তুমি কাঁচা রোদের মত আলতো উষ্ণতা আমার”
আমি চোখ বুজে তোমার দেয়া উষ্ণতা মেখে নিয়েছিলাম দু’চোখে।  

যেদিন ভুমিকম্প হল-
তোমাকে হারাবার ভয়ে থমকে গিয়েছিলাম আমি।
বুকের ভেতর কামড়ে ধরেছিলো শুন্যতা ।  
চোখের সামনে ভেঙ্গে যাবে তোমার পৃথিবী
নিরুপায় আমি তাকিয়ে থাকবো কেবল।
অনড় হয়ে দেখবো শুধু
ভেঙ্গে যাওয়া পৃথিবী তোমার -  
এমন একটা ভয় আমায় এলোমেলো করে দিয়েছিল ।
কিন্তু তুমি ছিলে সাহসী যোদ্ধা সেদিন।

তোমার বুকে মাথা রেখে বৃষ্টি দেখেছি কতোবার।
ঝড়োঝড়ো শব্দে নেশা হয়েছিলো আমাদের  
ডুবে গিয়েছিলাম দুজনে আবেগের মহাসমুদ্রে।
বুকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ  
হৃদয় ছাড়িয়ে আরও অনেক বেশি গভীরে।
সুরের বৃষ্টিতে ভিজিয়েছিলাম মন দুজনে।
তুমি ছিলে অনেক আকাঙ্ক্ষিত প্রেমিক সেদিন।  

যে রাতে জোছনারা মেলা বসিয়েছিলো
সে রাতে দেখিয়েছিলে এক নক্ষত্র আমায়।
বলেছিলে, ‘ওই অজানা নক্ষত্রটি তুমি,মায়ার প্রহরী হয়ে জ্বলছো নিশিদিন’    
‘নক্ষত্র আমি’ সঙ্গী তোমার নিঃসঙ্গতার।  
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া নির্বাক অনুভূতি।  
নিস্তব্ধ চারিধার  
বাতাসে শুধু জোনাকিদের শব্দ।
আধার কেঁপেছিল গভীর অনুভূতির ভারে।  
তুমি ছিলে নক্ষত্র রাজা সেদিন আমার ।  

একদিন ভেবেছিলাম...
হঠাৎ তোমার ওই ঘরটাতে যেয়ে চমকে দেবো তোমায়  
লুকিয়ে থাকবো দেয়ালের ডান পাশটায়
পাছে পাশের বাড়ির বিরক্তিকর লোকটা না দেখে ফেলে।
ভেবেছিলাম জানালার পাশে আড়াল হয়ে জড়িয়ে ধরবো তোমায় ।
যে কথা আজও বলা হয়নি মুখের ভাষায়
হৃদয় ঢেলে দেবে তা উজার করে
হৃদিধামে বাজবে সুর ভালোবাসারই ঘায়ে ।
তোমার হৃদয়ে গড়ে দিতে চেয়েছিলাম তাজমহল এক।  
হয়ে ওঠেনি -
তুমি ছিলে নিতান্তই অবুঝ,
চিরহেয়ালি
নির্লিপ্ত নিষ্ঠুরতা কেবল ।

একটা স্বপ্নের কারখানা ছিলো তোমার ওই ঘরটা  
নতুন স্বপ্নেরা জন্ম নিতো যেখানে নিত্য।  
এখন স্বপ্নেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চারিদিক।
এদিক সেদিক সবদিক
ছড়ানো স্বপ্ন দিয়ে মালা বুণতে পারি না আর আগের মতো...
স্বপ্নের কারখানাটিতে এখন বিশাল এক লৌহকপাট
ভালোবাসা নিষিদ্ধ সেখানে ।
স্বপ্নরা অবরুদ্ধ ।