শূন্য করে রক্তিম গোধূলির আকাশ,
একদল ছাই-রঙা কপোতের ঝাঁক ফেরে নীরে;
আদিম কালের এক দড়ি-ছেঁড়া অবাধ্য গবাদি পশু
নির্জন নদীর ছায়াশীতল দক্ষিণ মাঠে
নষ্ট প্রেতাত্মার মতো সজীব সবুজ ঘাস গো-গ্রাসে গেলে—
কখনো মাড়িয়ে যায় খুরের আঘাতে;
নিষ্প্রাণ মাঠ ফেলে শেষমেষ দ্রুত সে পালায়—
ভয়ে ভীত পিশাচের মতো, কোনো এক অজানা তাড়ায়!
অবশেষে ধীরে ধীরে মুছে যায় গোধূলির রং:
রক্তিম আকাশতল ছেয়ে যায় গাঢ় সন্ধ্যায়।
আঁধারের আভাস পেয়ে অজস্র জোনাকির দল
বিরুৎ-গুল্মকে ঘিরে আখড়া সাজায়;
ফুল শয্যার ঝাড়বাতির মতন আলো বিতরণ করে
নব পুষ্পভারে নত শিউলি শাখায়।
নির্বোধ নদীর কলকল ধ্বনি শুনে মনে হয়
যেন অভিসারে চোর-চুম্বন-স্বর অপ্রস্তুত প্রেমিকার;
দূর হতে খানিকটা ক্রূর হাসে তৃতীয়ার চাঁদ।
শিলার আঘাতে চূর্ণ রঙ্গনের মতো বিনষ্ট হৃদয়ে
এলোকেশে বসে থাকে পাঁড়েদের নন্দিতা—নন্দিতা পাঁড়ে।
অবহেলে হেলে দেয় দেহ হিজলের গায়ে;
ধীরে ধীরে নয়ন ফেরে দিগন্তের পানে—
তার দু'চোখেতে জাগে করতোয়া আর হৃদয়ে অন্ধকার!
অবসন্ন সে নয়নে ছানি ফেলে বিষণ্ণ ছায়া—
যেন এক খণ্ড ঘন কালো বেওয়ারিশ দৈত্যাকার মেঘ
নির্মেঘ নীলাকাশে পূর্ণ-পুর্ণিমার চাঁদ ঢেকে
বিভৎস ছায়া ফেলে শতদল বুক থেকে জোৎস্না কেড়ে নেয়।
সে শীতল নিষ্পলক চোখ যেন নিস্তব্ধ আমাবশ্যার রাতে
মধ্য মহাসমুদ্রের নীলে ক্ষীয়মান হিমশৈলস্তুপ;
যেন মাঝরাতে আধভেজা জনপথ—
শহুরে অসার জড় অন্ধকার সরণীর 'পর
আয়ুহীন দীন ক্ষীণ অসচ্ছ মলিন
নিবু নিবু ল্যাম্পপোস্টের তন্দ্রাল আলোয়
উবু হয়ে পড়ে থাকা আর্ত করুণ কোনো ভিখারির মতো
দু আঁজলা জমাট বাঁধা নিষ্প্রাণ নিশ্চল
নির্বেগ, নিরাবেগ, নিস্তব্ধ, নিস্তরঙ্গ বৃষ্টির জল;
সেই দুটো চোখ যেন বৃষ্টিস্নাত থমথমে রাত—
থমথমে রাতে গুমোট ব্যালকনি'য়
মৃত রজনীগন্ধার পাশে একাকিনী বসে থাকা
শ্রান্ত অভিমানী কিশোরীর মতো মৌন মলিন;
সেই একজোড়া চোখ সহস্র হেক্টরব্যাপি
অপরাজিতার বাগানের থেকে
আরো আরো আরো বহুতর গাঢ় নীল!
আমি যতবার ওই নদী তীরে গিয়ে স্বপ্ন বেঁধেছি আশায়—
একান্তে তার হৃদয় গহনে চেয়েছি একটু ঠাঁই,
শুষ্ক কণ্ঠে, স্যাঁৎসেঁতে চোখে বলেছে সে বারবার
"যে তীব্র আঘাতের পর শত করাঘাতেও কেউ খোলে নাকো আর
বেদনার বরফে খিল ধরে যাওয়া রুদ্ধ হৃদয়ের দ্বার—
আমি সেই ব্যথা বুকে নিয়ে ফিরি— তুমি রাখো নাকো খোঁজ তার!''
আমবটতলা, যশোর (4:44 PM)
৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (১৪ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ)
পুর্বসংস্করণ :
শূন্য করে রক্তিম গোধূলির আকাশ,
সাদা নয়, ছাই-রঙা কপোতের ঝাঁক ফিরে আসে;
নদীর দক্ষিণে ছায়াশীতল মাঠ চষে বেড়ায়
দড়ি-ছেঁড়া কোনো এক অবাধ্য গবাদি পশু—
নষ্ট প্রেতাত্মার মতো মাঠের সবুজ ঘাস গো-গ্রাসে গিলে,
কখনো মাড়িয়ে গিয়ে খুরের আঘাতে,
নিষ্প্রাণ মাঠ ফেলে দ্রুত সে পালায়—
ভয়ে ভীত পিশাচের মতো, কোনো এক অজানা তাড়ায়!
ধীরে ধীরে মুছে যায় গোধূলির রং:
রক্তিম আকাশতল ছেয়ে যায় গাঢ় সন্ধ্যায়।
আঁধারের আভাস পেয়েই অজস্র জোনাকির দল
বিরুৎ-গুল্মকে ঘিরে আখড়া সাজায়,
সদ্য কুসুমিত শিউলি শাখায়
ফুল শয্যার ঝাড়বাতির মতন করে আলো বিতরণ;
নির্বোধ নদীর কলকল ধ্বনি,
যেন অভিসারে চোর-চুম্বন-স্বর অপ্রস্তুত প্রেমিকার,
শুনে খানিকটা ক্রূর হাসে তৃতীয়ার চাঁদ;
শিলার আঘাতে চূর্ণ রঙ্গনের মতো বিনষ্ট হৃদয় নিয়ে
এলোকেশে বসে থাকে পাঁড়েদের নন্দিতা—নন্দিতা পাঁড়ে।
অবহেলে হেলে দিয়ে দেহ হিজলের গায়ে
সে চোখ রাখে দিগন্তের পানে—
তার দু'চোখেতে জাগে করতোয়া আর হৃদয়ে অন্ধকার!
সে শীতল নিষ্পলক চোখ যেন নিস্তব্ধ আমাবশ্যার রাতে
মধ্য মহাসমুদ্রের নীলে ক্ষীয়মান হিমশৈলস্তুপ,
সেই দুটো চোখ যেন বৃষ্টিস্নাত থমথমে রাত—
থমথমে রাতে গুমোট ব্যালকনি'য় বসে থাকা
শ্রান্ত অভিমানী কিশোরীর মতো মৌন মলিন;
সেই একজোড়া চোখ সহস্র হেক্টরব্যাপি
অপরাজিতার বাগানের থেকেও আরো, আরো বহুতর গাঢ় নীল!
সে দু'চোখে ছানি ফেলে বিষাদের ছায়া—
যেন অরুণ কিরণ রুখে পূর্বাকাশে পৃথিবীর সব
রুক্ষ উগ্র কাকের গণজাগরণ; শরৎের নিঃশব্দ শুভ্রাকাশ ভেদ করে
তীক্ষ্ণ কর্কশ কণ্ঠে ক্রমাগত কুচকাওয়াজ—অরুণোদয়ের ক্ষণেই
সূর্য বিরোধী কটু ঝাঁঝালো স্লোগান, বেজন্মা মিছিল;
যেন নির্মেঘ নীলাকাশে পূর্ণ-পুর্ণিমার চাঁদ
ঢেকে বিভৎস ছায়া ফেলে এক খণ্ড ঘন কালো
বেওয়ারিশ দৈত্যাকার মেঘ: শতদল বুক থেকে জোৎস্না নেয় কেড়ে।
আমি যতবার ওই নদী তীরে গিয়ে স্বপ্ন বেঁধেছি আশায়—
একান্তে তার হৃদয় গহনে চেয়েছি একটু ঠাঁই,
শুষ্ক কণ্ঠে, স্যাঁৎসেঁতে চোখে বলেছে সে বারবার,
"যে তীব্র আঘাতের পর শত করাঘাতেও কেউ খোলে নাকো আর
বেদনার বরফে খিল ধরে যাওয়া রুদ্ধ হৃদয়ের দ্বার—
আমি সেই ব্যথা বুকে নিয়ে ফিরি— তুমি রাখো নাকো খোঁজ তার!''