1. আগুন
যে জলে আগুন জ্বলে
সেই জলে নিপুণ সন্ধান করো
আমার আগুন!
আমার ভিন্ন স্বপ্নের অগ্ন্যুৎসবে
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই
তুমি কি নিমীলিত নীলা দূরগামী অন্ধকারে
আমাদের জৈবসারে অন্যরকম সংসারে
নক্ষত্রের রুপালি আগুনভরা রাতে
আমার আগুনে তোমাকে ছুঁইয়ে
তোমার আমার প্রণয়ের অমিমাংসিত সন্ধি
অশ্লীল সভ্যতার দেহে আগুন জ্বেলে
মনে মনে পুড়তে চেয়েছে
একাকী নির্জন!
2. বাতাস
বাতাস আসেনি আজ-জলের উপর দিয়ে
সমস্ত আকাশ জুড়ে দুপুর দহন
সূর্যের চুম্বনে
নীলের স্রোতে হেঁটে যাই
স্মৃতির পৃষ্ঠা উল্টে
শুধুই ছবি আমি, তুমি চলমান সুর
যখন তখন
আমি আর প্রকৃতি দেখি না
ওষ্ঠে লাগে না তাই প্রাণের নূপুর
বাতাস তা জানে,
তোমার চোখে আমি তো কিছুই না
আমি এক নিস্পৃহ প্রাণ
বাতাসে বিসর্জন-নেতিতে নির্বাণ!
3. জল
অন্ধকারে জলের কোলাহল
জলেরই উপর জল হয়ে
লুকানো নেশার মত জীবন-যাপন
জল নেমে গেলে জলের তৃষ্ণায়
জন্মসূত্র খোঁজে একটা জ্বলন্ত হৃদয়
4. মাটি
ফেলে আসা মাটি
ম্লান করা অন্ধকারে
চাঁদ ছুয়ে দিলো!
অমোঘ নিয়তি আমার
চেনা মৃত্তিকার ঘ্রাণে
স্মৃতি ও বিস্ময়ের চোখে
শুন্যতার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছাপে
লোভের পলেস্তরা খসে পরে
অলীক পূর্নিমার হৃদয়ে
কালের ধুলোয় শিশিরের সোয়াদ
ঘুমন্ত শহরের বিভৎস ঠোঁটে
মাটির শহরে মাটি সরে যাচ্ছে নষ্ট হাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে
আমার আঙুল আর বুড়ো আঙুলের মাঝখানে
মাটি ধরে রাখে আকাশের নীচের সকল ঘটনা
অথচ কি আশ্চর্য!
মাটির গভীরে মাটি আর জলের গভীরে জল
এখন আর পাশাপাশি হাঁটে না
একটুকরো মাটির বর্গে
না আছে মাটি না আছে ধুলি কাদা
আঘাতে পরাঘাতে মাটির পরাণে মাটি নাই
অথচ সবারইতো মাটি চাই!
5. জন্ম
এখনো গেলনা আঁধার...
প্রেম স্ববিরোধ শুয়ে থাকে
বড়ই অদ্ভূত
জন্ম বিপ্লবে
সমতা ফিরিয়ে দিতে পারবে না
দুর্গন্ধময় এঁটেল সমাজ
তবু অষ্টপ্রহর জন্ম মায়ার
6. মৃত্যু
মাত্র একটি চুম্বন, মৃত্যু তারপরই;
মৃত্যুতেও লেপ্টে থাকবো সুগন্ধির
নীল প্রান্ত ছোঁয়ানো উচ্ছিষ্ঠ ঠোঁটে
স্বপ্নলোকের বিহবলতায়
বিপুল উৎসাহে
তখনই তো মৃত্যু এ পৃথিবীতে
যখন কবিতার পংক্তি হবে
বিধাতার অপাংক্তেও সংলাপ
7. সময়
জলঘড়ি’ একাকী আসে, সূর্যঘড়ি’ নিজেতে বিলীন
ভুল মেঘ বেয়ে আসা বেহায়া সময়
কালপুরুষের শস্য বুকে নিয়ে বালিঘড়ি' হয়ে যায়
বালিয়াড়ি প্রান্তিকে অন্যদের সময়
হেরে যাওয়া সময়ের ভুল জন্মক্ষণে
সময় শিরোনাম দেয়ার সময় এসেছে
মুছে যাওয়া সময়-সেতু-পথে
মীনরৌদ্রমুখর জলের স্বরে
সভ্যতার সকল ব্যর্থতা
সময়ের দৈন্য অক্ষরে ধাবমান নিশ্চিত যাত্রায়...
8. কাম
প্রসঙ্গ যদি তব কাম
ক্ষুধার্ত নদীর মতো
রতির আঙ্গুল গলে
নেমে যাই দেহের গভীরে
তৃষিত জলের সন্ধানে
উড্ডীন শস্যশরীর উপবাস ভেঙে
তৃপ্ত করে নরম গুল্মের ত্রিকোন কর্দম
নক্ষত্রের বুক ছুঁইয়ে শ্বেতগোলাপের কলিদ্বয়
যেন কাবিনহীন সরলতার ঠোঁটে কপোতের মিথুনমাতম
নাভিপদ্মের মৌতাতে জৃম্ভিত যুগলচম্পক সিক্তসুখদে বন্য
অকর্ষিত উপত্যকায় ঘামে ভেজা অন্তিম চুম্বনের জন্য
দীপ্র কামাগ্নি ব্যসনী বৈক্লব্য লালস অধরে পোড়ায়
বুনো হাঁসের কামার্ত দঙ্গল
কামসমুদ্রে উন্মথি শুভ্র-কাশদল
কামে ঘামে গন্ধময় খরাদগ্ধ এঁটেল
স্তনস্তবে বিকশিত নরক উর্বশী
কামভিখিরির কপর্দকশূন্য করপুটে
এঁকেছিল বর্ষার নিঃস্ব বিকেল
9. ঘাম
বিশ্বাসে নিঃশ্বাসে লুকোনো ঘাম
ঘামসূত্রের ভুল ফলাফলে
হেঁটে যায় স্বপ্নের লাশের ওপর
বিরক্তির ঘাম ঝরিয়ে দুর্বিনীত স্পর্ধায়
স্বেদগন্ধ মাখা স্মৃতির অপেক্ষারত সময়
তোমার আমার অমীমাংসিত ঘামায়ন
অস্বীকার করে ঘর্মাক্ত মগ্ন চেতনায়
10. নাম
নাম?
গোত্র? পরিচয়?
বিনে প্রেম পরিনয়?
এতই সহজ, বোধ হয়?
করি চিৎকার,খুঁজি নাম হন্নে হয়ে
সর্বত্র দেখি শুধু সারা পাতা জুড়ে
তোমারই নাম
অবশেষে ফিরে এলাম
অসমাপ্ত জলের গভীরতা নিয়ে,
ব্রহ্মতালুর নীচে
ব্যাকুল নীলের কাছে
নামের সন্ধানে
নামে সর্বস্ব নামে ঐশ্বর্য
নামকীর্তন স্বপ্নধূলিতে লীন
আজও তাই
আমি নামহীন গোত্রহীন!
-স্বপ্নময় স্বপন©