শেখ জালাল
ভাদ্রের সে ভদ্ররাত দুধ-সাদা শিশুটির মতো নরম-কোমল ছিলো
ফজরের আযানের ধ্বনিতে চারপাশ পবিত্রতায় ভরা ছিলো
সে রাতে খই ফোটা সাদা সাদা নিষ্পাপ তারায় আকাশ ঢাকা ছিলো
অদ্ভুত ঝাড়বাতির মতো জ্বলছিল আর নিভছিলো তারা গুলো।
গাঢ়রূপে ঝলমল করছিলো ভাদ্রের তালপাঁকানো সে রাত
রুপবিস্তারে ঢলে পড়ছিলো আশা জাগানিয়া চাঁদ।
সে রাতে বাতাসে হাজার ফুলের সুবাস মাখানো ছিলো
গাছের কচি সবুজ পাতায়, পাতায় কবিতার ছন্দ ছিলো
সে রাতে পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে আনন্দের গান ছিলো।
বাড়ির উঠোনে স্বজন, প্রতিবেশীদের অপেক্ষার উন্মাদনা ছিলো
আকাশ ফুঁড়ে কখন আসবে নবাগত অতিথি?
মায়ের গর্ভকোষ ছিঁড়ে কখন ভূমিষ্ঠ হবে নিষ্পাপ অতিথি
প্রতিটি প্রাণে প্রাণে সে প্রশ্ন ছিলো।
আহা কি যে সে মধুর অপেক্ষা!
কি যে সে ভালোলাগার প্রতিক্ষা!
কে কার আগে দেখবে কচিকাঁচা নিষ্পাপ সে বদন
নাড়ি ছেঁড়া ধন বুকে জড়িয়ে কে দিবে প্রথম চুম্বন।
সে রাতে মনের গহীনে হাজার নামের বন্দনা ছিলো
ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবানের কাছে সকলের একই প্রার্থনা ছিলো।
আতুরঘর জুড়ে জাঁকজমক আয়োজন ছিলো
ভয় ছিলো, সংশয় ছিলো, উৎকন্ঠায় আশাও ছিলো।
অতিথি আসবে নিশ্চয়...
অতিথি আসবে শূন্য ঘর পূর্ণ করে দিতে,
ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে দোলনা
মেলা থেকে আনা হয়েছে রঙিন সব খেলনা।
খেলনা আনা হয়েছে মানচিত্র আকা ভূগোল
জাতীয় মাছ , জাতীয় পাখি আর জাতীয়, ফল, ফুল।
সে রাতে অতিথি আসবে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধিতে তাই
অতিথি আসবে সে প্রতিক্ষা ছাড়া কারো চোখে ঘুম নাই।
ভাদ্রের সে রাতে সত্যি সত্যি অতিথি এলো খোদার দুনিয়ায়
প্রিয় অতিথির নাম রাখা হলো ''পার্থ রায়''।
অতিথির হাসি মাখা মুখ আর মাথা ভরা বাদামি কালো চুল
মায়া ভরা মুখ আর দুধ-সাদা শরীর ছুঁয়ে ঈশ্বরের প্রার্থনায় মশগুল।
যেন আধার ঘরে চাঁদের আলো ছড়িয়ে গেলো
বাঁধভাঙা আনন্দে চারপাশ ভরে গেলো।
বাতাসের বেগে অতিথি আসার খবর ছড়িয়ে গেলো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে,
খবর ছড়িয়ে গেল শহর, নগর-বন্দরে।
আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হলো শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন........