সড়ক নম্বর শুন্য, বাড়ি নম্বর শুন্য

সড়ক নম্বর শুন্য, বাড়ি নম্বর শুন্য
কবি
প্রকাশনী ঘাস প্রকাশন
প্রচ্ছদ শিল্পী অরুপ বাউল
স্বত্ব শান্তি রায়
প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বিক্রয় মূল্য ১৫০/-

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

প্রেম-অপ্রেম-বিরহ

ভূমিকা

কবির পুরো নাম শান্তিবাবু প্রসাদ রায়। আমি তাকে সস্নেহে শুধু শান্তি নামে ডাকি। অফিসে আমার প্রতিবেশী শান্তি মৃদুভাষী, ভীষণ বিনয়ী ও সদাহাস্যময়। একজন কবির এসব গুণ থাকতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি থাকে, মন্দ কী? এমন গোবেচারা কবিটি যখন হাত কচলে এতো এতো প্রেমের কবিতা আমাকে ধরিয়ে দিলো প্রায় বছর খানেক আগে, প্রথমত পড়ার জন্য, দ্বিতীয়ত মূল্যায়ন ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য এবং সবশেষে ক’দিন আগে একটি ভূমিকা লেখার জন্য, বিচিত্র সব অনুভূতি আমাকে পেয়ে বসে। ও যেভাবে বলে না করা যায় না। আমার খুব ইচ্ছে করেছিলো এই দেবদাস কবিকে জিজ্ঞেস করি (করিনি, জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লেগেছিলো), তুমি আমস্তক এতো প্রেম ধারণ করে আছো কী করে! না জিজ্ঞেস করে যা মঙ্গল হয়েছে, আমি তার মন খুলে লেখার কাব্যিক প্রবণতাকে প্রভাবিত বা অবরুদ্ধ করিনি। আমার তো মনে আছে, এ রকম অযাচিত উপদেশ-সমালোচনায় রোমান্টিক কবি কীটসের কী দূর্গতিই না হয়েছিলো। শান্তির প্রকাশ ও অপ্রকাশের ভার একান্তভাবে তারই। সেখানে অনুপ্রবেশের সুযোগ কারো নেই। তাই আমি শুধু দুটো আটপৌরে কথা বলে কবি ও কবির কবিতাকে স্বাগত জানাবো।
গ্রন্থভুক্ত একটি কবিতার নামেই কাব্যগ্রন্থটির শিরোনামঃ সড়ক নম্বর শূন্য, বাড়ী নম্বর শূন্য। শিরোনামটি আমাকে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত “আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে/ বসন্তের বাতাসটুকুর মতো” গানটির কথা মনে পড়িয়ে দেয় যা শ্রাবনী সেন “বৃহৎ বাড়ির মধ্যে কেবল একটি ঘর বন্ধ... সেই অবধি এখানে আর কেউ আসেও না/ এখান হইতে আর কেউ যায়ও না/ সেই অবধি এখানে মৃত্যুরও মৃত্যু হইয়াছে” এমন কিছু পংতি আবৃত্তি-আলাপ শেষে অসাধারণভাবে গেয়েছেন। সে বাড়ি একদা পূর্ণ ছিলো, এখন শূন্য। কাদম্বরী বিহীন। শান্তির শূন্য নম্বর সড়কের শূন্য নম্বর বাড়িটাও তাই। একসময় নম্বর ছিলো। কথিত প্রিয় মানুষটি নেই বলেই সব কিছু শূন্যত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। বেশ একটা শূন্যতার ঘোষনাই দিলো কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম। কবিতা থেকে কবিতায় ঘুরে-ফিরে একই মুখচ্ছবি, একই হারানোর গল্প, একই হাহাকার যা কখনো অতি উচ্চ কন্ঠে, কখনো বা অনুচ্চ কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে। বোঝা যায়, চন্ডীদাসের এক যুগ আর এ যুগের কবির যুগ যুগ প্রতীক্ষা। চন্ডীদাস নাকি তার রজকিনির জন্য এক যুগ অপেক্ষা করেছিলেন, সেটা এক দিক থেকে মধুর বেদনা। আলোচ্য কবির ক্ষেত্রে তা বিধূর বেদনা। কারণ টানেলের অপর প্রান্তে আলোর প্রতিশ্রুতি নেই। যেহেতু ‘ওগো বিদেশিনী’র শূন্য বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের কোন সম্ভাবনা অন্ততঃ কবিতায় নেই, তাই কবিকে ভিন্ন ভাষায় অনেকটা জীবনানন্দের মতো হাপিত্যেস করতে হয় : “সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,/ বলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;/ ফিরে এসো সুরঞ্জনা:/ নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে।” আমাদের কবির নামহীন সুরঞ্জনা আপাতত দেশে নেই : “জানি, অবান্তর প্রশ্ন! তবুও.../ কেমন আছো? ভালো? তোমার আমেরিকা কেমন আছে?” [খোলা চিঠি]। আমাদের কবি আড়ালবাজ নয়; যাহা বলিব সত্য বলিব- ধাঁচের (অবশ্য কাব্য বয়ান যদি বাস্তব বয়ান হয়)। সে দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার কিছুই লুকায় না, এমন কী অশ্রুও না। আস্ত কাব্য গ্রন্থটি যেনো দুঃখের কথামালা, বিরহ বেদনায় নিরন্তর কাতর। আমাদের শান্তির দোষ কী, কবি শিল্পীরাইতো প্রেম প্রেম করে চিরকাল আকুল হয়েছেন। আফটার অল, মান্না দে সাক্ষী : “হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে/ প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে।” ভালোবাসলে ভরা বর্ষায় নদীর দুকুল প্লাবিত হবে, অশ্রুবৃষ্টি/ আনন্দবৃষ্টি(?) ঝরবেই তো। তবে আনন্দ এখানে স্মৃতি রোমন্থনে সীমাবদ্ধ যা দুঃখকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

গ্রন্থভুক্ত একাত্তরটি কবিতার অধিকাংশই প্রেম ও পরিণতি বিষয়ক। এসব অনেকটা একই আয়নায়, দিন রাত অমাবস্যা পূর্ণিমায় যাপিত ও কল্পিত নিজেকে দেখা বিচিত্র অথচ বিলক্ষণ একই রূপে। এই প্রেম কাঠামোর বাইরেও আরেকটি জগৎ আছে। তেমন কবিতা সংখ্যায় লঘিষ্ঠ হলেও বেশ ভিন্ন স্বাদের। এগুলোতে প্রাসঙ্গিক জীবন ও জাগতিক ভাবনা আছে, চারপাশের নৈরাজ্য ও অবক্ষয়ের প্রতিফলন আছে। তেমন একটি কবিতা “মুখোমুখি যিশু আমি”। এখানে চারপাশের জুডাস, মীর জাফর আলী খানদের চেহারা মুখ্য হয়ে উঠে। মনে হয়, এখানেই নিজের বৃত্ত ভাঙার একটা কাজ কবির মনোরসায়নে ঘটতে চলেছে। যা কালে কালে হয়তো আরো বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। “ভালোবাসা আর খুচরো আশা-প্রত্যাশা”-র (পৃষ্টা-৬৪) পাশাপাশি আরেকটু সময়সচেতনতার দাবি কিন্তু দু-একটি কবিতা জানিয়ে রাখলো। এ রকম নতুন নতুন বৃত্তে সহজ যাতায়াত করতে পারলে শান্তির কবিতা আরো বৈচিত্রের স্বাদ দেবে।
সচরাচর কবিরা আমাকে প্রশ্ন করেন, আমার কবিতাটি/ কবিতাগুলো কেমন লেগেছে? আটপৌরে প্রশ্ন। আমিও আটপৌরে উত্তর দেই: ভালো লেগেছে। কদাচিৎ কেউ জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কবিতা হয়েছে তো? ভাগ্যিস, তেমন কেউ জিজ্ঞেস করেন না। করলে আমি নিরুত্তর থাকতাম। কবিতা বিচার করবে কে? কার দাড়িপাল্লা সর্বজ্ঞ, নিরাবেগ ও নিরপেক্ষ? প্রতিটি কবিতার পাঠ (Reading), উপলব্দি সময় থেকে সময়ে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হয়। আমার গতকাল পড়া রবীন্দ্র কবিতাটি বা গানটি আজ ভিন্ন সময়ে ভিন্ন কিছুর আভাস দেবে-উপলব্দি জাগাবে-তাই স্বাভাবিক। সে অর্থে আমি শান্তিবাবু প্রসাদ রায়ের কবিতার বিচারে যাবো না। সব কবিতা কবিতা হয়ে উঠেছে কিনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পাঠকেরা নির্ধারণ করবেন। তবে আমি আশাবাদী তার কবিতা পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের মনের কথাই তো সে বলেছে, যে কথায় হয়তো পুনরাবৃত্তি আছে কিন্তু খাদ নেই, হয়তো আতিশয্য আছে কিন্তু অগৌরবের কিছু নেই। আমারও মাঝে মধ্যে ওর বয়সে ফিরে যেতে ইচ্ছে করেছে। ওর কৃতিত্বটা সেখানে।
সবশেষে কবিকে বলবো, শান্তি তুমি অনেক কষ্টে আছো, অন্ততঃ কবিতায়। তুমি কষ্টের সাথে গ্লানিকে একাকার করো না যেনো।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমি এ গ্রন্থের ব্যপক পঠনপাঠন প্রত্যাশা করি। আপনারা পড়ুন। কবির মনোবেদনা তাতে কিছুটা প্রশমিত হবে। আহারে, বেচারা এ যুগের চন্ডীদাস।


অধ্যাপক ড. সুরেশ রঞ্জন বসাক


উৎসর্গ

শ্রদ্ধেয় বাবা ও মা
শ্রী বাসুদেব প্রসাদ রায়
শ্রীমতি বৃন্দারানী রায়

কবিতা

এখানে সড়ক নম্বর শুন্য, বাড়ি নম্বর শুন্য বইয়ের ৪টি কবিতা পাবেন।

   
শিরোনাম মন্তব্য
কষ্ট দাও
নক্ষত্রের টিপ ১২
নিমন্ত্রণ ১৬
বৈপরীত্য