এখনো ভীষণ মনে পড়ে, রেহনুমা!
এখনো রাতের আধারে
বুকে জ্বলে নীল প্যারিস রোডের আলো:
সে আলোয় দেখি কলেজ পালায় রোজ
কত তুমি আর কত কতগুলো আমি!
প্রদীপের সেই লাইব্রেরীটায় আজও
খুজে পাই আমার হলুদ সে পাঞ্জাবি!

আজও কানে আসে কত চুড়ির আওয়াজ,
চোখে ভাসে ফিনফিনে নীল শাড়ি;
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় এখনো দেখি
অপেক্ষারত কত পুরুষের ভীর—
অগোছালো চুলে ধীর পায়ে হেটে চলে
আজও সেইমত বালিকা, রমণী, নারী!

কাপাকাপা স্বরে আজও ভেসে আসে
স্নিগ্ধ মধুর ফজরের আজান কানে;
মাইকে শাণায় চিরপরিচিত মৃত্যুশোকের সুর—
শুধু আমরা দুজন— আমরা, আমরা রেহনুমা
আজকে... আজকে অনেক দূর!

নীল একখানা আচল পায় না বলে
এই অনড় ফ্রেমের চশমার কাচগুলো
ধুলো জমে রোজ যেমন ঘোলাটে হয়,
ঠিক তেমনই, তোমার চেহারা—তোমার স্মৃতি
ধুসরতা জমে ম্লান হয়ে হয়ে
বরফের মতো ক্রমে ক্রমে হয় ক্ষয়।

স্বচ্ছ জলের নোনা ধারাতেই জানি,
রোজ ধুয়ে যায় ধীরে
দুনয়ন হতে তোমার দুচোখ,
ঠোটকাটা কথা, হাসি।
'অপেক্ষা'র বুকমার্ক হতে তবু
মুছে যায় না তোমার লেখা:
আজও অম্লান ছাইরঙা অক্ষরে
‘ভালবাসি, ভালোবাসি।’

জানো আজ কোনো কবিতা আসে না মাথায়—
নিকোটিন জমে মগজটা হয় ভারী।
বহু প্রচেষ্টার পর তবুও সেদিন কত করে
ময়মনসিংহ গিয়ে একলা অন্যমনে
ছেড়া একখানা কাগজে কলম ঠুকতে দেখি
তোমার নোলক, নীল মার্বেল চোখ,
তোমারই সে নীল শাড়ি!
চোখে জল আসে; খানিক হেসে চেয়ে দেখি
ব্রহ্মপুত্রের বুকে চড়ে ডিঙি করে ভেসে যায়
আমার দু চোখ হতে রেহনুমা সারি সারি!