তোমাকে ছাড়াও বাঁচা যায়, বেঁচে থাকা যায়,
তোমাকেও দিব্যি ভুলে থাকা যায়
ক্ষয়িষ্ণু জীবনের ব্যস্ত-তাড়ায়।

তোমাকে ছাড়াও জানি বাঁচা যায়,
তবু কেন যেন মন বারে বারে আমারে শুধায়,
"সে কি মাখে জ্যোৎস্নার আলো, সে কি দেখে সন্ধ্যার তারা?
ওই জোনাকির ঝাঁক দেখে সে কি আনন্দে  হয় দিশেহারা ?
সে কি ভেজে বৃষ্টির জলে, সে কি পোড়ে রোদ্রের আঁচে?
সে কি চার দেয়ালের ছাঁচে একা ধুকে ধুকে বাঁচে?"
তবু তোমাকে ছাড়া বাঁচা যায়, তবু তোমাকে ভুলে থাকা যায়।

রোজ ভোরে জানালা খুলতে গিয়ে দেখি এক টিকটিকি—
ঠাণ্ডা সাদা রক্তের নিথর সরীসৃপ ঠিকই
বেঁচে থাকে জানালার চাপ সয়ে সয়ে।
অন্তরে অন্তরে যায় কি সে ক্ষয়ে?
জানি না তা, বুঝি না'কো তাকে—
শুধু বুঝি সে-ও বেঁচে থাকে!

আমার জানালার কোণে রাখা হলুদ গোলাপ টব
কোনোদিন জ্যোৎস্নার আলো, বৃষ্টির ছোঁয়া অনুভব
করে নাই। মেলতে ডানা মানা তার পোড়ামাটির ছাঁচে
জন্মাবধি শিকড়গুলো আটকা পড়ে আছে।
পায় না মাটি, পায় না জল— ক্ষীণ সূর্যের আঁচে
অযত্ন আর অবহেলায় তবু বাড়ে, বাঁচে!

অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলা এক দলা ভাত পেয়ে
শান্তিতে পেট পুরে খেয়ে
নেয়, কৃতজ্ঞতায় বারবার মোলায়েম ঢেকুর
তোলে পশম ঝরানো পুঁজ ভরা দেহে পথ-ক্লিষ্ট কুকুর।
ঘৃণা মাখানো তীব্র বিরক্তি ভরা পদাঘাত ভুলে
কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমায় থাকে নোংরার স্তূপে মাথা তুলে!
লাথি-ঝাঁটা খেয়ে বর্ষায় ভিজে, তপ্ত রোদের আঁচে
আবার শুকায়ে দেহ ওরা ঠিকই বাঁচে!

আমার বইয়ের তাকে পোকামাকড়ের ঘর,
আজ হঠাৎই চোখ মেলে দেখি তার ওপর
কতগুলা আরশোলা শুয়ে আছে। গীতবিতানের মাঝে—
পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া বাধাই আর ধুলো মাখা মোড়কের ভাঁজে
ওরা আধপেষা হয়ে পড়ে আছে।
ওদের নিথর নীরব হৃদয়ের কাছে
কোনোদিন গীতবিতানের সুর পৌঁছায় নাই।
নীরবে হৃদয়ে ওদের কেউ লয় নাই ঠাঁই।
ওদের হৃদয়ে খেলা করে নাই কোনোদিনই
কোনো মায়াবন বিহারিণী হরিণী।
ওদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নাই, ব্যথা নাই, ভালোবাসা নাই—
আছে শুধু বাঁচবার তৃষা: আধ-পচা জীবনের পচা-গলা ছাই!

তোমাকে ছাড়াও বাঁচা যায়, বেঁচে থাকা যায়,
তোমাকেও দিব্যি ভুলে থাকা যায়
ক্ষয়িষ্ণু জীবনের ব্যস্ত-তাড়ায়।

তবু পথ-ক্লিষ্ট কুকুর আর চাপা পড়া
আরশোলাদের মতো বাঁচতে চাই না তাই
আমি ভালোবাসি, আমি ভালোবাসি, আমি ভালোবেসে যাই।






আমবটতলা, যশোর (৫:০৯ PM)
১৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (২৭ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ)