পরীক্ষার্থী ন’শ কোটি
পরীক্ষক পরম
বিষয় প্রকৃতি।

একটি প্রশ্ন দেয়া হয়েছে
অনির্দিষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষা হবে
পাঁচ শ কোটি বছরের জমানো সব ঘটনার
চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে;
খুবই ছোট এ প্রশ্ন !

পরম প্রকাশ রাত-দিন ক্লান্তিহীন
বিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, যুদ্ধ,
অর্থ, শিল্প, পরিবেশ ইত্যকার
সব বিষয়গুলো আলুছানার মতো
পিষে ছেনে নির্ঘুম সময় পার করে
অসংখ্য প্রশ্নের সাধারণীকরণ করেছেন
অবশেষে চকিত নিমেষে।
না হলে প্রশ্নের বিরামহীন পঠন
সময় সমাজ কেড়ে নিত নির্ঘাত
উত্তরশূন্যতার সাদা কাগজ
এঁকে দিত মানব-মানবীর নীল গর্ভপাত।

ব্যর্থ পরীক্ষায় বসার দায়ে
চলে যেতে হবে নতমস্তকে,
সারা দেহে মনে অসংখ্য চাবুকের
শাঁ শাঁ শপাং শপাং ক্ষতে আঘাতে,
অন্তিম এ যাত্রায় কেউ রবে না
কেউ রবে না তোমার সম্মুখে,
তোমার সন্তান, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব
এমন কি চুম্বনে, আহ্লাদে
যার দেহ বন্ধ করা আছে
হারিয়ে যাওয়া মায়া সভ্যতার মত
সেই তোমার নারীও।
অকৃতকার্য্যতার এমনই ধার।

সকল পরীক্ষার্থী হাতে সে প্রশ্ন পৌঁছে গেছে।
পৌঁছাতে সময় লাগেনি মোটেই
কোন টাইপ রাইটিং, কাগজ, কলম, প্রেস, টেন্ডার
কিছুই লাগেনি এ প্রশ্ন করতে ,
সবার মগজে এক পলকে সেঁটে দেয়া হয়েছে
কয়েকটি শব্দের নিষ্কলঙ্ক জিজ্ঞাসা।

নি:শ্বাস বন্ধ করা সময় পার করে
এই একটি সাধারণ প্রশ্ন ?
মাত্র চারটি শব্দের একটি প্রশ্নকে
নিয়ে এত চিন্তা করলাম আমরা! এত চিন্তা!
ভাবতেই অবাক লাগছে।
অহেতুক আতঙ্ক আমাদের দিন দিন
পুরুষ থেকে ক্লীব করে ফেলেছে।

পাঁচ শ কোটি বছরের জমানো সিলেবাস
যদি হঠাৎ জেগে ওঠে
যদি হঠাৎ অজানা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়
তাহলে আতঙ্কের ঘেরাটোপ গিলে খাবেই;
আর যদি বলা হয়
অকৃতকার্য্যতার সে ভয়াবহ পরিণাম
যদি বলা হয় বেঁচে থাকবে, কিন্তু বেঁচে থাকবে না
সব দেখবে চোখের সামনে, কিন্তু বলতে পারবে না
নিরাসক্ত ফুল, নৃত্যরত পাখি, ষোড়শী নদী
মেঘাক্ত আকাশ, অহংকারী পাহাড়, গহীন অরণ্য
তোমার সম্মুখে আনন্দে, প্রতাপে কথা কইবে
তুমি সংবাদী হতে পারবে না,
তখন অনুভূতি, চিন্তা, মনন,
সকল প্রকার দৈহিক জনন
প্রেমিক-প্রেমিকার ওষ্ঠ রণন
জীবন যাপন বাসিত রমন
সকলই হীম শীতল লাশকাটা ঘরের উপাত্ত,
আর কিইবা হওয়া যাবে!

তোমরা পরমকে কি দিয়েছো?
এই সেই প্রশ্ন।
সময়: অনির্দিষ্ট
বিষয়: প্রকৃতি
পূর্ণমান: পাশ।

ধুর, ধুর, কত কি ভেবে ভেবে
বৃথাই নিউরোণগুলোকে চঞ্চল করেছি আমরা।
এটা কোনো প্রশ্ন হলো?
বিদ্যুৎ গতিতে হাত চলছে
খস খস বেগে উত্তর পত্রের বুকে,
সাদা সে কাগজে রাসায়নিক তরল
অসংখ্য আঁকিবুকি দাগ কেটে যায়,
নয় শ কোটি হাত লিখে চলেছে অনবরত
কালো, নীল, সবুজ - হরেক রঙে
পরমকে দেওয়া আমাদের কম্ম
শ্বেত-শুভ্র-সাদা পৃষ্ঠায়।

নিরাসক্ত অবিনাশী পরমের কাছে
ধীরে ধীরে জমা হলো অসংখ্য উত্তরপত্র,
প্রায় নয় শ কোটি সে সংখ্যা,
অসংখ্য এ উত্তরপত্রগুলো থেকে
মাত্র কয়েকটির দিকে তাকিয়ে রইলো পরম,
অবিরাম বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো পরম।

প্রথম উত্তরপত্রের সবুজ কালিতে
ঘোষিত হয়েছে সভ্যতার কথা।
মানুষ নাকি দিয়েছে সে সভ্যতা!
অগণিত সময়, যন্ত্রণা, মৃত্যু পার করে
মানুষ উপহার দিয়েছে পৃথিবীর মানচিত্রে
অরুণোদয়ের মতো জ্বলজ্বলে সভ্যতা
অন্ধকারকে আলোতে আনার সভ্যতা;
যে জল, পাথরে জন্ম নিয়েছিলো প্রথম প্রাণের
তাকে ভয়াবহ দূষণের সভ্যতা
তাকে খান খান করে ভেঙে ফেলার সভ্যতা
যুদ্ধে প্রলুব্ধে দাম্ভিকতায় ক্ষমতা নিরঙ্কুশের গল্প
অন্যায় পুঁজির নিচে মানুষের আর্তচিৎকার
শক্তিমান অস্ত্র-মারনাস্ত্রের ঝনঝনানি
এবং অবাধ অবিচার ব্যভিচার প্রতিষ্ঠার সভ্যতা,
শহর-বন্দর-গ্রাম নিলাজ উজাড় করা
নিরীহ পশু, প্রান্তর, চারণভূমি, জলের কৃত্রিম সীমানা
আপোষকামী নর-নারী পণ্য করার সভ্যতা,
রাজ্যে, রাষ্ট্রে, মহাদেশে ষড়যন্ত্র
মানুষে মানুষে ন্যাংটো কুমন্ত্র
ফেলানির বুকে তারকাঁটার গ্রিল
আরাকানে রোহিঙ্গার রক্ত বিল
রক্তের তক্তে কালো আর নীল
জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে শাদা চিল
ধর্মের নামে অধর্মের কিলবিল
এইতো তোমাদের সভ্যতা,
লোভে লোভে লভ্য সভ্যতা,
হায়রে সভ্যতা!

তোমাদের এ সভ্যতা
দিতে তোমাদেরকেই পারো নি!
আমাকে দিলে কোথায়?
অথচ তোমাদের আসার অনেক পূর্ব থেকেই
ধীরে ধীরে সাজিয়েছি এ পৃথিবী;
জমিনে দিয়েছি সুদৃঢ় পর্বতমালা
সবুজ করেছি চারিদিক
নিষ্কলুষ জল দিয়েছি আকাশ হতে,
অবারিত উর্বর ভূমি দিয়েছি ফসলের
যেখানে মৃত খুঁজে পায় জীবন
অত:পর আকাশ এনেছি শোভন প্রকাশে
অসংখ্য প্রদীপ আলোয় সে গান অবিনাশে
পাপাত্মা শময়িতার স্থীর প্রত্যাশে,
বাস্তুসংস্থান করেছি নির্ভরশীল পরস্পর;
তাতেও ক্ষুধা মেটেনি
প্রতিনিয়ত ভেঙেছো আমার শৃঙ্খল
নির্ঘুম অবিরত এঁকেছো ক্ষত সে শৃঙ্খলে
পরীক্ষাগার বানিয়েছো জমিনের পেট
এখন উদরের সে ক্ষতে জমা
রাসায়নিক তরলের বিপুল ভান্ডার,
ভগ্নবাস্তুশৃঙ্খল থেকে পাঠালাম তাই
আপাত অদৃশ্য এক অনুজীব
অতি ক্ষুদ্র একটি শক্তিমাত্র।

তাবৎ পৃথিবীর অবিচারের সম্পদে গড়া
সকল অস্ত্র-মারণাস্ত্র মোকাবেলায় নির্বিকার
তোমরা নিজেরাই ঘরে আবদ্ধ
একই ঘরে পরস্পর বিচ্ছিন্ন;
বাবা-মা থেকে সন্তান
সন্তান থেকে পিতা-মাতা
রাতের চাঁদর থেকে প্রিয়তমা
অথবা নব পরিণীতার দীর্ঘ অপেক্ষা
অনাগত শিশুর কাতর জন্মভিক্ষা ,
এ সবই অসম্মানের ক্ষত থেকে উঠে আসা
একটি মাত্র শক্তির প্রয়াস
মানলে পাশ, না মানলে
অকাল প্রয়াণে তুমি সাথীহীন
নির্ভেজাল আগুনের উপকরণ।

পরম প্রকাশের হাতে শেষ উত্তরপত্র;
কেউ একজন লিখেছেন কালো কালিতে
“ আমরা কিছুই দিতে পারিনি তোমায়
প্রিয় পরম আমাদের,
কেবল নিয়েছি, কেবল আঘাত করেছি,
সভ্যতা, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিল্প
ইত্যকার নানা নামে তোমার শৃঙ্খল
নির্বিকার হত্যা করেছি পলে পলে
বহু রঙে, বিভিন্ন দলে দলে,
মান্না-সালওয়া করেছি পরিত্যাগ
শনিবারের সীমা করেছি লঙ্ঘন
আদি প্রতিজ্ঞায় দিয়েছি ভাঙন
প্রতিক্ষণে করেছি নির্লজ্জ অস্বীকার,
ক্ষমা ভিক্ষা চাই এবার
অতীত পাপ অসংঘটনের অঙ্গীকার
তোমার পাদমূলে বিছায়ে দেই
হৃদস্পন্দনে চোখের জলে। ”

অত:পর আকাশ এখন অনেক নীল
বাতাস ভীষণ সুপেয়
ব্যাস্ততম শহরে পাখির কুজন
সবুজে রঙে অনাবিল মাতামাতি
সৈকতে লাল কাকড়ার টেরাকোটা আঁকা,
ডলফিনের জলকেলি;
প্রকৃতি এখন অনেক স্বাধীন।

পরমের হাতে চূড়ান্ত উত্তরপত্র
কালো কালিতে লেখা
কিছু শব্দের নি:শর্ত মিনতি।
পরমের হাতে শেষ উত্তরপত্র
পাশের অপেক্ষায়।
--------------------------------------
ক্ষণকাল নির্ঘাত
৯:৫৭ , নিশ্চিত রাত
০৬.০৫.২০২০।