সযত্নে লালিত অবহেলা,
সকাতরে কুড়ানো উপেক্ষা-অবজ্ঞা-অপমান,
নিষ্ক্রিয়-নিঃস্পৃহ-নিস্তেজ তারে
আঘাত দেয়না কভু আর। বিষণ্ণ নির্বিকার দুটি চোখ
ধূসর পাণ্ডুলিপির পাতায় তাকায় না আর,
সাতটি তারার তিমিরের দিকে যায় নাক খসে,
রূপসী বাংলার রূপে করে না অবগাহন।
তার রবীন্দ্রপ্রেমি মন ধায় না গীতাঞ্জলীর পানে—
সঞ্চয়িতা, গীত-বিতানের করে না অন্বেষণ।

সবুজ পেপের মতো তরতাজা যেই প্রাণে
একদিন জমা হতো স্নিগ্ধ সফেদ শত স্বপ্নের কুড়ি
সে প্রাণ অচীন আজ,
হলুদ বুকের মাঝে পড়ে আছে একরাশ
বিবর্ণ বিশ্বাস ঘেরা ছাইরঙা স্বপ্নের লাশ—
স্বপ্ন মুকুর ঘিরে করুণ জেলির ছাই—
                         কালো আবরণ।

সমস্ত সন্ধ্যার আঁধার জমে
পঁচা শ্যাওলার গাঢ় আস্তরণ পড়ে তার নির্মল বুকে;
পৃথিবীর সব বিবর্ণ বিকেলের ধুলো-বালু-জমা
ধূসর ধোয়াশারা  চোখে ফেলে ছানি;
সমস্ত প্রেমের ভাষা, হৃদয়ের সব বুলি
                     জমে তার বুক করে ভারী।

আমি কেন ভালবাসা বুঝি নাকো?
বুঝি নাকো কেন তার অন্তরের ভাষা?
ওই আখির আখর কেন সযত্নে পড়ে না হৃদয়?
বোঝে নাকো কেন তার চোখের পিপাসা?
জানি তারে বুঝি নাকো তবুও তো তারই গান গাই;
তবু তার তরে সমস্ত প্রেমের ভাষা,
হৃদয়ের সব বুলি জমে জমে বুক করে ভারী:
ক্লান্ত ব্যস্ত এ শহরে কত করে পাই তারে—
                           কী করে হারাই!