সন্ধ্যার অন্তিম মুহূর্তগুলো
সবচেয়ে দীর্ঘ আর নিরবিছিন্ন হলে
হয়তো মাতঙ্গী এমন করে মরে যাবার কথা ভাবতো না
ভাবলেও হয়তো এতো তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতো না
কত মানুষই তো আত্মহত্যা করতে করতে পারে
আবার করার ঠিক আগেই ফিরিয়ে নেয় অনেকেই বেঁচে থাকার শিহরণ

সন্ধ্যার এই মুহূর্তগুলো সবচেয়ে প্রিয় ছিল বিল্বোপলের
কত দিন শুধু কাটিয়ে দিয়েছে সন্ধ্যার মুহূর্তগুলো অনিমেষে দেখবে বলে
যখন আকাশের নীল ধীর পায়ে আহরণ করে রক্তিম আভা
মন্দ্রগতির বাতাস টেনে আনে নিশিগন্ধা ফোটার খবর
আকাশের লাল আভা আলতো পায়ে ডুবে যেতে থাকে রাতের শরীরে
সেই সময় গুলোর প্রতিটি ফ্রেম
ক্ষুধার্ত ক্যামেরার মতো
কখনো লং শট কখনো ক্লোজ শটে
ফ্রেমগুলো কখনো আরও ভেঙে ভেঙে
অণু ফ্রেমে কেটে তুলতো বিল্বোপল
পাশে বসে মাতঙ্গী অসীম কামনায়
সেইসব মুহূর্ত কাল আর তার ফ্রেমগুলোতে
বুকের সবচেয়ে গভীরতম জায়গায়
গ্রথিত করতো তার চিরচেনা পুরুষকে
অঝোর বরষার সন্ধ্যাগুলোতে
মাতঙ্গী শোনাতো গান বিল্বোপলকে
সন্ধ্যারাগ আর ফ্রেমবন্দী মুহূর্তের গান
সেই সময় মাতঙ্গীর চুলের ভাজে
বিল্বোপল খুঁজতো নিশিগন্ধা ফোটার সুবাস
বুকের গভীরে মন্দ্র বাতাসের সুললিত দোলা
একদিন হঠাত বিল্বোপল ঝাঁপ দিলো অসীমের বুকে
শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবনের চুড়া থেকে
তার বলে সন্ধ্যার পাখি হবার সাধ হয়েছিলো
লিখে গেছে ছোট্ট চিরকুটে।

শুধু মাতঙ্গী জানে -
বিল্বোপল সন্ধ্যার মুহূর্ত কাল ভুলে গিয়ে
ভালোবেসে ফেলেছিলো সকালের আলোকিত আকাশ
উজ্জ্বল সূর্য  আর সবুজ ঘাসের গালিচা।
মাতঙ্গী্র চুলের সুগন্ধ আর বুকের উষ্ণতা
ছুঁড়ে ফেলেছিলো ভোরের মুগ্ধতায়।
না, বিল্বোপল অন্য কোন নারীকে কাছে টানেনি
যদি টানতো তাহলে অন্তত
মাতঙ্গীর হিংসা করার কিছু থাকতো
তার কিছুই নয়।
বিল্বোপল পারেনি শেষমেশ
সন্ধ্যার সাথে আত্ম-প্রতারণা সহ্য করতে
তাই পাখি হলো বিল্বোপল।

মাতঙ্গী অনেক বার পাখি হতে চেয়েছে
বার বার সন্ধ্যার মুহূর্তগুলো তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে
জাগিয়ে রেখেছে ঘুমিয়ে যাবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত
আজ সন্ধ্যার মুহূর্তগুলো কেমন পরমাণু ফ্রেম হয়ে গেলো
ওয়াইড লেন্সে ধরা দিতে দিতে
পালিয়ে গেলো রাতের শরীরে
ঘুমানোর সময় হলো না মাতঙ্গীর
আর তাই নদীর গভীরে সঁপে দিলো নিজেকে
সন্ধ্যার মুহূর্তগুলোর উপর
অপরিসীম অভিমান বুকে নিয়ে
কোন এক মাছ হবে বলে

১৩.০৬.২০১৮