শ্মশান ঘাটে আজ ভীড়ের ঠেলাঠেলি
চারদিকে বুকভাঙ্গা হাহাকার ফোটে,
বিবেকের খুন হয়ে গেছে;
সন্তানহারা মায়ের আঁচলে
লাল তাজা রক্তের ছিটেফোঁটা সাক্ষী,
বিবেকের খুন হয়ে গেছে।
নিথর দেহটা তার পড়ে আছে অবহেলায়
একটু পরেই চিতায় উঠার অপেক্ষায়,
এদিকে ওদিকে হিংস্র শ্মশান কাকের দল
লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে;
বিষাক্ত কোনো সুরের ছোবলে
সারা গা বিষিয়ে গেছে তার
পচন ধরেছে সারা শরীরে,
সুযোগ-সন্ধানীরা বাসা বেঁধেছে।
তামাশাঘন রাত্রিচ্ছায়ে
দুর্বার পদে এগিয়ে চলছিল বিবেক,
সত্যের পথে-
দুর্জয় নির্দয় পাষান ডিঙ্গিয়ে;
হঠাৎ, হঠাৎ একটা ঝুটা বাঁশির বিষেলা সুরের
হৃদয় বিদারী অন্তর্ঘাত-
(আর) ভয়ানক করুন আর্তনাদ সহ
কর্পূরের মতো উবে গেলো বিবেকাত্মা।
বিবেক যতদিন জীবন্ত জাগ্রত ছিল
সবদিকেই ফুলের কলি ফুটতে দেখেছি,
বিকশিত হতে দেখেছি
কচি-কাঁচা সজীব-সবুজ পাতাগুলোকে;
যেদিন বিবেক গেছে-
ঝরা বকুলের মতোই সবাই
পেলবতাহীন নিঠুর,
মিথ্যে মুখোশের আড়ালে চলে গেছে।
বিদ্বেষের রক্তাগ্নি শিখায়
অবিরল রক্তমোক্ষনে রক্তলাঞ্ছিত
বুভুক্ষু মানুষের দল
দুখদীর্ণ বেদনাবিহ্বল কণ্ঠে
(শুধু) প্রার্থনা করে - 'দুটো খেতে দাও';
কিন্তু শোনে কে?
বিবেক তো মরে গেছে!
আর যাদের চোখ আছে
তারাও সব বধির হয়ে আছে।
আর্তনাদ তাদের কানে যায় না।
(আজ) চারদিকে আছে শুধু
কতগুলো নির্লজ্জ, নির্দয়, অসহ্য হাসি
আর মৃত্যু পথযাত্রী অজস্র নরনারীর
করুন বিকৃত মুখচ্ছবি।
ফুটপাথের কিনারে শীতের রাতে
শতচ্ছিন্ন একফালি কাপড়ে
শয়তানের লুলুপ দৃষ্টি থেকে
নিজেকে আড়াল করার প্রচেষ্টারত
অসংখ্য দুর্গতিনাশিনীদের দুর্গতি
আজ আর কাওকে নাড়া দেয়না;
তারাতো সব রাস্তার মেয়ে,
তাদের আবার ইজ্জত কিসের!
তারা সবাইতো কোনো সুস্বাদু খাদ্যের
মশলা মাত্র!
কিন্তু ওরা জানেনা -
হয়তো কোনো রাস্তার মেয়ের গর্ভেই
একদিন জন্ম নেবে বিবেক, নতুন করে-
সেদিন নতুন ফুল ফুটবে,
নতুন কুঁড়ি গজাবে শাখে শাখে
রঙ্গিন হোলি খেলবে সবাই
বসন্তের আলিঙ্গনে।