অলি গলি ধরি চলিয়াছে মন,
মত্ত নিজের খেয়ালে।
রিক্ত হইবে ভূষণ খুলিয়া
তারি পথ আয়ু রাখিছে রুধিয়া।
শেষ খেয়া টাও যাইবে ছাড়িয়া
নিশি টুকু বাকি ফুরালে।
আমার দুর্ভাগ্য এই লেখাটুকুর কবিকে আমি চিনি না
একটা ছদ্মনামে তাকে চিনি। বাংলা কবিতা ডট কমে এ যাবৎ মাত্র ২২ টি কবিতা পোস্ট করেছেন তিনি। বিগত ছয়মাসে ঋদ্ধ সমৃদ্ধ মন্তব্য করে চলেছেন বাংলা কবিতা ডট কমে প্রকাশিত কবিদের কবিতায়। মনে হয় নিজেকে প্রকাশ করতে চাননা। অথচ ভেতরে উদগীরন হওয়া মূল্যবান লাভা সমুহকে রাখলেন স্বযত্নে। নিজেকে তিনি একজন ক্ষুদ্রতর মানুষ ভাবেন। তাই বাংলা কবিতা আসরে নিজ নাম দিয়েছেন "অপদার্থ"। অথচ তিনি জন্মেছেন নজরুলের জন্মস্থান আসানসোলে।পরিপুষ্ট, উদয়াস্ত খাঁটি একজন কবি। আজ আমি ছদ্মনামের কবি অপদার্থ এর "খেলা ভাঙ্গার খেলা" কবিতাটি বার কয়েক পড়েছি।
জীবনের একটা সময়ে প্রস্থানের ইংগিত চলে আসে বিবেকবান সকলের কাছে। জীবন তো তার সীমানা ছাড়িয়ে একসময় ওপারের ডাকের অপেক্ষায় এসে দাঁড়ায়। কেউ সহজে মানতে চেষ্টা করে, মেনেও নেয় আবার কেউ মানতেই পারেনা অথচ অমোঘ নিয়তি টেনে নিয়ে যায় মৃত্যুর হিমশীতল গহবরে। কবির ওপরে বর্ণিত কবিতার চরণ ক'টায় সে ইঙ্গিত এসেছে অবলীলায়।
যেমনি শূন্যহাতে একলা একা পৃথিবীতে আসা তেমনি চলে যাবার জন্য একটিমাত্র হুকুমের অপেক্ষা। পৃথিবীর সকল কামনা বাসনা বিত্ত বৈভবে তুড়ি মেরে শূন্য হাতে একমাত্র পূণ্যকে সাথে করে চলে যাওয়ার তাড়না।
একা বসে ভাবে ওই দেখা যায়
আলোক বিন্দু সুদূরে।
আছে কি সেথায় ক্ষণিক শান্তি?
মুক্তি পাবে কি পথের ক্লান্তি?
পাবে ক্ষমা সব অতীত ভ্রান্তি?
অনিশ্চিতের দুয়ারে?
এখানে কবি আরো বেশী আবেগতাড়িত হয়ে জীবনের চরম সত্যকে উপলব্ধি করেছেন, সুদূরের ওই আলোকবিন্দু কি কবিকে পথ দেখাবে? উচ্ছল আর সদা চঞ্চল মনের কিনারে প্রশ্ন এসে আঘাত করে যাচ্ছে, কোথায় কোন আলোর কিনারায় কোন মহিমাময়ের সান্নিধ্যে গেলে একবিন্দু শান্তি আসবে, অতীতের সব ভুল ত্রুটির মার্জনা হবে। অনিশ্চিত এক দোলাচলে দোদুল্যমান কবি আশ্রয় খুঁজে চলছেন।
কবি তার সারাজীবনের কৃতকর্মকে মনের আয়নায় অবলোকন করে অনুসোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন। আর আয়নাবাজির জীবন ছেঁড়ে পরজনমের রাস্তায় বসে জীবনের সকল কোলাহল, কলরবের উর্ধে যাবার যে বাস্তবতা তা হৃদয়ে ধারণ করেছেন। তিনি লিখলেন,
তবে কি এ চলা দিগন্ত ছুঁতে
মিছিমিছি চলা হলো!
আপনার ছায়া মিছে ধাওয়া করে
অহেতুক বেলা হলো!
আত্মঅহমিকা ভুলে "খেলা ভাঙিবার খেলা' কবিতায় কবির চিন্ত্যন সব অহমিকা আত্মসমর্পণের দিকে ধাবিত হচ্ছ। আসলেই তো আমরা আমাদের নিয়তির বেড়াজালে আবদ্ধ।নিষ্ঠুর নিয়তিকে কেউ অবজ্ঞা বা পাশ কাটিয়ে চলে যাবে সে উপায় কারো নেই।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানবোধে এ কবিতাটির সারবত্তা বুঝবার বুঝানোর ক্ষমতা আমার সীমিত। শিল্পকলা গুনে কবিতাটি এক অনন্য রূপে এ আসরে এসেছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। বোদ্ধা ব্যক্তিগন নিশ্চয়ই আরো রূপ রস গন্ধ খুঁজে নেবেন। আমি শুধু শত সহস্র প্রণাম, শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসায় সিক্ত করে যাই কবিকে।