কোন কবিতা আবৃত্তি করতে আসি নি।
এসেছি একটা গল্প বলতে।
না এটা কোন ভাই হারা বোনের গল্প নয়,
নয় কোন ছেলে হারা মায়ের নীল কষ্টের প্রতিচ্ছবি।
তার তো দুকূলে কেউই ছিলনা!
হারাবে কেমন করে?
তবে হ্যা, এটা একটা ভালোবাসার গল্প।
পরিপূর্ণ ভালোবাসার গল্প।

একদিন তার মতই একজন কে পথের ধারে খুঁজে পেয়েছিল শিশির।
সে আর কারো ভাষা বুঝুক আর নাই বুঝুক,
যারা কথা বলতে পারেনা তাদের ভাষা ঢের বুঝত।
সৃষ্টিকর্তা যাদেরকে দেননি কথা বলার শক্তি,
তাদেরকে মনের ভাব বুঝার অদ্ভুত রকমের ক্ষমতা দিয়েছেন।
তাকে দেখেই পথ শিশুর মত কাঁদতে থাকে শিমুল।

অতি পরম মমতায় ছোট্ট শিমুলগাছটিকে বুকে তুলে নিয়েছিল শিশির।
কি সুন্দর ফুটফুটে শিশুর মত দেখতে!

পলিথিন এবং ছেড়া কাগজের তৈরি
যে বহুবুজটিতে ছিল তার বসবাস,
তার উঠোনেই রোপণ করল শিমুল।

পাশেই চৌধুরী বাড়ি
সেখানেই কাজ করত তার মা।
সে শুনেছে,ঐ চৌধুরী বাড়ির কেউ একজন তার বাবা।
কিন্তু মা মারা যাওয়ার আগে দিয়ে যায়নি বাবার পরিচয়।
বাবার একটি হাত ছোট এই টুকুন শুধু বলেছিলেন মা।

শিশিরের এখন স্বজন বলতে ঐ শিমুল শুধু।
পাশেই ঘাঁটে কাজ করে সে।
কাজের কাকে যখনই সময় মিলে,
ছুটে আসে শিমুলের কাছে।
দীর্ঘ বেলার আলাপন হয় তাদের।
সারাদিনের সব আলাপ,
আবোলতাবোল সব।

মনে মনে অনেক স্বপ্ন দেখে শিশির।
শিমুলকে সে প্রায় বলে,"তুই যেদিন অনেক বড় হবি,
সেদিন তর ছায়াতলেই আমি ঘর বাধব,
আমার রক্তজবাকে নিয়ে।
একদিন তর ফুল দিয়েই রক্তজবাকে জানাব ভালোবাসার নিমন্ত্রণ।
সেদিন আমি,তুই আর রক্তজবা মিলে আমরা হব"।
রক্তজবা শিশিরের না বলা ভালোবাসার নাম।

হঠাত একদিন পুরো গ্রাম জুড়ে গুলাগুলির আতংক।
সেদিন ছিল ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১।
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা ছোট্ট গুলি,
শিশিরের ছোট্ট হৃদয় টাকে ছিদ্র করে দিল।
লুটিয়ে পরা শিশির হঠাতই উচ্চস্বরে বলে উঠল,
"বাবা"
বাক হীন শিশিরের মুখে এটাই ছিল উচ্চারিত প্রথম ও শেষ শব্দ।
বাবাকে চিনতে তার সময় লাগেনি।
ঘাতক দলের পাশে যে লোকটি হাসছিলেন,
এক হাত ছোট একটি লোক।
সে তো তারই বাবা!

তারপর কেটে গেল অনেকটা সময়।
অনেক রক্তের বিনিময়ে
একটা ছোট্ট ভূখণ্ড পেল লাল সবুজের পতাকা।

আবারো ফাগুন এল,
চারিদিক সেজে উঠল ফুলেফুলে।
কিন্তু কোন ফাগুনেই আর শিশির এলো না।।
শিমুল এখন অনেক বড়,
অনেক পরিনত।
প্রতিটা ফাগুনেই শতশত রক্তলাল শিমুলের মেলা বসে তার শরীরে,
কিন্তু শিশির আসেনা।
তাহলে কি সে আর আসবেনা??
চেয়ে নিবেনা শিমুল ফুল,
তার ভালোবাসা রক্তজবার জন্য?
বাঁধবেনা ভালবাসার ঘর তার ছায়াতলে?
এভাবেই হয়ত অনেক শিমুল অপেক্ষায় আছে,
হাজারো শিশিরের জন্য।
স্নান করবে বলে শিশিরের ভালবাসায়।