শালার রোদ! খিস্তি দিয়ে ওঠে সারমেয় এক
তার সাথে সুর মেলায় সারমেয় দুই তিন চার পাঁচ ছয়
এক চিলতে ছায়া নিয়ে বসবো তার কোন উপায় নেই
স্বগতোক্তি করে ওঠে সারমেয় সাত
সব শালার ওই সব চালচুলোহীন বুড়ো হাবড়া আধা জোয়ান দুইপেয়েগুলোর জন্য
খিঁচিয়ে ওঠে সারমেয় তিন, যাকে এদের নেতা বলেই মনে হলে অতীনের।
মনে মনে হাসে
এ এক ভালো যন্ত্রণা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে
মানুষের ভাষা আজকাল বুঝতেই পারে না কোন ভাবেই।
সেদিন শলিনী বললো, যাই আর দেখা হবে না তোর সাথে
আর দেখা হলেও চিনতে পারবি না আমাকে
একেবারে মুখোমুখি হলেও না
একদমই বুঝতে পারেনি অতীন
দুদিন ধরে ওদের সেই চির চেনা বকুল গাছের নীচে আসেনি শলিনী
ঘণ্টা প্রহর ক্ষণ অপেক্ষা করে করে হত্যে গেলো অতীন
তিন সত্যি দিনের দিন না পেয়ে খুঁজতে বের হলো শহরময়
জানেই না কোথায় খুঁজতে হবে কাকে জিজ্ঞেস করবে
কোনদিন তো মনেই হয়নি জেনে নেয় কোথায় থাকে
শুধু জানে রোদ একেবারেই সহ্য হয় না শলিনীর
সব সময় ছায়ায় ছায়ায় থাকে ছায়া খোঁজে আগে তারপর অন্য কিছু।
তাই শহরের যত্রতত্র যেখানে যতো ছায়া আছে
সবখানে খুঁজছে অতীন
আজকাল ছায়া খুঁজে বেড়ানো এক মহা ঝক্কি
রোদের এমন দাপুটে বাড়াবাড়ি চলছে যে ছায়ারা পালিয়েছে শহর ছেড়ে
আর যে দু-এক টুকরো ছায়া পাওয়া যাচ্ছে শহরে
সেগুলো দখলে নিয়েছে ঘরহীন যতো লোক আর উর্দিপরার দল
যেন এগুলো তাদের বংশপরম্পরা সম্পত্তি, হারালেই সব শেষ।
আর কাউকে ছায়ার কথা জিজ্ঞেস করলে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন পারলে মারবে
সারাদিন খুঁজে অতীন বুঝে গেলো যে সে আর ছায়া খুঁজে পাবে না
ছায়া খুঁজে না পেলে শলিনীকেও খুঁজে পাবে না
শলিনীকে না পেলে কি হবে সেটা এখনো মাথায় আসছে না
একসাথে দুটো বিষয় নিয়ে ভাবতেই পারে না অতীন
সেই কোন ছোটবেলা থেকে যখন গাড়ি চলে গেলো শরীরের ওপর দিয়ে চিড়ে চ্যাপটা করে
সেই থেকে কি যে হলো অতীনের সে জানে না
শুধু জানে যে একসাথে দুটো ব্যাপার আর সে ভাবতে পারে না
এই যেমন এখন শুধুই ভাবছে ছায়ার কথা আর কিছুই ভাবতে পারছে না।
ভাবতে ভাবতে অতীন ফিরে চলে তার চিরচেনা প্রিয় বকুল গাছের তলায়
ওকি! পথ ভুলে কি চলে অন্য কোথাও চলে এলো সে
আবার অনেক দূরে ফিরে গিয়ে আবার আসে বকুলতলায়
কোথায় সেই ছায়াময় বকুলতলা কোথায় সেই নিবিঢ় ছায়া
সেখানে চলছে দুপুর রোদের ভয়ংকর বাড়াবাড়ি
বিস্ময়ের ঘোর কাটে না অতীনের
ছায়া না থাকলে তো আর কখনো ও শলিনীকে পাবে না
তাহলে তো কথাটা ভুল বলেনি শলিনী
সারমেয়গুলো এতক্ষণ আসছিলো ওর পিছু পিছু একটু ছায়ার খোঁজে
তারা সব আবার খিঁচিয়ে ওঠে একে একে -
দুপেয়েগুলোকে কোন ভাবেই বিশ্বাস করা যায় না
তা সে জ্যান্তই হোক বা মরে ভুত হওয়া
এই অশরীরী দুপেয়েটা জানেই না যে
বকুলতলার গাছ সব কেটে সাবাড় করে বানানো হচ্ছে আরেকটা কংক্রিট শরীর
এতক্ষণে বোধোদয় হয় অতীনের একটু একটু করে বুঝতে পারে শলিনীর কথা।
এ শহর আরও ছায়াহীন হয়ে গেলো
আর ছায়াহীন শহরে অতীনের মতো ভুতদের থাকা হবে না
সেটাই বোধহয় আরেকবার বুঝতে পারলো সে
এটা ভাবতে ভাবতে আরেকটা নিবিঢ় ছায়ার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে সে
পেছনে সারমেয়দের দল পায়ে পায়ে চলা শুরু করে
এ ওদের হাজার বছরের পুরোনো অভ্যাস, দুপেয়েদের বিশ্বাসভাজন হয়ে পিছু নেয়া
শহরের যতো দুপেয়েগুলো রোদের বাড়াবাড়ির মধ্যে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ভাবতে থাকে সারমেয়দের আদিখ্যেতা।

১৮.০১.২০২০