ছোট্ট আবীর, আবীরের মতো মুখখানা লাল,
স্বপ্ন দেখে পৃথিবীর সব দলিতের পীড়া করবে সে দূর।
তবু তার সেই আজন্ম স্বপ্নাতুর চোখে কালো দাগ,
হৃদয়ে ক্ষত: রোজ রোজ আতঙ্কিত ভীতির ভূমিকম্পে
কেঁপে ওঠে দেহ; প্রচণ্ড বেগবান বর্ষার জলের তোপে
ভেঙে যায় যখন অবরুদ্ধ আর্তনাদের প্রথম শিকল,
চোখ ফেটে ঢল নামে তার— তারই মায়ের পিঠে,
রোজ রোজ জমা হয় পচা শ্যাওলার মতো দাগ—
বুনো শেয়ালের থাবা: পিতা তার মাতাল অসুর।

ও পাড়ার মোর্শেদ, কণ্ঠে তার ঝরে নাকো গান
ঝিম ধরে থাকে তবু— মাঝরাতে ঘরে ফেরা
বেকার পিতার দুশ্চিন্তার পারদের মতো,
অভিমানে শুয়ে থাকা কিশোরীর চিনচিনে ব্যথার মতো,
নিস্তব্ধ রাতের ক্রমাগত ঝিঁঝিঁর ডাকের মত,
আষাঢ়ের অঝোর ধারার তোপে জমা পলির মতো
মাথার ভেতর জমা হয় তার সুরের স্তূপ।
তবু বৃষ্টি হয়ে তা ঝরতে না পারে, ঝরাতে না পারে
কণ্ঠ তা তার! মূক নয়, বোবা বা বধির নয়
তবু কণ্ঠে তার কেন খেলে নাকো সুর?
কেন আজন্ম বঞ্চনার স্মৃতির মতো জমে থাকে
শুধু মাথার ভেতর? ধরা কেন দেয় না সে তারে?

গুমট হয়ে জমা থাকা প্রত্যাশার চাপে পৃষ্ঠ
পাঁড়েদের নন্দিতা কত খাপছাড়া কথা আধখানা শুনে
বেখেয়ালি ভানে  সরে যায় নিঃশব্দে, চুপিসারে
কেউ জানে না। কত অট্টহাসির অট্টরোলে
চাপা পরে বেঁচে রয়, কত ভ্রুকুটি, কত কটাক্ষ— বিদ্রূপকে
তাচ্ছিল্যের ভান করে বেঁচে রয়; মরতে ভীষণ ভয় হয় বলে
কত ন্যাকা অজুহাতে বেঁচে রয় কেউ জানে না!


জীবনের অহরহ এই শত ‘স্বপ্ন-প্রাপ্তি-প্রত্যাশা’ দ্বন্দ্বের কাছে।
অতি তুচ্ছ নর-নারীর এই বিরহ, বিচ্ছেদ, প্রত্যাখ্যান
এই প্রেম, প্রণয়, প্রীতি, এই অতি মহিমান্বিত ভালোবাসা।