মনে পড়ে, তোমার দু'চোখে কত স্বপ্ন ছিলো?
মনে পড়ে, কত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে
ওই স্বপ্নাতুর চোখে কালো দাগ জমিয়ে
পেয়েছিলে সাধ আর সাধনার স্টেথোস্কোপ-অ্যাপ্রন!
শাড়ির ওপর বহু আকাঙ্ক্ষিত সাদা অ্যাপ্রন জড়িয়ে
সেই দিন নাবালিকা শিশুর মতো কী প্রফুল্ল হেসে বলেছিলে,
"মনে বা মাথায় কোনো ব্যামো হলে সগর্বে চলে এসো,
চলে এসো একান্তে, নির্দ্বিধায়!"

আমি ভালো নেই—
আমার নিঃশ্বাসে আজ বিষ ঝরে,
মেনিনজেসের পর্দায় ক্রমে ক্রমে জমে ঘৃণার আস্তরণ।
হাইড্রোফোবিক রোগীর মতো আজ আমি আতঙ্কে কেঁপে উঠি,
আমার হিমোফোবিক হার্ট আজ থেমে যায় ক্ষণে ক্ষণে।

আমার রক্তফেনা চোখে সব গাঢ় লাল লাগে ভারী:
আমি দেখি বৃষ্টিস্নাত কৃষ্ণচূড়া থেকে চুইয়ে পড়ে রক্তের ফোটা,
দেখি আজন্ম বিকৃত পুরুষের আঁকা পাশব অহমতীলক—
ক্লান্ত পথচারীনির ঘামে ভেজা সিঁদুর—
যেন তীব্র আঘাতে ফেটে যাওয়া কপালে রক্তের বুদবুদ!
এই স্নিগ্ধ সকালের মাঠ, এই পুর্ণিমা রাত আমি চোখে দেখি নাকো,
আমার বিদঘুটে বিভৎস ভয় হয়, আমি আৎকে উঠে চেয়ে দেখি—
পৃথিবী জুড়েই মানুষের অভাব—তদুপরি শুধু পুরুষের পায়চারি—
না না, পুরুষ না— একেকটা পুরুষ যেন এক ঝাক নিশাচারী বুনো হায়না।

এতটুকু ভালো নেই আজ— এই অসুস্থ পৃথিবীর অসুস্থ মানুষের
অসুস্থ মানসিকতার থেকেও আজ আমি অসুস্থ ভীষণ।
ঘুণে ধরা কাঠের মতো, পচে যাওয়া তন্ত্রের মতো
ক্ষীয়মান আজ আমার দু'শ ছয় হাড়!
আমার অলিন্দ-নিলয়ে ফোটে বিষাক্ত কালসাপের এক'শ তের দাঁত–
আমার অস্তিত্বের মুখে থুথু ছোড়ে রোজ দেড়শো গ্রাম পৌরুষের পাপ!

আমাদের দু'চোখে, মনে পড়ে মৌমিতা, কত স্বপ্ন ছিলো?
তোমার সে চোখে আজ থল থলে রক্ত জমাট—
                             আমার দু'চোখ জুড়ে পুরুষত্বের গ্লানি।