নূরজাহান
----------------------------------
ঐ ভস্মিভূত বৃক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা কর
মাটিতে পড়ে থাকা হাড়গুলি কার?
এই মাত্র বৃক্ষের সঙ্গে পুড়ে ছাই হল একটি মানুষ।
কে ছিল সে?
সেতো মানুষ নয়
নারী!

অতত্রব শতাব্দীর লাঞ্জনা শুধু তার জন্য সঞ্চিত।
পৃথিবীর সব পাপের,
সমাজের সব অবক্ষয়ের দায়ভার শুধুই কী সে নারীর?

ঐ ভস্মিভূত বৃক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা কর
মাটিতে পড়ে থাকা হাড়গুলি কার?

এইমাত্র সভ্যতার ঘৃণ্যতম বিচারে পুড়ে ছাই হলো নিষ্পাপ একটি হ্নদয়
ভালোবাসা ‘ পবিত্র একটি শব্দ
না পাওয়ার অতৃপ্তির মাঝে
ভালোবাসা শান্তি খুঁজে ফেরে।

তেমনি শান্তি খুঁজেছিলো
মধুখালি গ্রামের নূরজাহান!
হয়তো হ্নদয়ে ছিল না বলার ব্যথার প্রস্রবণ।
বয়স্ক স্বামীর ঘরে ভালোবাসার আলপনা সে পারেনি আঁকতে।
কাজল কালো চোখদুটি অব্যক্ত কান্নায় কেবলি খুঁজে ফিরেছে হারানো স্মৃতিময় ছেলেবেলা
আর স্নিগ্ধ কৈশোরকে।
সকালের নির্মল রোদের মত ছিল ছেলেবেলা,
খুনসুটিতে, অভিমানে, প্রীতিময়তায় উজ্জ্বল ছিল সবুজ কৈশোর।
পারিপার্শ্বিকের কারসাজিতে কৈশোরের বর্ণালী একটি দিনে,
বিয়ে নামক পুতুল খেলা ঝরণার অবিরাম ধারাকে করেছিল মন্থর।

ঐ ভস্মিভূত বৃক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা কর
মাটিতে পড়ে থাকা হাড়গুলি কার?

আদরিণী কন্যা এক
পুড়ে ছাই হলো সভ্যতার নাকের ডগায়।
বৈশাখী বিকেল সাঁকো গড়ে নূরজাহানের হ্নদয়ে,
সাঁকো বেয়ে আনমনে সে পৌঁছেছিল শিমুল শৈশবে।
সেই বকুল ফোঁটা ভোরে,
বেলকুঁড়ি সুবাসিত প্রভাতে-
নতুন করে ভালোবেসেছিল এক যুবাকে।
যাঁর মাঝে মাখা ছিল কৈশোরে স্বপ্নে দেখা মানুষটির আদল।

স্বামীর দয়াহীন গৃহের দেওয়াল ভেদ করে বাইরে যে পৃথিবী আছে-
যে পৃথিবীর স্পষ্ট কোন ধারণাকে নিজের মাঝে করেনি সে ধারন-
কিন্তু সেই পৃথিবীতে যেতে বড্ডো ইচ্ছে হতো তার।
অনভিজ্ঞ নূরজাহান তাই সমাজপতিদের হাতে জীবন্ত দগ্ধ হলো।
হয়তো সে ছিল কোন দুঃখী বাবার সোহাগী কন্যা
হয়তো একদিন বাবার গলা জড়িয়ে দূরন্ত প্রশ্রয়ে আবদার করেছে।
আজ সব আন্তরিকতা, অন্তরঙ্গতা আর প্রাণের সব আনন্দ সুখ মেশানো একান্ত আশ্রয় থেকে চলে গেছে নূরজাহান।

ঐ ভস্মিভূত বৃক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা কর
মাটিতে পড়ে থাকা হাড়গুলি কার?

এই ঘাস আর ফুলের সমারোহ্
মা’র লাল পেড়ে শাড়ি,
ভেজা শালিক,
এই মৌনতা ভরা সন্ধ্যা-
কোন কিছুর মাঝেই আজ সে নেই।
জীবনের বিশাল গোলাপ গাছের অজস্র গোলাপ যেন এক সঙ্গে ঝরে গেল।