রাতকে জড়িয়ে কুয়াশা ;
হিমশীতল শিহরণ জাগানো ।
আঁধার কাটানো মিষ্টি রোদের উঁকি,
যেন উষ্ণতা প্রলেপ লেপা,
কিংবা ঘাসের ওপর ছড়িয়ে থাকা শিশির ,
যা পুলকিত করে মন।
কতদিন ছুঁই নি, কতদিন অনুভব করিনি ,
আচ্ছা কোনদিন আদৌ অনুভব কি করেছি?
নাকি সব বয়সের ধোঁকা, মগজের খেলা।
আচ্ছা ছেলেবেলায় তেপান্তরের মাঠের খেলা,
পুজোর মেলায় দুই পয়সার জিলিপি আর নাগরদোলা;
ওগুলো কি সব সত্যিই ছিল আমার জীবনে?
মনে পড়ে এক পৌষের মেলায় দেখেছিলাম তাকে।
তার চেহারা মনে পড়ে না;
শুধু মনে পড়ে তার সেই মায়াবী চোখ;
যে চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি পঞ্চাশটি বছর।
সুখে দুঃখে কাটিয়েছি জীবন, পাশেই তো ছিল সে;
কিন্ত কোথায় যেন হারিয়ে গেল, ফাঁকি দিয়ে ,
ঠিক যেমন ফাঁকি দিয়েছিলেন বাবা।
আমার না , বাবাকে ও মনে পড়ে না;
শুনেছি সমুদ্রের সাথে যুদ্ধ করতেন তিনি।
স্রোতের বুক চিঁড়ে আমাদের জন্য অন্ন শিকার করতে করতেই নাকি সমুদ্রের শিকার হয়েছেন।
এখন আর আমার কান্না পায় না,
যাদের মনেই থাকে না তাদের জন্য কি মন খারাপ করা যায়?
তবে কি জানেন একজনকে আমি ভুলিনি
তিনি আমার মা, তাকে ভুলিনি কারণ উনি আমাকে কখন ছেড়েই যান নি।
ছায়ার মত থাকতেন তিনি, খেলতেন খাইয়ে দিতেন আমায়, কখনো বকতেন না।
তাকে দেখতে ঠিক দুর্গার মত, গায়ে ছিল মিষ্টি বকুলের মত গন্ধ।
হিংসুটেরা বলত, আমি নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছি, বাবাকে বলত আরেকটা বিয়ে করতে , আরেকটা মা পেলে নাকি আমি ঠিক হয়ে যাবো। বলুনতো এক মা থাকতে আরেক মা লাগতে যাবে কেন?
কিছুদিন হল মাকে দেখি না, কিন্তু তার ডাক শুনতে পাই,
উনি আমায় ডাকছেন, নদীর ওপারে।
আচ্ছা গাছে কি এখনো শিউলি ফুল ফোটে?
পাকা ধানের গন্ধে কি পৌষের মেলা বসে?
আজও কি মানুষ সমুদ্রের সাথে যুদ্ধ করে?
তেপান্তরের মাঠে কি আজও খেলা হয়?
পাকা ধান, ঘাসের শিশির, মিষ্টি রোদ, কুয়াশা
এরা কি আজও আছে , মনে করে কি আমায় তারা?
কিছুই মনে পড়ে না আমার এখন ঐ বকুলের গন্ধ ছাড়া।