আমি বলি,
আমি তোমারই মতো ...
এই কলিযুগের পরাশর সংহিতায়
আমি তুমিই ...
বা তুমিও, আমিই।

আজন্ম নিপীড়নের শাপে আজ নোংরা, ক্লিশিত, কূটগন্ধী তোমার দেহ,
তোমার সম্ভ্রমে লেপ্টে আছে
ছলকপটের মানবতা আর নিষ্পেষিত লজ্জায় বোনা
রিলিফের ছিন্ন আবরণ।

বিবশ দৃষ্টিতে ছানিভেদী শঙ্কার প্রগাঢ় অনুষ্ণতায় তুমি দেখছো
রাজনীতির মলাটে জনপ্রতিনিধিদের পঙ্কিল রমণযোগ।

বিদ্রূপ আর অপমানের প্রবচন ঠিকরে তুমি স্পষ্ট শুনতে পাও
উন্নয়নের শিরোণামে মহাজ্ঞানীদের সেমিনার, বা
ইতিহাসের সংকলনে ত্রুটি সংশোধনের সংবাদ প্রতিবেদন ...

দেহসারহীন নুব্জ্য ক্লান্ত মেধা নিয়েও তোমাকে বুঝতে হয়
বিত্তবানদের সামাজিক দায়বদ্ধতার দর্শন,
হাততালি দিতে হয়
টিকে থাকার লড়াই-এর ফাঁকে
দূষণের বৃষ্টিভেজা বৈদ্যুতিক তারে বসে
এক ঝাঁক কাকের মতো মধ্যবিত্তরা যখন
পথচারীর মাথায় বিষ্ঠা ফেলার খেলা খেলে ....
সহ্য করতে হয় তাদের ঋণগ্রস্ত ঘি খাওয়ার আয়োজন
অথবা জমিবাড়ির তাড়নায় অনৈতিক লিপ্সায় মঁজে
ময়ুর সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
“লাইফ ইজ গুড” পোস্ট দেয়ার
অদম্য লোভ।

বিশ্বাস করো ... আমিও তোমারই মতো ...
এই সামাজিক প্রথার পেষণে
কলম হাতে
আমিও কিন্তু তুমিই।

আমৃত্যু ভাবনাহীন বিপণন-কাব্যের অর্থদাহে পোড়া আমার হৃদয়,
লেখা বেচে দরদামের বাজার করি ফিউচার পার্কে ...
মননে সেঁটে আছে ব্যপদেশে মোড়া
মোহন কথামালার আবেশে কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ।

নিগূঢ় নজরে লোলুপ প্রতীক্ষার আড়ম্বরে আমি নিত্য খুঁজি
নেতার ভাষণে হঠাত ফুঁড়ে ওঠা আমার কবিতার উদ্ধৃতি।

অবহেলা আর অবজ্ঞার জাল ছিঁড়ে আমি ঠিকই বেছে নেই
শুদ্ধ সাহিত্যের টিকিটে আধুনিক বেদব্যাসদের আলোচনাসভা, বা
সংস্কৃতি পরিশোধনের তাগিদে সংস্কার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন ...

বিবেকহীন মূল্যবোধে পরিশ্রান্ত মেধা নিয়েও আমাকে বুঝতে হয়
কাব্যের বাণিজ্যিক চাহিদায় যোগানের তত্ত্ব,
সাধুবাদ দিতে হয়
রেটিং জনপ্রিয়তার যুদ্ধের অবসরে কাব্যমানের বাকবিতন্ডা,
আর রটনা-নাটকের তারকাঁটায় আলখাল্লা আটকে
সমব্যথীদের অন্তর্বাস ঢেকে রাখার ব্ঁচক লজ্জা দেখে ...

হজম করতে হয় কুম্ভীলকবৃত্তির পারস্পরিক জালিয়াতি-চুক্তি,
অথবা পুরষ্কার আর স্বীকৃতির অপ্রাপ্তি-ক্ষোভে রেগে
ভাববাদীর ঢঙে, প্রহসন বর্জনের ঘোষনাতে
নীললোহিতের “কেউ কথা রাখেনি” কবিতার
চরণ-রোমন্থন।

তুমি আমি জানি ...
কখনও আমাদের ছিলো নবজাতকের মসৃণ ত্বক,
জঠরের রক্তমাখা পবিত্র তরলে মাখানো কোমল মুখশ্রী,
শিরায় ধমনীতে ছিলো অর্ষমার পূত আলোকের বর্ণে নিষ্কলঙ্ক রুধির।

কিন্তু এখন আমার আমিটা বলে তুমি অভাগা ...
তুমি কবির অপারগতার জীবন্ত প্রামাণিক তথ্য,
তুমি রাওলসের উন্নয়ন-বিবর্জিনের নিম্ন-সূচক ...
কল্যাণ-প্রারম্ভের প্রথম ধাপ।

আর আমার আমিটার আত্মকথনের পালায়
হঠাত আবির্ভূত বিবেক বলে,
তোমার তুমিটায় আমি একজন সামাজিক পশুমাত্র ...
কবির মুখোশে কাব্যিকতার বাণিজ্যিক রাক্ষস,
মানবিকতার বচনে দানবিকতার সমম্বয়ক,
অথবা ...
এই কলিযুগের পরাশর মুনির রতিনীতি শ্লোক-বরে
যোজনগন্ধার রচয়িতা ...

সমাজ তোমাকে হতদরিদ্র বা ভিখিরি বলে স্বস্তির ঘুম ঘুমোয় ...
আর নিদ্রাহীন রাতে
আমার ফলোয়ারের দল
আমায় বলে
প্রিয় কবি।