অগ্রসরমান, অগ্রসরমান, অগ্রসরমান, অতি দ্রুত
চতুর্দিক থেকে
নিরেট দেয়াল, সত্তা-চেপে-ধরা, দম-বন্ধ করা;
দেয়ালের গায়ে সংখ্যাহীন
সনাতনী উদ্যত তর্জনী, নিত্যদিন তার হাসি মুছে-ফেলা।
কেউ কেউ ঢেলা ছুঁড়ে মজা লোটে, কেউবা শাসায়
সর্বক্ষণ নানা ছলছুতোয়, সে নারী মাথা কোটে
বিরূপ বাসায়, ছেঁড়া সুতোয় সেলাই করে পীড়িত যৌবন।
কপালে, কোমরে, বুকে, হাতের চেটোয়, দু’টি পায়ে
জন্মান্ধ পেরেক ঠুকে দিচ্ছে বর্বরেরা; অট্রহাসি,
উপহাস অবিরত, থুতু এবং দেয়ালঘেরা
জীবন হাঁপায় জীর্ণ হাপরের মতো,
তৃতীয় প্রহরে
তার ফোঁপানিতে
উনিশ শো নব্বই সালের ধুকপুক, বুকফাটা
আওয়াজ, দূরন্ত বাজপাখি
চক্রাকারে উড়ে
ঠুকরে ঠুকরে খায় তার আর্ত হৃৎপিণ্ড অবেলায়।
অলৌকিক কিছু ঘটবে না। ‘ধিক তোকে, এই ধ্বনি
অন্ধকার থেকে
উথিত, সে ত্রস্ত ভীত, ক্লান্ত, মূক মুখ
হাতে ঢাকতেও পারছে না। গলগল
রক্তবৃষ্টি, বিফল গোধূলি, বিচ্ছিন্নতা মহাগ্রাস;
এক্ষুনি থামাও নারকীয় ক্রিয়াকর্ম, আলগোছে
নামাও তোমরা ওকে পীড়নের মঞ্চ থেকে, ঢেকে
দাও ওর কান্নায় উথলে-ওঠা ক্ষত
জ্যোৎস্না-চন্দ্রনের মসলিনে কতকাল
যন্ত্রণা পাঁজর খুলে নিয়ে
সাজাবে কংকালকীর্ণ উদগ্র উদ্যান? ধ্যান তার
প্রখর অঙ্কুশে বিদ্ধ, কবিতার ভ্রূণাবস্থা কাটে
কালেভদ্রে এ দারুণ জন্মের খরায়। আছড়ায়
অস্তিত্বকে শুধু ড্রাগ ত্র্যাডিক্টের মতো।
কোথাও প্রহরী নেই, তবু
সতর্ক পাহারাদার সবদিকে। সন্ধিগ্ধ, খণ্ডিত আসমান,
অবিরত লাঠি ঠোকা, চোখা, একরোখা বল্লমের অন্ধ ক্রোধ;
উনুনের পোড়া দাগ কাঁটার্ত চোখের
নিচে, আপাতত শায়িতা সে,
আহত সৌন্দর্য নিয়ে বিপন্ন, বিব্রত; স্নায়ুগুলো
ছটফটে, যেন বাইপাস সার্জারির
সুঁচোলো অপেক্ষা, ঝুঁকে-থাকা কিছু পাহাড়ি শকুন,
পক্ষীতত্ত্ববিদের বিষয়ে উদাসীন,
ছড়ায় আগ্রাসী ছায়া চঞ্চু নেড়ে নেড়ে। মুহূর্তেরা
চূর্ণ কাচ, ছেঁড়া-খোঁড়া স্বপ্ন, ভূলুণ্ঠিত
সৌন্দর্যের স্পর্ধা নিয়ে সে কি টান টান উঠে
দাঁড়াবে আবার?
(খন্ডিত গৌরব কাব্যগ্রন্থ)