আবার কোনো এক ভোরে নিয়ে যাবো তোমায়
মাঠের পারের ওই বকুল তলায়,
তুমি আঁচল ভরে কুঁড়িয়ে নেবে তাদের
পরম স্নেহে, কোমল হাতে, একটা একটা করে।
মনেপড়ে সেদিনকার কথা? -
আমি বকুলের গায়ে গা এলিয়ে নির্নিমেষ
তোমার ফুল তোলা দেখছি,
তুমি যে ভীষন মনোযোগী ফুল তোলায়
অশেষ যত্নে তুলে নিচ্ছ এক-একটা ফুল,
একটা ফুলও দলে যায়নি তোমার হাতে-
সে কতক্ষন তুমি ফুল তুলছো,
এতক্ষনে বোধ হয় তোমার হাতটাও হয়ে গেছে
সুবাসিত বকুল,
ইচ্ছে তো করছে ওই হাতের সমস্ত সুবাস শুষে নিই
প্রগাঢ় চুম্বনে।
তুমি মনোযোগী ফুল তুলছো
আর মাঝেমধ্যে মুচকি হেসে তাকিয়েছো বারকয়েক,
আমি ভাবছি সেই হাসির মুক্তোগুলো কুঁড়োবো
না তোমার মতোই হাতে তুলে নেবো এক মুঠো বকুল।
আমি ভাবছি আর দেখছি,
অমনি একটা ঝরন্ত বকুল
আমায় বাতলে দেয় এক দুষ্ট বুদ্ধি-
হাতের নাগালে ঝুলে থাকা এক ডালে
আলতো দোলায় নাড়িয়ে দিতেই
তোমার সমস্ত শরীরে ঝরে যায়
মধুর বকুল বৃষ্টি;
তুমি আত্মহারা হাসলে, খুব খিলখিলিয়ে হাসলে,
আমি তোমার নরম গোলাপি গালে মাখিয়ে দিলাম
প্রানভরে বকুল সুরভী।
তখন পুব আকাশে সূর্য ওঠেছে মাত্র,
লালিমা জ্বরানো সূর্য সেই সুদূর থেকেই
আমাদের গায়ে ফেলছে মিষ্টি উম ।
তুমি তাকিয়ে আছো আমার চোখে, আমি তোমার-
দুজনেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম অন্তরিত অনুরাগে;
তারপর সম্বিৎ ফেরে একঝাঁক পাখির ডাকে।
মন তো চায়, এই এক্ষুনি তোমার সাথে
করে নিই গান্ধর্ব বিবাহ-
বকুল আছে, সূর্য আছে
পাখিরা আছে, এই সকাল আছে
সবাই তো থাকবে সাক্ষী আমাদের বিবাহের;
স্বর্ণলতায় বকুল গেঁথেছি
তোমায় কাছে টেনে পড়িয়ে দিলাম বরণমালা-
শীতল হাওয়ার দোল দিলো আশীর্বাদী বকুল,
লজ্জায় তোমার মুখ ঢেকে দেয় দু-হাত;
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে বিস্ময়ে একবার তাকালে আমার দিকে
তারপর মাথা নিচু করে সলজ্জ হেসে
দৌড়ে পালাতে চাইলে,
তক্ষুনি আমার দৃঢ় হাতে বেঁধে যায় তোমার কোমল হাত,
তুমি মিথ্যে ছাড়াবার চেষ্টা করলে কয়েকবার।
আমি কাছে টেনে নিই তোমায়
কাছে, খুব কাছে, এতো কাছে যেখানে
হৃদয় হৃদয়ের স্পর্শ পায়,
তুমি লজ্জায় লাল শিউরে ওঠলে,
ততক্ষনে আমার গহীন আলিঙ্গনে তুমি
অবশ আমার বুকের উষ্ণতায়।