আমাদের নিয়ে খুব কথা বলছো তোমরা
লিখেছো অনেক কবিতা গান
ছুটে ছুটে হয়রান হয়ে বেড়াচ্ছো এখান থেকে ওখানে
শুধু আমাদের কথা মনে করে
আমাদের কাছে আমাদের হাতে তুলে দিতে
কয়েক দিন বা সপ্তাহের রসদ
কেউ বা পাঠাচ্ছো নগদ টাকা
কেউ বা করছো আয়োজন তৈরি খাবারের
এমন অবরুদ্ধ সময়ে আমাদের কথা তোমাদের বারবার মনে পড়ছে
দোতলায় বা দশ তলায় বসে না
যারা তোমরা সেমি পাকা বাড়িতে থাকো
কিংবা এখনো হয়ে ওঠোনি ঘাম ঝরানো বা নীল কলারের শ্রমিক
যারা পার হওনি উচ্চ শিক্ষার গণ্ডি
তারাও আজ প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হাজির হচ্ছো
দুমুঠো চাল ডাল নিয়ে পরম মমতা ভরে
আমরাও ছুটে যাচ্ছি কোথাও দেবার কথা শুনলেই
হুমড়ি খেয়ে পড়ছি লাইনে দাঁড়াচ্ছি
যেভাবেই পারছি খুঁটে নিচ্ছি রসদ
কোন এক অজানা ভয় থেকে
যে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কিছু না পাবার ভয় খাবার না পাবার ভয়
ক্ষুধার্ত হয়ে দিন কাটানোর ভয়

ক্ষিদা পেটে আমাদের দিন যে কাটে না তা না
এমন দিন মাসে সপ্তাহে বা বছরে প্রায় আসে
তাই সেটা বড় ভয় না আমাদের কাছে
কিন্তু মনে ঢুকে পড়েছে হঠাৎ মরে যাবার ভয়
যে ভয় তোমরা দেখাচ্ছো প্রতিদিন আর আমরা তাতে গর্তে ঢুকে গেছি
সেটাও আমাদের গা সওয়া হয়ে যাবে
আমরা তো এমন কতো ছোট রোগেই টুপ করে মরে যাই যখন তখন
তোমরা টেরই পাও না
তবে জানো না তোমরা
আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় এখন স্বাধীনতা হারানোর ভয়
এই স্বাধীনতা মানে যে কোন জায়গায় কাজ জুটিয়ে নেয়া
এই স্বাধীনতা মানে আজ চট্টগ্রাম তো কাল সুনামগঞ্জ
এই স্বাধীনতা মানে তিন চার বাসায় ছুটা কাজ
আর রাতে কোন বিয়ের খানার কোটা কুটি
আমাদের পেয়ে বসছে সেই ভয়
এই অবরুদ্ধ কালের পরে
তোমরা বলে বসবে না তো -
'ওই সুজন, ওই কমলা, তোমাদের করোনা সার্টিফিকেট কই?'
একটু কাশি বা জ্বর হলেই বের করে দেবে না তো কাজ থেকে
তখন কি করে দিন যাবে আমাদের!

তবে
আমরাও জানি তোমরা আছো আরো অন্য একটা ভয়ে
সেটা বলতে চাও না এমনকি মনেও আনতে চাও না
যদি আমরা টের পেয়ে যাই
সেই ভয়েই কিন্তু তোমাদের এই সব আয়োজন এতো চেষ্টা
খাবারের রসদ পৌঁছে দেবার এতো সব তরিকা এতো প্রচার
সেই ভয়টা আমরা টের পেয়ে গেছি
আমরা জানি, জানি তোমরা কি ভাবো
আমরা জানি তোমরা কেন আমাদের ক্ষুধার্ত রাখতে চাও না

ক্ষুধার পেটে যে বিপ্লব হয়ে ওঠে অন্য হাতিয়ার
তখন জোট বেঁধে ঘটিয়ে ফেলা যায় অনাসৃষ্টি
ছিঁড়ে ফেলা যায় তোমাদের ভালোমানুষি মুখোশ
টেনে হিচড়ে নিয়ে আসা যায় আমাদের কাতারে
ছুড়ে দেয়া যায় ক্ষমতা ভাগাভাগির অমিত সাহস
তোমরা সেই ভয়েই আছো সর্বক্ষণ
যদি এই অবরুদ্ধ সময়ের আছরে হারিয়ে ফেলো ক্ষমতার রশি
যদি হারিয়ে ফেলো আমাদের রক্ত নিংড়ে তৈরি করা সম্পদের পাহাড় সুরম্য অট্টালিকার চাবি

ভয় নেই
আমরা এখনো পারিনি এক হতে
আমরা এখনো পারিনি কিভাবে ক্ষমতার ভাগ চাইতে হয় তা বুঝতে
তোমরাও কেউ আমাদের বলছো না বলতে চাও না
কেন আমাদের তোমাদের ভিক্ষার ওপর টিকে থাকতে হবে?
আমাদের হিস্যা আমাদের ভাগ কোথায়?
আমরা এই অবরুদ্ধ কালে তা পারবো মনে হয় না
আমরা নিজেরাই কোনমতে টিকে থাকতেই মরিয়া

আর আমরা এটাও জানি
এই অবরুদ্ধ কাল শেষ হলে তোমরাও ধীরে ধীরে ভুলে যাবে আমাদের কথা
তোমাদের সম্পদ তৈরির যন্ত্র আরো জোরে ছুটবে
আর আমরা আমাদের রক্ত নিংড়ে দিতে থাকবো রসদ
তবু কৃতজ্ঞতা আমাদের তোমাদের প্রতি
এমন অবরুদ্ধ কালে তোমরা আমাদের কথা মনে করছো
দিয়ে যাচ্ছো দিন বা সপ্তাহের রসদ
আমাদের টিকে থাকবার জন্য
আর আগামী দিনের অসম সমাজের রসদ হবার জন্য।

২ মে ২০২০